আবেদন
নদীপ কৌরদের ওপর থেকে মামলা প্রত্যাহার কর
Withdraw the case from Nadip

ফেব্রুয়ারী ২৬-এ দিল্লীর শ্রমিক নেতা নদীপ কৌর হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব হাই কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্ত হলেন। তাঁর কমরেড শিবকুমার এখনও জেলে।

দিল্লীর কুন্ডলী শিল্পাঞ্চলে মজদুর অধিকার সংগঠনের সদস্য নদীপ কৌর এবং সেই সংগঠনের সভাপতি শিব কুমার। দুজনেই কারখানার শ্রমিক। তাঁরা কুন্ডলী শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অধিকারের দাবিতে লাগাতার লড়াই করেন এবং শ্রমিকদের ন্যায্য বেতনের জন্য ও বেতনের চুরির বিরুদ্ধে ফ্যাক্ট্রি মালিকদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সংগঠিত করেন। নদীপ কৌর এবং কুন্ডলীর শ্রমিকরা ধর্ণায় বসেছিলিন তাঁদের চলতি কাজের বেতনের দাবিতে এবং লকডাউনের সময়ের পাওনা বেতনের দাবিতে। লকডাউনের সময় সরকার বেতন দেওয়া জারি রাখতে বললেও পুরো ভারতে যে বিপুল পরিমাণে বেতন চুরি হয়েছে এবং ছাটাই হয়েছে তা সবার কাছে পরিষ্কার। লকডাউনের সময় এই বিপুল বেতন চুরি আমাদের ভারতে ধনী-গরিবের ভেতর ব্যবধান আলাদা স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। এই সময় তাঁরা শ্রমিকদের মধ্যে কৃষকদের সমর্থনে প্রচার শুরু করেন।

১৪ জানুয়ারী কুন্ডলী পুলিশ শ্রমিকদের আক্রমণ করে। উত্তেজনা ছড়ালে নদীপ কৌরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার করার সময় তাকে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়। পুলিশ মজদুর অধিকার সংগঠনের লোকদের খুঁজতে থাকে। জানুয়ারী ১৬-তে শিবকুমারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার পরিবারকে জানানো হয় জানুয়ারী ৩১-এ। শিবকুমারের চোখে সমস্যা থাকায় তাকে নিয়মিত দিল্লী এইমসে চিকিৎসার জন্যে যেতে হয়। জেলে বন্দীর পর তার চোখের চিকিৎসাও ব্যহত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী মীনা হ্যারিস ফেব্রুয়ারী ৬-এ নদীপ কৌরের গ্রেপ্তারি নিয়ে টুইট করেন এবং তার বিরুদ্ধে পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন। নদীপ কৌরের গ্রেপ্তারি জাতীয় রাজনীতিতে ইস্যু হয়ে যায়। কৃষক একতা মোর্চা কৃষক আন্দোলনের সঞ্চালক কমিটি নদীপ কৌরের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল।

নদীপ কৌর ছাড়া পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারা হওয়া জাতিবাদী অপমানের কথাও জানান। তাঁকে পুলিশ তাঁর জাতি নিয়ে কটূক্তি ক’রে বলে যে সে এখানে কেন শ্রমিকদের হয়ে আওয়াজ তুলছে, তার কাজ তো ড্রেন পরিষ্কার করা! তাকে গ্রেপ্তারির সময় কিভাবে মারা হয় সেই ব্যাপারও জানান নদীপ। তিনি জানান যে তাদের সংগঠন কয়েক মাস ধরে বেতনের দাবিতে প্রচার এবং প্রতিবাদ চালাচ্ছে। কিন্তু আক্রমণ শুরু হয় কৃষকদের সমর্থনে প্রচার শুরু করার পর। সে প্রশ্ন তোলে যে দেশে কি তাহলে প্যামফ্লেট বিলি করার স্বাধীনতাটুকুও নেই? তিনি জানান যে তাদের হাতে শুধু পতাকা ছিল আর কিছুই নয়। এটাই এখন নিয়ম যে যারাই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে তারাই দেশদ্রোহী হয়ে যাবে এবং মিথ্যে মামলায় তাকে জেলে পোড়া হবে। কৃষি আইন এবং শ্রমিক আইনে সংশোধনের বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হওয়া উচিৎ বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন যে জামিন মানেই লড়াই জিতে যাওয়া নয়। তার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা এবং তোলাবাজির মামলা এখোনো চলছে। এখোনো শ্রমিকরা খালি পেটে ঘুমোতে যাচ্ছে সারা দেশে। শিবকুমারের বাবা রাজবীর জানান যে তার ছেলেকেও জেলে মারধোর করা হচ্ছে।

- প্রত্যুষ নন্দী 

খণ্ড-28
সংখ্যা-8