নারীর অসম্মান ও যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’এর বার্তা
‘Zero Tolerance’ against disrespect

সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ কড়া বার্তা দিয়েছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু দেশজুড়ে অব্যাহত এই মানুষ-বিরোধী শক্তির উল্লাস, সমাজকর্মী থেকে লেখিকা সবার উপর অব্যাহত আক্রমণ। বত্রিশ বছর বয়সী নাতাশা নরওয়াল। দেশের নাগরিকদের ভোটে জিতে আসা বিজেপি সরকারের দেশেরই নাগরিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ মেনে নেননি, মেনে নেননি নাতাশার মত আরও বহু তরুণ তরুণী, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবী মানুষ। প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে দেশ। নাতাশাকে এনআরসি, সিএএ বিরোধী লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের জন্য ও দেশের নাগরিকদের ‘বেনাগরিক’ করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ‘অপরাধে’ ভুয়ো মামলায় ছ’মাস ধরে কয়েদ করে রেখেছে মোদী সরকার। এত নির্যাতন, এত অত্যাচারের পরও তাকে ভয় পাওয়াতে পারেনি বিজেপি সরকার। এই চরম ফ্যাসিস্ট শক্তির মুখে দাঁড়িয়ে সন্তানের লাশ শনাক্ত করতে ভয় পাননা সন্তানগর্বে গর্বিত পিতারাও, যে বার্তা খোদ নবারুণ দিয়েছিলেন। নাতাশার পিতা মহাবীর নারওয়াল বরং দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন যেখানেই মানুষ কষ্ট পাবে, বিপদে পড়বে আমার মেয়ে নাতাশাকে পাবেন। এই সরকার মহিলাদের যৌন বস্তু, উপভোগ বা সেবার উপকরণ ছাড়া কিস্যু ভাবে না! ক্রমাগত নির্যাতন করা হচ্ছে নাতাশাকে। সংগ্রামী বাবার শেষ মুহূর্তটাও দেখার ছাড় মেলেনি। কিন্তু তার বাবার এই বার্তা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে বার্তা দিয়েছে ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ মনোভাবাপন্ন বাবা মায়েদের, উদ্বুদ্ধ করেছে হাজার হাজার নাতাশাকে। কারণ,

কবিতা এখনই লেখার সময়
ইস্তেহারে দেয়ালে স্টেনসিলে
নিজের রক্ত অশ্রু হাড় দিয়ে কোলাজ পদ্ধতিতে
এখনই কবিতা লেখা যায়
তীব্রতম যন্ত্রণায় ছিন্নভিন্ন মুখে
সন্ত্রাসের মুখোমুখি—ভ্যানের হেডলাইটের ঝলসানো আলোয়
স্থির দৃষ্টি রেখে
এখনই কবিতা ছুঁড়ে দেওয়া যায়
’৩৮ ও আরো যা যা আছে হত্যাকারীর কাছে
সব অস্বীকার করে এখনই কবিতা পড়া যায়।

শুধু নাতাশা নয়, দেশজুড়ে মহিলাদের উপর নেমে আসা নির্যাতন ও হিংসার বিরুদ্ধে সবসময়ই ‘জিরো টলারেন্স’এর বার্তা দেয় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এবং আইপোয়া, আইসা, আরওয়াইএ-র মতো গণসংগঠনগুলি। দেশের সিঙ্ঘু বর্ডারে অবস্থানরত কৃষকরাও সেই বার্তা দিলেন সম্প্রতি উঠে আসা একটি ধর্ষণের অভিযোগের প্রতি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে টিকরি বর্ডারে কৃষক আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়া এক তরুণীর কোভিড সংক্রান্ত অসুস্থতার কারণে মৃত্যুর পর তার বাবা উক্ত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংযুক্ত কিষান মোর্চার তরফে বিবৃতি দিয়ে কড়া বার্তা দেওয়া হয় অভিযুক্তদের এবং যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে। হঠিয়ে দেওয়া হয় অভিযুক্ত ‘কিসান সোশ্যাল আর্মি’র তাঁবু ও ব্যানার। আইনি দিক থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ে তরুণীর পরিবারের পাশে দাঁড়ায় দেশের কৃষকরা। প্রবল প্রতিরোধের মুখে পদক্ষেপ নেয় কমিশন, হরিয়ানা পুলিশ। অনেক সময়ই সংশোধনবাদী জায়গা থেকে প্রশ্ন ওঠে যে মহিলা অধিকারের আন্দোলনের সঙ্গে খেটে খাওয়া মানুষের আন্দোলনের সম্পর্ককি? উত্তরটা এখানেই। পিতৃতান্ত্রিকতার গোড়া থেকে সমূলে উৎপাটন না করলে সমাজব্যবস্থা তথা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই কখনই সম্ভব নয়। আজ দেশজুড়ে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই নাতাশার মতো মেয়েরাই।

- সৌমি জানা 

খণ্ড-28
সংখ্যা-18