আবেদন
বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর চরম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি
Letter to the Election Commission

প্রতি,
প্রধান নির্বাচন কমিশনার,
ভারতের নির্বাচন কমিশন

বিষয়: বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর চরম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য

মহাশয়,
আমরা নিশ্চিত যে মিডিয়ায় বহুল প্রচারিত রিপোর্ট থেকে আপনি নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর চরম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য সম্পর্কে ইতিমধ্যেই অবগত।

একের পর এক বক্তব্যে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মমতা ব্যানার্জিকে মুসলিম হিসেবে প্রতিপন্ন করতে ‘বেগম’ সম্বোধন করেছেন, যেন হিন্দুভোট পেতে মুসলিমদের ঘৃণা করা আবশ্যিক।

২৯ মার্চ ২০২১ নন্দীগ্রামে একটি প্রকাশ্য জনসভায় শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গেছে।

তিনি বলেছেন : “যদি বেগম ক্ষমতায় ফিরে আসে তাহলে রাজ্য মিনি পাকিস্তানে পরিণত হবে। নিয়মিত ‘ঈদ মুবারক’ বলা মমতার স্বভাব। এমনকি দোল উৎসবের শুভেচ্ছা জানাতেও তিনি ‘হোলি মুবারক’ বলেন ... ওনারা বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোতে মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রেখেছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ জিতলে সেখানে বাজি ফাটানো, মিষ্টি বিতরণ আর মাংস খাওয়া হয়। আপনারা কি এদের হাতে নন্দীগ্রামকে তুলে দিতে চান? ভেবে দেখুন ...।”

এখানে শুভেন্দু সরাসরি একটি বহুল প্রচলিত উর্দু শব্দ ‘মুবারক’-এর বিরুদ্ধে ঘৃণা ওগড়াচ্ছেন আর মিথ্যা ভয় ছড়াচ্ছেন যে মমতা ব্যানার্জিজিতলে মুসলিমরা রাজ্য দখল করে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করবে। ভারতীয় মুসলিমদের পাকিস্তানের সাথে গুলিয়ে দিয়ে তারা ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করে এই ভুয়ো প্রচার মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও হিংসা ছড়ানোর একটি বহুল ব্যবহৃত হাতিয়ার। বিরোধী দল তৃণমূলের বেশ কিছু মুসলিম নেতার নাম করেও শুভেন্দু ঘৃণা উসকে দেওয়ার কাজ করেছেন। তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের নাম নিয়ে শুভেন্দু বলেছেন “ম্যাডাম জিতলেও, তারপরেই এখান থেকে হাওয়া হয়ে যাবে। আপনাদের সব কাগজ পত্রের কাজ করতে তখন যেতে হবে সুফিয়ানের বাড়ি। মহিলাদের পক্ষে সুফিয়ানের বাড়ি যাওয়া কি আদৌ নিরাপদ? কারোর পক্ষেই কি নিরাপদ?” শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণে একজন রাজনৈতিক নেতাকে মহিলাদের জন্য বিপজ্জনক বলে দাগিয়ে দেওয়া চরম সাম্প্রদায়িক।

৭ মার্চ, ২০২১-এ দেওয়া একটি বক্তব্যে শুভেন্দু অধিকারী আবারো উর্দু ঘেঁষা শব্দ ব্যবহার করে বোঝাতে চান যে মুসলিমদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট পাওয়া উচিত নয়। মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বলেন, “এখানে কেউ মমতাকে বাংলার মেয়ে হিসেবে স্বীকার করে না। মমতা হল অনুপ্রবেশকারীদের ‘ফুফু’ আর রোহিঙ্গাদের খালা।” রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে ভোট কুড়োনোর চেষ্টাও এখানে লক্ষ্যণীয়।

আমরা দাবি জানাচ্ছি, প্রকাশ্য দিবালোকে খোলাখুলি এহেন বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক।

নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে বোঝা যাবে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানোর বক্তব্যে তাদের অনুমোদন আছে। ভারতের নির্বাচনী গণতন্ত্রের প্রহরী যারা তাদের দ্বারাই এধরণের ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্যে সায় দেওয়া ইতিহাস কখনো ক্ষমা করবে না।

কবিতা কৃষ্ণাণ সিপিআই(এমএল)
কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে

খণ্ড-28
সংখ্যা-12