তৃতীয় দফার ভোট অতিক্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গের আটদফা ভোটের চতুর্থ দফায় যে ভোট হতে চলেছে তাতে হুগলি জেলার উত্তরপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন তরুণ অধ্যাপক সৌরভ রায়। সৌরভ রায়ের সমর্থনে চলছে জোর কদমে প্রচার – বাড়ি বাড়ি যাওয়া, ছোট বড় মিছিল, ঝান্ডা টাঙিয়ে এলাকাকে সুসজ্জিত করে তোলা, মাইক প্রচারের মতো বহুবিধ কর্মকান্ডে উৎসাহের সঙ্গে যুক্ত আছেন ছাত্র যুব মহিলা সহ পার্টি কর্মীরা। গত ৩ এবং ৫ এপ্রিল দুটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, একটি সভায় বিহারের ডুমরাও বিধানসভা কেন্দ্রের পার্টির বিধায়ক অশোক কুশওয়া বক্তব্য রাখেন, তিনি প্রার্থীর সাথে বিহারী মেহনতি মানুষ অধ্যুষিত এলাকাতেও যান, প্রার্থী নিজেও সামগ্রিক রাজনীতির সাথে সাথে এলাকার জীবন্ত সমস্যাগুলিকে তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন।
এই দুটি সভাতেই কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বর্তমান পরিস্থিতি ও বিজেপির ভয়াবহতা ও তাকে রোখার দায়িত্ব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, সম্পূর্ণ বক্তব্যকে লিপিবদ্ধ না করে বরং সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে এই জন্য প্রতিবেদক ক্ষমাপ্রার্থী, তিনি বলেন এবার আমরা দুটো কথা বলছি, এক বাংলাকে দখল করার বিজেপির উঠে পড়ে লাগাকে, বিজেপির চক্রান্তকে প্রতিহত করা দরকার, দ্বিতীয়ত বামপন্থাকে প্রতিষ্টিত করার জন্য, মানুষের রুটি রুজির লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন রাজনীতি, নতুন নেতৃত্ব, নতুন ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা সময়ের দাবি। তিনি করোনা কালে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা ও দেশের আর্থিক বিপর্যয়ের কথা বলেন, তিনি বলেন দেশের সামগ্রিক উৎপাদন (জিডিপি) – ২৫ শতাংশে নেমে গেছে উল্টো দিকে আরেক জিডিপি – গ্যাস, পেট্রল ডিজেল-এর দাম ঊর্ধমুখী, ভোজ্য তেল দেড়'শ টাকা, রেলে প্যাসেঞ্জার ট্রেনে এক্সপ্রেসের ভাড়া দিতে হচ্ছে, প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম ইচ্ছেমতো বাড়ানো হচ্ছে, অথচ এই কথাগুলো নির্বাচনে আলোচিত হচ্ছে না। পরিবর্তনের কথা, সোনার বাংলা গড়ার কথা হচ্ছে, পরিবর্তন মানে দাঁড়াচ্ছে অন্য দলের পাঁচ বছরের বিধায়ককে নিজের দলের প্রার্থী করা, টাকা দিয়ে নেতা কেন হচ্ছে, ভোটার কেনা হচ্ছে, কোটি কোটি টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, একজন মহিলার নাম লছমি দেবী ছবি দিয়ে বলা হচ্ছে তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন যেটা সাংবাদিকরা দেখিয়েছেন সেটা ডাহা মিথ্যা, বিহারে আমরা দেখলাম সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো বিশেষ পুলিশ আইন আনা হচ্ছে যেখানে সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা খানা তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করা যাবে, এই নিয়ে বিধায়করা প্রতিবাদ করলে রাপিড একশন ফোর্স দিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালালো। এই রকম এক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবাংলায় ভোট হতে চলেছে, যে পশ্চিমবাংলায় বামপন্থী সরকার ছিল, সেই সরকার কেন গেলো সেটা আমরা জানি, সিঙ্গুরে শিল্প না হওয়ায় হাহুতাশ শোনা যাচ্ছে, সিঙ্গুরে শিল্প হলে কত মানুষের কাজ হতো সেটা একটা প্রশ্ন, সেটা একটা ধাঁধা, কিন্তু এই হুগলিতেই হিন্দমোটর কারখানা বন্ধ হয়ে গেলো, রবার কারখানা, সুতো কারখানা বন্ধ হয়ে গেলো, লোকের কাজ চলে গেলো, কারখানার জমি জমি হাঙরদের কাছে চলে গেলো। আমরা শুনেছিলাম এখনও আবার শুনছি কৃষি আমাদের সেই ভিত্তিকে সারা দেশে নাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেই ভিত্তির মানুষরা সারা দেশে লড়াই করছেন, সুতরাং সেই অতীত এবং ভবিষ্যৎ বললে হবে না, বর্তমানে আমাদের রাজনীতি করতে হবে, বর্তমানকে নিয়ে। যে হরিয়ানা উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা ভোট দিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছিল তারা আজ সারা দেশে বিজেপিকে পরাজিত করানোর কথা বলছেন, কারণ তারা ভুক্তভোগী, বিহারের হাজার হাজার যুবক কাজের দাবিতে আমাদের সমর্থন করেছেন যারা একসময় মোদির জয়গান গেয়েছিল, তারা ভুক্তভোগী। আজকে শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে, আজকে স্বাস্থ্য বীমা হচ্ছে কিন্তু হাতের কাছে ডাক্তার, হাসপাতাল না থাকলে পাঁচ লাখ টাকার বীমার কার্ড থাকলেও কিছু হবে না, আমাদের দাবি তাই সবার জন্য শিক্ষা সবার জন্য স্বাস্থ্য। বিজেপি আর আরএসএস এসসব কিছু উল্টে দিচ্ছে। যেটা ছিল সরকারী সেই স্বাস্থ্য শিক্ষা, চাকরি সেটা চলে যাচ্ছে আদানি আম্বানির হাতে আর মানুষ কি পড়বে, কি খাবে কাকে ভালোবাসবে, কি ধর্ম পালন করবে এইসব ব্যক্তিগত বিষয় ঠিক করে দিচ্ছে সরকার, বিজেপি-আরএসএস।
এনআরসি নিয়েও পশ্চিমবাংলায় ভয় দেখানো শুরু হয়েছে, বাংলার শ্রমিকদের বাইরে কাজ করতে গেলে বাংলাদেশী বলে চিহ্নিত করা হয়, বিপদটা তাই বাংলায় আরও বেশি। অমিত শাহের তত্বাবধানে স্বরাষ্ট্রদপ্তর দিল্লিতে নির্বাচিত সরকারের অধিকার খর্ব করে গভর্নরের ক্ষমতা বাড়িয়েছে, তেলেঙ্গানায় মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাঁদের ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করে বিভিন্ন ডাটা ঢুকিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে জেলে পোরা হচ্ছে! তাই আমরা বলছি বিজেপিকে প্রতিহত করতে হবে, বামপন্থাকে শক্তিশালী করতে হবে, গণতন্ত্রের জন্য, রুটি রুজির সংগ্রামের জন্য বামপন্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। পশ্চিমবাংলায় নতুন করে বামপন্থী জাগরণ দরকার। এই জাগরণের প্রেক্ষাপটটা অন্য। চল্লিশের দশক, ষাটের দশক, সত্তরের দশকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে বামপন্থা জেগে উঠেছিল, সেখান থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, আজকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে বামপন্থাকে নতুন করে জায়গা তৈরি করতে হবে, নতুন করে আস্থা অর্জন করতে হবে, গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে হবে, মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগাতে হবে, এটা একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। এই নতুন চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে পশ্চিমবাংলায় বামপন্থীরা নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়াবেন।