দিল্লীর কৃষক আন্দোলন বাংলা নববর্ষের দিন ১৪০ তম দিন অতিক্রম করল।
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কিছু শস্যহানি হওয়া সত্ত্বেও কৃষক আন্দোলন শক্তিশালীভাবে চলছে। বিজেপি ও তার সহযোগী নেতাদের সামাজিক বয়কট জারি আছে।
করোনা লকডাউনের সময় ভারত সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে তিনটি কৃষি আইন পাশ করে। তারা ভেবেছিল কৃষকরা ঐ সময়ে তা বিরোধিতা করতে পারবেন না। কিন্তু কৃষকেরা তাঁদের অস্তিত্ব বিপন্ন জেনে ঐ অতিমারীর সময়েও সংগ্রামের সিদ্ধান্ত নেন। অতিমারী চলতেই থাকে। এখন রবি শস্য কাটার সময় এবং তা বিক্রিও করতে হবে। এই ব্যস্ততার সময়েও তাঁরা দিল্লির সীমানায় তাঁদের মরশুমী আয়কে বাজি রেখে প্রতিবাদ চালু রেখেছেন। কৃষক এবং কৃষি মজুরদের পরস্পরের প্রতি গভীর নির্ভরতা ও সামাজিক বন্ধনের দৌলতে ফসল তোলার সময় কৃষকদের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও শস্য হানি কমই হয়েছে। তাই উচ্চকণ্ঠে বলা যায় কৃষকদের উৎপাদিত শস্য থেকে তাদের দূরে রেখেছে এই সরকারই।
বিজেপি এবং জেজেপি নেতাদের সামাজিক বয়কটের ঘোষণা করেছেন কৃষকেরা, কারণ ঐ নেতারা তাঁদের ক্রমাগত হয়রান ও বদনাম করেছেন। কৃষকদের চরম হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বিজেপি-জেজেপি নেতারা নানা কর্মসূচী নিয়েছেন একটাই উদ্দেশ্যে, তা হল হিংসায় প্ররোচনা দেওয়া ও আন্দোলনকে দূর্বল করার জন্য। কৃষকরা হরিয়ানার কৃষক-বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রীর প্রত্যেকটি সভা ও সূচীর বিরোধিতা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বারাউলির সভা বাতিল করেছেন। কৈথালে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর সভার বিরোধিতার জন্য লাঠিচার্জ করা হয়। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা কৃষকদের ওপর পুলিশী প্রতিক্রিয়ার নিন্দা করেন। হরিয়ানায় বিজেপি-জেজেপি সরকার অনাস্থা প্রস্তাবে বেঁচে গেলেও জনগণ এবং সাধারণ নাগরিকের আস্থা সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছেন।
সিংঘু বর্ডারে ইতিমধ্যে কিছু সমাজ-বিরোধী কৃষকদের কয়েকটি তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাঁবুতে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং তাঁবুর বাইরে একটি গাড়ি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুতই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং কোনো ব্যক্তিই আহত হননি। এই ঘটনায় কুন্দালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা এই ঘটনাগুলি, কিন্তু কৃষকরা এই আচরণে মোটেই ভীত নন।
বাংলার সমস্ত কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের সংগ্রামী সাথীরা,
আপনারা জানেন যে লক্ষ লক্ষ কৃষক-খেতমজুর নভেম্বর মাস থেকে দিল্লির সীমান্তে কৃষকবিরোধী/কর্পোরেট স্বার্থরক্ষাকারী কেন্দ্রীয় কৃষি আইনগুলির বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার নেতৃত্বে তারা সব কৃষকের জন্য লাভজনক এমএসপির আইনি নিশ্চয়তা চাইছে।
তীব্র শীত, বৃষ্টি এবং গরমে ১৪৩ দিনের বিক্ষোভ সত্ত্বেও নিষ্ঠুর কেন্দ্র সরকার ন্যায্য দাবি পূরণ করেনি, তাই এখন পর্যন্ত ৩৮৫ জনেরও বেশি কৃষক শহীদ হয়েছেন। কেন্দ্রের শাসকদলের রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন উপায়ে আন্দোলনকে আক্রমণ করা এবং বিভিন্ন ভাবে কৃষকদের অসম্মানিত করা ছাড়াও রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনে মত্ত হয়ে উঠেছে।
এখনই সময় এসেছে, সবাই হাতে হাত মিলিয়ে এই বোধহীন সরকারকে আমাদের বিশাল ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রদর্শন করার এবং নাগরিকরা এইভাবে উপেক্ষিত হতে পারেনা -- সেই বার্তা সরকারের কানে পৌঁছে দেওয়ার।
১০ মে ২০২১ হরিয়ানার শোনেপত জেলার সিংঘু সীমান্তে সংযুক্তে কিষাণ মোর্চা জাতীয় কৃষক সম্মেলন আয়োজিত করেছে। ১০ মে এক ঐতিহাসিক দিন -- ১৮৫৭ সালে ওই দিনেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম যুদ্ধ, সিপাহী বিদ্রোহ, শুরু হয়েছিল এবং সেই যুদ্ধে কৃষক-খেতমজুররা বীর যোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছিল।
বাংলার সব জেলার কৃষক ও খেতমজুর প্রতিনিধিদের ১০ মে ২০২১ সকাল ১০.০০ থেকে সন্ধ্যা ৬.০০ অবধি এই জাতীয় সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রন জানাচ্ছি।
অনুরোধ করছি যাতায়াতের ব্যবস্থা নিজেদের করতে তবে সিংঘু সীমান্তে আপনাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা করবে।
আপনাদের আন্দোলনের সাথী
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা