বিহারে মদ নিরোধক আইনের সন্ত্রাস
Terrorism under anti-alcohol law

আইনের সন্ত্রাস এমনই যে মৃত্যুর কারণ কি তা খোলসা করে বলা যাবে না। বিষাক্ত মদ খেয়েই মানুষগুলো যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে, সে কথা প্রকাশ করে অসুস্থতার যথাযথ চিকিৎসা হতে পারল না ঐ আইনের সন্ত্রাসের জন্য। না হলে অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালের কর্মীরা বলতে পারে — এদের ফিরিয়ে নিয়ে যাও, নইলে মদ খাওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হবে! রাজ্যে আইন করে মদ নিষিদ্ধ হয়েছে, কিন্তু যারা মদ খেতে চায় তাদের মদের নাগাল পেতে অসুবিধা হয় না, চাইলে ঘরেই পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট মার্কার কারণসুধা!

বিষাক্ত মদ খেয়ে বিহারের নওদায় মৃত্যু হল ১৭ জনের, গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরো ৮ জন। গোটা ঘটনার পিছনে আসল সত্যিটা কি তা জানতে সিপিআই(এমএল)-এর একটা তদন্তকারী দল ৫ এপ্রিল নওয়াদা গিয়ে নিহত এবং আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। সেই দলে ছিলেন ঘোষির সিপিআই(এমএল) বিধায়ক রামবলি সিং যাদব, রাজ্য স্থায়ী কমিটির সদস্য ও এআইকেএম নেতা রামাধর সিং, জেলা সম্পাদক নরেন্দ্র সিং, ভোলা রাম এবং সিপিআই(এমএল) নেত্রী সুদামা দেবী।

তদন্তকারী দল যা জানতে পারে তা হল — প্রশাসনিক অবহেলা এবং দানবীয় মদ নিরোধক আইনের সন্ত্রাসের জন্যই মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলে। প্রশাসনের পক্ষে যথাসময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হলে বেশ কয়েকজনের জীবনই বাঁচানো যেত। যে স্থলে ঘটনাটা ঘটে তা জেলাশাসকের অফিসের ঠিক পিছনেই। এই ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচাতে নীচু তলার পুলিশ কর্মীদের নিশানা করা হচ্ছে। মদ নিরোধক আইন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এবং বিহার এখন অবৈধ মদের কবজায়। আর, এ বিষয়েও কোনো সন্দেহ থাকতে পারেনা যে, রাজনীতিবিদ-প্রশাসন-মদ মাফিয়ার গাঁটছড়া ছাড়া অবৈধ মদের ব্যবসা চলতে পারে না। এই গাঁটছড়াকে আড়াল করতে পুলিশ মায়া দেবী নামে এক দরিদ্র মহিলা কর্ণ বিক্রেতাকে গ্ৰেপ্তার করে জেলে পুরেছে এবং বিকাশ মিশ্র নামে এক চৌকিদারকে বিষাক্ত মদ তৈরির অভিযোগে সাসপেন্ড করেছে।

নিহতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ বিষাক্ত মদ বলে উল্লেখ করা হলেও পুলিশ মৃতদের পরিবারের সদস্যদের লিখতে বাধ্য করে যে, মৃত্যু হয়েছে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে বা মৃগি রোগে। তদন্তকারী দলের সদস্যরা বিষাক্ত মদ পানে মৃত ভূষণ রাজবংশির বাড়ি গেলে সেখানে দু’জন পুলিশ কর্মীকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখেন। প্রশাসনের চাপে নিহত ব্যক্তির মেয়ে আমাদের বলেন, তাঁর বাবার মৃত্যু বিষাক্ত মদ খেয়ে হয়নি, হয়েছে মানসিক উত্তেজনার কারণে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট যদিও অন্য কথা বলছে। প্রশাসনের দিক থেকে চরম ন্যক্কারজনক ঘটনাটা ঘটল জেণ্ডা বিগাহা গ্ৰামে। তদন্তকারী দল সেই গ্ৰাম থেকে ফেরার পর পুলিশ গ্ৰামবাসীদের ওপর আক্রমণ চালায়, তাঁদের অপরাধ হল, তাঁরা সিপিআই(এমএল)-এর তদন্তকারী দলের সদস্যদের কাছে বিষাক্ত মদ খেয়ে মৃত্যুর কথা ফাঁস করেছেন!

খণ্ড-28
সংখ্যা-14