শীতলকুচিতে আধা সামরিক বাহিনীর গুলিচালনায় চারজন ভোটার নিহত হওয়ার পর গোটা রাজ্য জুড়ে এক উথাল-পাথাল পরিস্থিতি শুরু হয়। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংগঠিত করার বাহানায় নজীরবিহীন সংখ্যায় আধা সামরিক বাহিনীর মোতায়ন, প্রয়োজনে গুলি চালাবার ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে নির্বাচন কমিশন গোটা প্রক্রিয়ায় বিজেপি’র হয়ে যেভাবে পক্ষপাতিত্ব শুরু করে তা রাজ্যের গণতান্ত্রিক বিবেককে রীতিমতো ক্ষুব্ধ করে তোলে। দেখা গেল, শীতলকুচির গুলিকান্ডের পর প্রয়োজনে সর্বত্র তা রাজ্যে প্রয়োগ করা, চারের বদলে আটজনকে হত্যা করা প্রভৃতি নানা উস্কানিমূলক বিবৃতি দেওয়া শুরু করলো রাজ্যের বিজেপি নেতারা।
এর বিরুদ্ধে, যাদবপুরের পাল বাজারে ঘটনার পরদিন, ১১ এপ্রিল যাদবপুর ঢাকুরিয়া এলাকা পার্টির পক্ষ থেকে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন, মানস ঘোষ, মিতালি বিশ্বাস, তরুণ সরকার, অতনু চক্রবর্তী ও আকাশ দেশমুখ। সভা পরিচালনা করেন সুশান্ত দেবনাথ। এলাকার মানুষেরা আগ্রহের সাথে সভায় বক্তাদের বক্তব্য শোনেন।
১২ তারিখ মৌলালী মোড়ে একই ইস্যুতে এক বিক্ষোভসভা হয়। সেখানেও সভার শুরুতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালিত হয়। আইসা’র সাথে পার্টির পক্ষ থেকে এই সভায় বৃহত্তর কলকাতার কর্মীরা অংশ নেন। সভায় বক্তব্য রাখেন অতনু চক্রবর্তী, নীলাশীষ বসু, মন্সুর আলি, চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী, কিশোর সরকার, নির্মল ঘোষ, ও কার্তিক পাল। গোটা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দিবাকর ভট্টাচার্য।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে শীতলকুচিতে গণহত্যার প্রতিবাদে হুগলি জেলার বিভিন্ন জায়গায় সিপিআই(এমএল) এবং এআইপিএফ এবং এপিডিআরের পক্ষ থেকে ধিক্কার কর্মসূচী পালিত হয়। কোন্নগরে পার্টির পক্ষে দলীয় অফিসের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে হিন্দমোটর বাজার ঘুরে বিপিন ভিলা মোড়ে এসে শেষ হয়। চারজন শহিদের নামাঙ্কিত বেদীর সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়, সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ছাত্র নেতা সৌরভ। পান্ডুয়া ব্লকের কোঁচমালি রায়পাড়ায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই মিছিলে গ্রামের মহিলারা বেশি সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন। মিছিলের শেষে শিশু সহ সকলেই মোমবাতি প্রজ্বলন করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে এআইপিএফ এবং এপিডিআর-এর পক্ষ থেকে প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়, সভায় বক্তব্য রাখেন সনৎ রায়চৌধুরী, কমল দত্ত, বটকৃষ্ণ দাস, কল্যাণ সেন, সুদর্শন বসু, শ্যামল ঘোষ ও অমল। কর্মসূচী চলাকালীন উপস্থিত সদস্যরা ধিক্কার পোস্টার হাতে নিয়ে প্রদর্শন করেন।
চতুর্থ দফার নির্বাচনে কোচবিহারের শীতলকুচিতে বিনা প্ররোচনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজন যুবকের প্রাণহানির ঘটনায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নির্বচন কমিশনকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তৈরি করার পরিকল্পিত চেষ্টার প্রতিবাদে এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর আধিকারিকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে, শিলিগুড়িতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের শক্তিগড় ব্রাঞ্চ কমিটির পক্ষ থেকে ১২ এপ্রিল বিক্ষোভ কর্মসূচী সংগঠিত হয় এবং নিহতদের স্মরণ করা হয়। কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন উদ্যোক্তা সংগঠনের দার্জিলিং জেলা কমিটি সদস্য পুলক গাঙ্গুলী এবং মোজাম্মেল হক। কর্মসূচী পরিচালনা করেন শাশ্বতী সেনগুপ্ত। এছাড়াও ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচারে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়।