প্যালেস্তিনীয় জনগণের প্রতিরোধের প্রতি সংহতি
with the resistance of the Palestinian

ইজরায়েলের দখলদারির পরিকল্পনা এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে প্যালেস্তিনীয় জনগণের প্রতিরোধের প্রতি সংহতি

(নয়া দিল্লী থেকে ১১ মে এই বিবৃতিটি দেন সিপিআই(এমএল)-এর পলিটব্যুরো সদস্য কবিতা কৃষ্ণাণ)

ইজরায়েল ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজাতে প্যালিস্তিনীয়দের যে সমস্ত অঞ্চল দখল করে আছে, সেই সমস্ত অঞ্চলে প্যালেস্তিনীয় জনগণকে ইজরায়েলি বর্ণবৈষম্যবাদী জমানার নতুন করে চালানো পৈশাচিক হামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গত ১০ মের রাতে ইজরায়েলি সেনারা গাজার ওপর একের পর এক বিমান হানা চালিয়ে ২৬ জন প্যালেস্তিনীয়কে হত্যা করে, যার মধ্যে ৯ জন শিশুও ছিল। মানবতার বিরুদ্ধে ইজরায়েলের এই হামলার সর্বকনিষ্ঠ শিকারটির বয়স ছিল ১০ বছর। ইজরায়েল বেশ কিছুকাল ধরে গাজার ওপর স্থল-আকাশ-সমুদ্র ঘিরে অবরোধ চালাচ্ছে এবং লাগাতার বোমা ফেলছে যার ফলে গাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক এই আগ্ৰাসন গাজাবাসীর মানবিক সঙ্কটে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।

পর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজার ওপর পূর্ণ শক্তি নিয়ে আক্রমণের হুমকি দিয়েছেন, আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গাঞ্জ সহস্রাধিক সংরক্ষিত সেনাদের সমাবেশিত করেছেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং তিনি এক নির্বাচনী সঙ্কটের মুখেও পড়েছেন। দেশের দক্ষিণপন্থী অংশগুলোকে নিজের দিকে টানার লক্ষ্যেই নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে প্যালেস্তিনীয়দের বিরুদ্ধে হিংস্র আক্রমণ চালিয়ে আসছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি ইতিমধ্যেই ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ৩০ শতাংশ, বিশেষভাবে জর্ডন উপত্যকার এলাকা দখলের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। পরিকল্পিত এই দখলদারি চালানো হবে মূলত দখলীকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ‘সি’ অঞ্চলে, যেখানে অধিকাংশ বেআইনি ইজরায়েলি বসতিগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।

পূর্ব জেরুজালেমে ইজরায়েল যে দখলদারী চালিয়েছে, সেখানের এক অঞ্চল সেখ জারাকে নিজেদের অধিকারে নেওয়ার ইজরায়েলি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্যালেস্তিনীয়রা প্রতিরোধ চালিয়ে আসছিলেন। এই পৃষ্ঠভূমিতেই ইজরায়েলের বিমান হানা শুরু হয়। সেখ জারা অঞ্চলে ৩০০-রও বেশি প্যালেস্তিনীয় পরিবার বাস করে। অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইজরায়েলি বসতিগুলির বাসিন্দারা এদের ওপর লাগাতার সহিংস হামলা চালায়, এবং ইজরায়েলি সেনারা তাদের বাসস্থান থেকে উৎখাত করে এবং তাদের সম্পদের ওপর ধ্বংসকাণ্ডও চালায়।

গত ৭ মে আল আক্সা মসজিদে যে ভক্তরা সমবেত হয়েছিলেন, তাঁরা সেখ জারাতে উৎখাতের হুমকির মুখে পড়া পরিবাবরগুলোর প্রতি সংহতি জানান। ইজরায়েলি সেনারা মসজিদের ভিতর ঢুকে মসজিদ চত্বরে থাকা উপাসকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মম আক্রমণ চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে এবং বন্দুক থেকে রবারের বুলেট চালায়।

এর পর থেকে মসজিদের ওপর ইজরায়েলি সেনাদের হামলা বেড়ে চলে, অবৈধভাবে এলাকা আত্মসাৎ করা এবং ইজরায়েলি সেনাদের দখলদারির অবসানের দাবিতে প্যালেস্তিনীয়দের প্রতিবাদ আন্দোলনের ওপরও নামিয়ে আনা হয় নির্মম দমন। ইজরায়েলি সেনারা ইজরায়েলি বসতিগুলির সশস্ত্র অধিবাসীদের প্যালেস্তিনীয়দের ওপর আক্রমণ চালানোর অবাধ অধিকার দিয়েছে। ইজরায়েলি সেনাদের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, গাজা ও জেরুজালেমে ৭০০-রও বেশি প্যালেস্তিনীয় আহত হয়েছেন।

ইজরায়েলের দখলদারির এই পরিকল্পনার পিছনে স্পষ্টতই রয়েছে জাতির বিশুদ্ধকরণ এবং নিজেদের বাসভূমি থেকেই প্যালেস্তিনীয়দের বিতাড়নের অভিপ্রায়।

***

Palestinian people


দক্ষিণ আফ্রিকায় যে বর্ণবৈষম্যবাদ বিরোধী আন্দোলন চলেছিল তার প্রতি সমর্থনের সমাবেশ ঘটাতে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম বাণিজ্য সম্পর্ক ছেদ করেছিল যে দেশগুলো, ভারত ছিল তার অন্যতম, এবং পরবর্তীতে ঐ দেশটার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞাও ভারত জারি করে। আজ ইজরায়েলি বর্ণবৈষম্যবাদী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার ইতিহাসের বিকারই ঘটাচ্ছেন। মোদী সরকার ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারিত করে চলেছে, তার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র এবং কৌশল আমদানি করছে যেগুলো ব্যবহার করা হবে কাশ্মীরী জনগণের বিরুদ্ধে এবং ভারতে চলা গণতান্ত্রিক ও জনগণের আন্দোলনের দমনে।

বর্তমান সময়ের দাবি হল, গাজার ওপর ইজরায়েলের পাশবিক দখলদারির অবসান ঘটাতে হবে এবং প্যালেস্তিনীয়দের ওপর চালানো যথেচ্ছ অপরাধেরও সমাপ্তি ঘটাতে হবে। এর জন্য ইজরায়েলি বর্ণবৈষম্যবাদী জমানার বিরুদ্ধে ভারত এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রকে সামরিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে হবে।

প্যালেস্তিনীয় জনগণ যখন ইজরায়েলি বর্বরতা, বর্ণবৈষম্যবাদ এবং সামরিক দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন তখন প্যালেস্তিনীয় জনগণের প্রতি এবং তাঁদের মুক্তি সংগ্ৰামের প্রতি পরিপূর্ণ সংহতি পুনরায় জ্ঞাপন করছে। ইজরায়েলকে বয়কট করা, তার ক্ষমতাকে খর্ব করা এবং তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে আহ্বান বিশ্বের কাছে প্যালেস্তিনীয়রা জানিয়েছেন, তাকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য সমর্থনও আমরা পুনরায় ব্যক্ত করছি।

খণ্ড-28
সংখ্যা-18