পশ্চিমবঙ্গের নব নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোভিড মোকাবিলায় জরুরী আর্থিক ও স্বাস্থ্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবি করে গত ৭ মে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিটি লেখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার সম্পাদক পার্থ ঘোষ। ঐ চিঠিতে বলা হয় — তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হওয়ায় প্রথমেই আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আজ ঠিক এই সময়ে আমাদের রাজ্য অতিমারীর প্রবল সুনামিতে ক্ষতবিক্ষত। শুধু আমাদের রাজ্যই নয়, কেন্দ্রের দায়িত্বজ্ঞানহীন মোদী সরকারের অবিমৃষ্যকারিতায় আজ সারা দেশ ভয়াবহ সংকটের মুখে। মোদী সরকারের আজ্ঞাবহ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কোভিডের এই দ্বিতীয় ঢেউর মধ্যে যে ভাবে আট দফা নির্বাচনী নির্ঘন্টে জেদ ধরে বসে থাকলো, যেভাবে মোদী সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বাংলা দখলের জন্য সমস্ত স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে বিরাট বিরাট জনসভা করল, তা কোভিড সংক্রমণকে নিয়ে গেছে বিপজ্জনক পর্যায়ে। এখনও ভারতের সাধারণ মানুষ প্রথম পর্বের লকডাউনের ক্ষয়ক্ষতি সামলে উঠতে পারেনি। দু’দিন আগে আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গবেষণা পত্র এই তথ্য দিল যে প্রথম লকডাউনের পর ২৩ কোটি ভারতীয় নতুন করে দারিদ্র সীমার নীচে নিমজ্জিত হয়েছেন।
অতিমারী একই সাথে স্বাস্থ্য সংকটের পাশাপাশি নিয়ে এসেছে তীব্র আর্থিক সংকট। ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রায় আটটি চটকল বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার তীব্র আর্থিক সংকটের মুখে দিন কাটাচ্ছেন। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকার দরুন বিপুল সংখ্যক অসংগঠিত শ্রমজীবী মানুষ, যেমন পরিচারিকা, নির্মাণ শ্রমিক, হকার ইত্যাদি মানুষ বিরাট আর্থিক দুর্গতির মধ্যে পড়বেন। চটকলে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ চালানোর যে নির্দেশ আপনার সরকার দিয়েছে, তাতে মজুরির উপর প্রভাব ফেলবে, যা শেষ বিচারে অন্যান্য বিধিবদ্ধ পাওনাকেও প্রভাবিত করবে। মজুরি যাতে সংকুচিত না হয়, তার জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়ার আবেদন রাখছি। কোভিডকে নিয়ন্ত্রিত করতে আপনার সরকারের কাছে নিম্নোক্ত দাবিগুলো পেশ করছি —
১) বিনামূল্যে সমস্ত পরিবারকে রেশন দিতে হবে। শুধু চাল-গম নয়, অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী (তেল, নুন, চিনি, সাবান, স্যানিটাইজার, মাস্ক) বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে।
২) প্রতিটি দারিদ্র পরিবারকে চরম দারিদ্রের হাত থেকে বাঁচাতে মাসিক ৭,৫০০ টাকা আর্থিক অনুদান দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে ৭৫ঃ২৫ এই অনুপাতে আর্থিক দায়িত্ব নিতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দিল্লি সরকার নথিভুক্ত প্রতিটি নির্মাণ শ্রমিককে মাসিক ৫,০০০ টাকা আর্থিক অনুদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই পর্যায়ে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে/সংস্থায় কোনো কর্মীর যেন চাকরিতে ছেদ বা মজুরি সংকোচন না হয়, সেই মর্মে রাজ্য সরকারকে নির্দেশিকা জারি করতে হবে।
৩) লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় বাজারে খাদ্যদ্রব্য জিনিসপত্র/ওষুধ সহ চিকিৎসা সরঞ্জামের জোগানের ঘাটতি যাতে না হয়, তার উপর রাজ্য সরকারকে নজরদারি রাখতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি রোধ, কালোবাজারি-মজুতদারীকে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
৪) বিনামূল্যে সর্বজনীন টিকাকরণ, শ্রমিকদের কর্মস্থলে আর অন্যান্যদের নিকটস্থ জায়গায় এই কর্মসূচী নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই তা শেষ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক অদূরে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের আগাম সতর্কতা দিয়ে রেখেছে। প্রয়োজনে বিত্তশালী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে করোনা ট্যাক্স আরোপ করতে হবে।