কোভিড১৯’র তৃতীয় ঢেউ আগতপ্রায়। আশঙ্কার কথা - এই পর্বে শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে। জানিয়েছেন ‘এইমস’এর অধিকর্তা রণদীপ গুলেরিয়া।
দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা সোয়া দু’কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার। কোভিড-১৯ ভারতে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হয়ে উঠেছে। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই বিপর্যয়কে বিশেষজ্ঞরা ‘মানুষের তৈরি’ বলছেন। দেশ জুড়ে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভয়ঙ্করভাবে বিপর্যস্ত।
এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিশ্রুত মেডিক্যাল জার্নাল ‘ল্যান্সেট’ তার সাম্প্রতিক সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে। ‘ল্যান্সেট’ বলেছে, “ভয়ঙ্কর এই করোনা আবহেও সংক্রমণ রোখার থেকে সমালোচনার টুইট মুছতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে মোদী সরকার”। বলেছে, “দ্বিতীয় ঝড়ের আভাস সত্ত্বেও সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। মার্চের গোড়ায় যখন দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে, ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তখনও দাবি করতে থাকেন ভারত করোনা-জয়ের পথে। অথচ সেই সময় আইসিএমআর সমীক্ষায় ধরা পড়েছে দেশের মাত্র ২১% মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে”। জানুয়ারির শেষে দাভোস বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে মোদী ভারতের কোভিড-সাফল্যের সাতকাহন শুনিয়ে আসেন। ‘ল্যান্সেট’এর প্রতিবেদনে ভারতের কোভিড টাস্ক ফোর্সের বহুমাস বৈঠক না করা, কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্যাকসিন নীতি ও টিকাকরণের শ্লথগতিরও সমালোচনা করা হয়। বহুবার সতর্ক করা সত্ত্বেও সরকার ধর্মীয় উৎসবপালন ও রাজনৈতিক সমাবেশের মতো অতিসংক্রামক অনুষ্ঠানগুলিকে ছাড়পত্র দেওয়ায় সেগুলি সুপারস্প্রেডারের কাজ করেছে। আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে আগামী আগস্টের মধ্যে দেশের কোভিড-মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লক্ষে পৌঁছাবে আর সে ক্ষেত্রেও ‘জাতীয় বিপর্যয়ের’ জন্য দায়ী থাকবে মোদী সরকার। এই সরকার সমালোচকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে এবং কোন পরামর্শ শোনেনি। এই মনোভাবকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
অক্সিজেনের অভাবে দেশজুড়ে গণচিতা জ্বলেছে। অথচ গত নভেম্বরেই সংসদীয় কমিটি অক্সিজেন সরবরাহ ও হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করেছিল। সেই অক্সিজেনের জন্য রাজ্যগুলিকে আদালতে পর্যন্ত দৌড়াতে হয়েছে। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের উপর আর ভরসা রাখতে না পেরে অক্সিজেনের বিলিবণ্টন ও বরাদ্দ ঠিক করার জন্য ১২ বিশেষজ্ঞের একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম ঢেউয়ের সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ ৯৩,০০০এ পৌঁছে ক্রমশ কমতে কমতে এবছর মাঝ ফেব্রুয়ারীতে ১১,০০০এ পৌঁছায়। মার্চের গোড়ায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন ‘করোনা-বিজয়ে’ হর্ষোৎফুল্ল হয়ে নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “মোদীজীর নেতৃত্ব বিশ্বে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে।” এরপর বহু-চর্চিত টিকা-কূটনীতির রূপায়ণে একুশের জানুয়ারি থেকে বিদেশে টিকা পাঠানো শুরু হয়।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগাম সতর্কতাকে অগ্রাহ্য করেই ২৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ৮২৪টি আসনে ভোটদাতার সংখ্যা ১৮৬০ লক্ষ। শুধু তাই-ই নয়, পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি আসনের জন্য আট দফার নির্ঘন্ট ঘোষিত হল রাজ্য সরকারের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই। ফেব্রুয়ারী থেকেই দিল্লীর বিজেপি নেতারা বঙ্গে আসা শুরু করেন। পূর্ণোদ্যমে প্রচার শুরু হয়। মার্চ-এপ্রিল জুড়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিন রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য শীর্ষ ও রাজ্য নেতারা অসংখ্য সভা-সমাবেশ রোড-শো করেন। অন্যান্য দলেরও সভা-সমাবেশ মিছিল চলে পাল্লা দিয়ে কোভিড-১৯ বিধিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। নির্বাচন কমিশন তখন নিদ্রিত ছিল। এই বেলাগাম জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোন ন্যূনতম চেষ্টাও দেখা যায়নি, বিশেষজ্ঞরা বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও। এর অনিবার্য পরিণতিতে সংক্রমণ ছড়ালো আগুনের মতো হু হু করে। রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যাটা একটু দেখে নেওয়া যাক।
১ মার্চ ২০২১ - দৈনিক সংক্রমণ ১৯৮, দৈনিক মৃত্যু ০ (কোভিড পর্বে এই প্রথম দৈনিক মৃত্যু শূন্যে পৌঁছেছিল);
৫ এপ্রিল - দৈনিক সংক্রমণ ১৯৫৭, দৈনিক মৃত্যু ৪;
১৮ এপ্রিল - দৈনিক সংক্রমণ ৮৪১৯, দৈনিক মৃত্যু ২৮;
২৬ এপ্রিল - দৈনিক সংক্রমণ ১৫৯৯২, দৈনিক মৃত্যু ৬৮;
৫ মে - দৈনিক সংক্রমণ ১৭৬৩৯, দৈনিক মৃত্যু ১০৭;
১১ মে - দৈনিক সংক্রমণ ২০১৩৬, দৈনিক মৃত্যু ১৩২
নির্বাচন পর্যায়েই চারজন প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত অব্যবস্থায় ডিসিআরসি’তে গাদাগাদি ভিড়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এক মহিলা ভোটকর্মী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ওখান থেকে অনেকেই সংক্রমিত হয়েছেন। সব ভোটকেন্দ্রে কোভিড বিধি ঠিকমতো মানা হয়নি।
যে রাজ্যগুলির নির্বাচন ছিল, সেখানকার করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার প্রেক্ষিতে এক মামলায় মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এক নজিরবিহীন পর্যবেক্ষণে জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনই দায়ী এবং কমিশনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা উচিত। কলকাতা হাইকোর্টও এক জনস্বার্থ মামলায় একদিকে যেমন রাজনৈতিক দলগুলোকে তীব্র কটাক্ষে সংক্রমণ বহুগুণ বাড়িয়ে তোলা, মিছিল-মিটিং বন্ধ করার নির্দেশ দেয়, তেমনই নির্বাচন কমিশনকে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হয়েও এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু সার্কুলার জারি করে দায় এড়ানোর জন্য তিরস্কার করে।
মোদী ১৭ এপ্রিলের নির্বাচনী জনসমাবেশ দেখে আনন্দে আপ্লুত হয়েছিলেন। দেশে সেদিন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ৩৪ হাজার মানুষ, মারা গেছেন ১,৩৪১ জন! আর পরের রবিবার ২৫ এপ্রিল ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে গাঢ় গলায় বললেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ গোটা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, অনেকে স্বজন হারিয়েছেন; এখন দেশবাসীর ধৈর্য ধরার ও কষ্ট সহ্য করার পরীক্ষা দেওয়ার পালা! এক সপ্তাহ আগেও তাঁর এই বোধোদয় হয়নি!
দিল্লীতে গতবছর ‘তবলিগ-ই-জামাত’এর সদস্যদের হেনস্থা হয়রানি অপমানের কথা সবার মনে আছে। চল্লিশটি দেশ থেকে দু’হাজার সদস্য এসেছিলেন একশো বছরের পুরোনো মসজিদ মারকাজ নিজামুদ্দিনে ইসলামী রীতিনীতি সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংক্রান্ত পঞ্চাশ বছরের পুরোনো এক সমাবেশে যোগ দিতে। বিভিন্ন রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে কোভিড বিধি লঙ্ঘন, পর্যটন ভিসায় এসে ধর্ম প্রচার, বিদেশি নাগরিক সহ বিভিন্ন আইনে এফআইআর করা হয়। বিজেপি দেশজুড়ে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। অবশেষে বম্বে হাইকোর্ট মামলার রায়ে বলে, করোনা আবহে তাদের ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে। এ’বছর হরিদ্বারে কুম্ভমেলাকে উত্তরাখণ্ডের সরকার ছাড়পত্র দিয়েছে, কোভিড বিধি মানার শর্তে। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া মেলায় ১২ ও ১৪ এপ্রিল শাহীস্নান করেছেন ৪৮ লক্ষ ৫১ হাজার মানুষ। মোট স্নান করেছেন প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ। কোভিড বিধি শিকেয় তুলে সে স্নানের দৃশ্য সবাই ছবিতে দেখেছেন। দৈনিক সংক্রমণ যখন লক্ষাধিক, দৈনিক মৃত্যু যখন হাজার ছুঁই ছুঁই, তখন এই আয়োজনে কীভাবে অনুমতি দেওয়া হল? এই পুণ্যার্থীরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তো বটেই, বাইরে থেকেও আসেন। শাহীস্নানের দিন (১২ এপ্রিল) দেশে দৈনিক সংক্রমণ ছিল ১ লক্ষ ৬৮ হাজার, দৈনিক মৃত্যু ৯০৪! ঐদিন দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বারো লক্ষ ছাড়িয়েছিল। ফল যা হবার হয়েছে। প্রথম ৫ দিনেই আক্রান্ত ১,৭০১ জন। কুম্ভমেলা থেকে মোট কতজন মৃত বা সংক্রমিত, জানা যায়নি। তবে মধ্যপ্রদেশ থেকে আগত ৬১ জনের একটি দলে ৬০ জনই স্নান থেকে ফিরে যখন ‘কোভিড পজিটিভ’ হন, তখন বোঝা যায় কী ভয়াবহ আকারে সংক্রমণ নিয়ে ফিরে গেছেন পুণ্যার্থীরা বিভিন্ন রাজ্যে!
মার্চের মাঝখানে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড ১ লক্ষ ৩০ হাজার দর্শককে দু’টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখার সুযোগ করে দেয় গুজরাটের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। ক্রীড়ামোদী দর্শকদের ক’জন মাস্ক পরেছিলেন, দূরত্ববিধি মেনেছিলেন?
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ভারতে কোভিড-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ঔদাসীন্য ও অনুপযুক্ত পদক্ষেপকে দায়ী করেছে। এই সংস্থা তীব্র ক্ষোভে জানিয়েছে, সরকার বিশেষজ্ঞদের সতর্কীকরণ ও পরামর্শকে কার্যত ‘ডাস্টবিনে’ ফেলে দিয়েছে।
‘দ্য হিন্দু’ রয়টার সূত্রে সম্প্রতি একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় সামনে এনেছে। গতবছর ডিসেম্বরের শেষে মূলত করোনা ভাইরাসের জনস্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক জিনোমিক প্রজাতিগুলি (ভ্যারিয়েন্ট) চিহ্নিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ইন্ডিয়ান সার্স কোভ-২ জেনেটিক্স কনসর্টিয়াম নামে একটি উপদেষ্টা ফোরাম তৈরি করে সংক্ষেপে যা ‘ইনসাকগ’ (INSACOG) নামে পরিচিত। জাতীয় স্তরের ১০টি গবেষণা কেন্দ্র নিয়ে এই ফোরাম কাজ শুরু করে। এই সংস্থার গবেষকরা ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বি-১.৬১৭ নামে একটি প্রজাতিকে চিহ্নিত করেন যা ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট বা ভারতীয় প্রজাতি হিসেবে পরিচিত। এটি অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায় এবং ভ্যাকসিনের প্রতিরোধকে কমিয়ে দেয়। ‘ইনসাকগ’ ১০ মার্চের আগে এই গবেষণালব্ধ প্রজাতিটি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের গোচরে আনে ও সতর্ক করে। এরপর সেটিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক প্রজাতি’ বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কাছেও পাঠায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রক সেই বিবৃতি দু’সপ্তাহ পর প্রকাশ্যে আনে কিন্তু সেখানে ‘হাই কনসার্ন’ কথাটির উল্লেখ ছিল না।
বিজ্ঞানীরা জানান ভারতবর্ষে এখন এই প্রজাতিটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং এরসঙ্গে রয়েছে ব্রিটিশ প্রজাতিও। দেশের আটটি রাজ্যে এর উদ্বেগজনক উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে। তারা জানিয়েছিলেন একে রোখার জন্য কঠোর লকডাউনের মতো নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা এপ্রিলের প্রথমেই নেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। সমস্ত বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আধিকারিক, ক্যাবিনেট সেক্রেটারি রাজীব গাউবাকে পাঠানো হয়। উনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তিনি কি তা জানিয়েছিলেন? রয়টার তা জানে না। কারণ তাদের অনুরোধের উত্তর আসেনি। এখন অনেক রাজ্যকেই লক ডাউনের পথে হাঁটতে হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের সতর্কবাণী শুনে এপ্রিলের শুরুতে মোদী সরকার কোন কঠোর নিষেধাজ্ঞা তো জারি করেইনি, উল্টে মেলা, খেলা, নির্বাচনে দেশকে ভাসিয়ে করোনা-সুনামিকে আবাহন করে এনেছে। অতি সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন সংবাদ সংস্থা এএফপি’কে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এই বি-১.৬১৭ ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ ভারতীয় প্রজাতিটি ক্রমশ নিজের চরিত্র পাল্টে সংক্রমণ ক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে এবং ব্রিটেন ও আমেরিকায় এটি ‘উদ্বেগজনক’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাঁর আক্ষেপ, একে রোখার জন্য ভারতে টিকাকরণের গতিও অত্যন্ত শ্লথ, মাত্র ২% মানুষ এপর্যন্ত টিকা পেয়েছেন (উল্লেখ্য মাত্র ৯% টিকার একটি ডোজ পেয়েছেন)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও প্রজাতিটিকে ‘উদ্বেগজনক’ ঘোষণা করেছে। সৌম্যাও এই বিপর্যয়ের জন্য মোদী সরকারকে দায়ী করেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশে ৬ কোটির বেশি টিকা পাঠিয়েছে। কিন্তু দেশে এখন টিকার হাহাকার, গত একমাসে টিকাকরণ দৈনিক ৪০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষে নেমে এসেছে। টিকার দাম ও বন্টনের চূড়ান্ত বৈষম্যসহ চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে মোদী সরকার হাত গুটিয়ে দায় ও দায়িত্ব চাপিয়েছে রাজ্যগুলির উপর। এমনকি, প্রবল ঔদ্ধত্যে এব্যাপারে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। অথচ দেশের সব বয়সী নাগরিকদের ৭০% টিকা না পেলে করোনাকে রোখা অসম্ভব। বিশেষ করে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ প্রজাতিটি যখন এত ভয়ঙ্কর আগ্রাসী।
১৩৮ কোটি দেশবাসীর জীবন নিয়ে এত ঔদাসীন্য, এত তাচ্ছিল্যের ঔদ্ধত্য সত্যিই স্তম্ভিত করে দেয়। এই অন্যায়কে দেশবাসী ক্ষমা করবে না!
- জয়ন্তী দাশগুপ্ত