বিবৃতি
আসামে সাম্প্রদায়িক নিশানায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ কর, বিহারে ডিটেনশন ক্যাম্প বন্ধ কর
detention camps

ভরা বর্ষা ও বন্যার মরশুমে, এই মহামারীর পরিস্থিতিতে, আসামের দারাং ও চর-চাপরি এলাকার শত শত পরিবারকে (প্রায় পুরোটাই পূর্ববঙ্গ উৎসের মুসলমান) আপন ভিটেমাটি থেকে নিষ্ঠুরভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিজেপি সরকার এই ধরনের ধারাবাহিক উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। “বেআইনি অভিবাসীরা দখল করে ছিল” তকমা দিয়ে সাম্প্রদায়িক ও বিদেশী-বিদ্বেষমূলক প্রচারাভিযান চালিয়ে এই উচ্ছেদ শুরু করেছে বিজেপি সরকার। জুন-আগষ্টে এরকম ২৫৯টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ২০ সেপ্টেম্বর ২০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হল দারাং জেলার ফুহুরাতলি থেকে। তাদের কুঁড়েঘরগুলি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই পরিবারগুলি সকলেই পূর্ববঙ্গ উৎসের মুসলমান পরিবার এবং বহু প্রজন্ম ধরে তাঁরা আসামে বসবাস করছেন। উচ্ছেদের মাত্র একদিন আগে তাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়। কোনও রকম পুনর্বাসনের ন্যূনতম সাহায্য তাঁদের দেওয়া হয়নি। চারটি মসজিদকেও “বেআইনি” ঘোষণা করা হয় এবং বুলডোজ করা হয়। এভাবে প্রকাশ্যেই সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য জাহির করা হয়।

২০১৯ সালে আসামের ব্রহ্ম কমিটির রিপোর্ট ও ভূমিনীতি সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত নিশানার এই উচ্ছেদ-নীতির রাস্তা তৈরি করেছে। এই কমিটি চর এলাকার জমিকে “বেআইনি অভিবাসীদের” দখলিকৃত তকমা দিয়ে চরের জমি “আসামের আদি বাসিন্দাদের” মধ্যে পুনর্বন্টনের প্রস্তাব দেয়। “আদি বাসিন্দা” কারা সে বিষয়ে অবশ্য সরকারের কোনও স্পষ্ট সংজ্ঞা নেই এবং যথেষ্ট আশঙ্কা আছে যে তা নির্দিষ্ট জাতি-উৎস ও ধর্মীয় পরিচিতির মানুষদের বাদ দিয়ে দেবে।

ইতিমধ্যে বিহারে পাটনা হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ “বেআইনি অভিবাসি” ধুয়ো তুলতে শুরু করেছে এবং বিহার সরকারকে আদেশ দিয়েছে একটি স্থায়ী ডিটেনশন ক্যাম্প বানাতে আর ডিজিটাল ও প্রিন্ট মিডিয়া ব্যবহার করে রাজ্যের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে ও “বেআইনিভাবে বসবাসকারি বিদেশীদের” বিরুদ্ধে খবর দেওয়ার কাজ করার জন্য উৎসাহিত করতে। এরকম আদেশ রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক। এই আদেশ বিহারের মানুষকে পরস্পরের প্রতি সন্দিহান ও আতঙ্কিত করে তুলবে এবং ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেবে।

তাছাড়া, পাটনা হাইকোর্টের এই রায়ের কোনও তথ্যগত ভিত্তিও নেই। বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা একজন মহিলা ভারতে থাকার ও নিরাপদ জীবনযাপন করার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই মামলার শুনানির সময় এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। নারী পাচারের শিকার হওয়া এই মহিলাকে ফেরৎ পাঠায় আদালত। এবং নারী পাচারের এই মামলাকেই ব্যবহার করে “বিদেশিরা বেআইনিভাবে ভারতে আসতে চাইছে” বলে। এমনকি বিহারের এনডিএ সরকারও গত জানুয়ারি মাসে আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে যে রাজ্যে সাকুল্যে ৩৮ জন অনথিভুক্ত “বিদেশী” রয়েছে যাদের অধিকাংশই নেপাল থেকে আসা এবং তারা জেলে বা রাজ্যের রিমান্ড হোমে আছে। এতদসত্ত্বেও সীমান্তবর্তী কিষানগঞ্জ জেলার জেলা কর্তৃপক্ষ বিহার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের একটি চিঠির উল্লেখ করে বৈদ্যুতিন ও ছাপা মাধ্যমে তাদের তীব্র “জন সচেতনতা” অভিযান ও “বেআইনি অভিবাসিদের ফেরৎ পাঠানোর কাজে উৎসাহী জনমুখী ব্যক্তি ও এনজিওদের সংযুক্ত করা”-কে বৈধতা দিতে চাইছে। আসলে সীমাঞ্চলের মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের লেলিয়ে দেওয়ার কাজে বহুবিধ আরএসএস গ্যাং-কে ছাড়পত্র দিতেই এরকম পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।

ডিটেনশন ক্যাম্পও সাম্প্রদায়িক নিশানায় উচ্ছেদ করতে বিজেপির ফ্যাসিস্ট পরিকল্পনার অঙ্গ যা সারা ভারতেই মুসলমানদের নাগরিকত্ব, জমি ও জীবিকার অধিকার কেড়ে নিয়ে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের অভ্যন্তরে মরাবাঁচার ভবিতব্যে তাঁদের নিক্ষেপ করতে চায়। ভারতে গণতন্ত্র ও সমতা সুরক্ষিত করতে নিবেদিতপ্রাণ সমস্ত ভারতীয়কে অবশ্যই সর্বশক্তি দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।

(সিপিআই (এমএল) লিবারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি,

২১ সেপ্টেম্বর ২০২১)

খণ্ড-28
সংখ্যা-34