৫ সেপ্টেম্বর মুজফ্ফরনগরে কৃষক-কৃষি শ্রমিক মহাপঞ্চায়েত থেকে দৃঢ়ভাবে ঘোষিত হল দেশে আর কোনও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটতে দেওয়া হবে না। হিন্দু-মুসলমান ঐক্যকে আরও দৃঢ় করার শ্লোগানে মুখরিত হল সভা। বিজেপি-আরএসএসের সাম্প্রদায়িক, জাতপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে কৃষক-কৃষি শ্রমিকদের এজেন্ডাই জয়ী হবে — এটাই ছিল মহাপঞ্চায়েতের সমস্ত বক্তাদের মূল সুর। মুজফ্ফরনগরের মহাপঞ্চায়েতে উদ্বোধন হল সংযুক্ত কিসান মোর্চার মিশন উত্তরপ্রদেশ-উত্তরাখন্ড — যার লক্ষ্য হল এই দুই রাজ্যে তিন কৃষি কালা কানুনের প্রত্যাহার এবং সি২+৫০ শতাংশ সূত্রে কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের জন্য সংগ্রাম আর আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করা। বক্তারা বললেন উত্তরপ্রদেশ সরকার ব্রিটিশদের ‘ভাগ কর শাসন কর’ ও জাতপাত-সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভিত্তিতে শাসন জারি করেছে। যোগী সরকার কৃষকদের জন্য ঘোষিত প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। ২০ শতাংশ শস্য প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেনেনি। ৮৬ লক্ষ কৃষকের কৃষিঋণ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মকুব করেনি, এমনকি ৪৫ লক্ষ কৃষকের কৃষিঋণও মকুব করেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের সিএসপি এজেন্সি (কৃষকদের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার এজেন্সি) ২০১৭ সালে অবহিত হয়েছিলেন আখের চাষে প্রতি কুইন্ট্যালে ৩৮৩ টাকা খরচ হয় কিন্তু কৃষক পায় কুইন্ট্যাল প্রতি ৩২৫ টাকা এবং সুগারমিলের কাছে কৃষকদের বকেয়া পাওনা হল ৮৭০০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ সালে উত্তর প্রদেশের ৭২ লক্ষ কৃষক শস্য বীমার বকেয়া পেয়েছেন, কিন্তু ২০১৯-২০ সালে মাত্র ৪৭ লক্ষ কৃষক শস্য বীমার বকেয়া পান যার ফলে শস্য বীমা কোম্পানির লাভ হয় ২,৫০৮ কোটি টাকা।
মহাপঞ্চায়েতের দাবি উত্তর প্রদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৪৫০ টাকা প্রতি কুইন্ট্যাল আখের দাম দিতে হবে নতুবা সংযুক্ত কিসান মোর্চার পরবর্তী সভায় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
৪ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকেই মুজফ্ফর নগরের সভাস্থলে দলে দলে কৃষকেরা আসতে থাকেন। পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে কৃষকরা সারা রাত ধরে আসতে থাকেন। সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং তার অন্তর্ভুক্ত সংগঠনগুলির প্রায় সমস্ত নেতারাও সভাস্থলে পৌঁছে যান। এ আই কে এম অন্তর্ভুক্ত পাঞ্জাব কিসান ইউনিয়ন গ্রুপ, এআইকেএম- এর জাতীয় কার্যনির্বাহক সদস্য গোরা সিং-এর নেতৃত্বে সভাস্থলে আসেন।
৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টার মধ্যেই সভায় ভীড় উপচে পড়ে। বাইরের রাস্তাতেও হাজারে হাজারে লোক দেখা যায়। অন্যান্য রাজ্য থেকে তখনও হাজার হাজার লোক আসার খবর পাওয়া যায়।
জায়গার অভাবে যত লোক সভার ভেতরে ছিল প্রায় তত লোকই সভাস্থলের বাইরে ছিল। প্রধান গেটের বাইরে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে কলা, লাড্ডু, পুরি, পরোটা, চানা ইত্যাদি খাবার বিতরণ করা হয়। ব্যবস্থাপনায় ছিলেন স্থানীয় গ্রামের কৃষকরা। শিখ সংগঠনের লঙ্গরখানাও ছিল প্রথম দিন থেকে। মুজফ্ফরনগরের দোকানপাট বন্ধ ছিল এবং স্থানীয় দোকানদাররা ও বসবাসীরা তাদের যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন কৃষকদের। যুবকরা তাদের বাড়ির সামনে পানীয় জল যোগান দিয়েছেন। সভাস্থলে শৌচাগার ও পানীয় জল এবং মেডিক্যাল ক্যাম্প ও ভ্রাম্যমাণ ডিসপেনসারির ব্যবস্থা ছিল। বেলা দেড়টা পর্যন্ত কৃষকরা সভায় যোগ দিয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন ধর্ম, জাতপাত, অঞ্চল ও ভাষাভাষীর বেড়াজাল ছিন্ন করে এক পরিষ্কার বার্তা দিলেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে। সমাজের সর্বস্তর থেকে কৃষক-কৃষিশ্রমিকদের এই মহাপঞ্চায়েত অভূতপূর্ব সমর্থন পেয়েছে। ভেতরে বাইরে সর্বত্র মাইকে নেতাদের ভাষণ শোনা গেছে।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, এবং আরো রাজ্য থেকে অংশগ্রহণকারীরা এসেছিলেন। লক্ষ্যণীয় ছিল যুবকদের অংশগ্রহণ। সভায় শ্লোগান ছিল হিন্দু-মুসলিম-শিখ ঐক্য এবং কৃষক-কৃষিশ্রমিক ঐক্যের।