ভগৎ সিং এর জন্ম এক জাতিয়তাবাদী পরিবারে। তাঁর জন্মের সময় তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামী বাবা কিষাণ সিং ও কাকা শরণ সিং দুজনেই জেলে ছিলেন। তাঁর জন্মের আগেই তাঁর আর এক কাকা স্বাধীনতা সংগ্রামী অজিত সিং-কে ব্রিটিশরা দেশান্তরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তাঁর বড় হয়ে ওঠাটা ছিল এক ঝড়ো আবহাওয়ায়। ভগৎ সিং স্কুলের ছাত্র, সেই সময়েই এল অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ, সরকারী স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠান ছাড়ার আহ্বান। ভগৎ সিং সরকার পরিচালিত স্কুল ছেড়ে ভর্তি হলেন অ-সরকারী নবগঠিত জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায় এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পরে ভগৎ সিং জলন্ধর থেকে সেখানে যান এবং শহীদের রক্তভেজা মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। এটা সারাজীবনই তিনি সঙ্গে রেখেছিলেন।
১৯২২ সালে চৌরিচৌরার একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার সূত্র ধরে গান্ধীজী যখন আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন, তখন বাংলা ও পাঞ্জাবের একদল তরুণের জাতিয়তাবাদী আন্দোলনের কংগ্রেসী ধারাটির প্রতি মোহভঙ্গ হল। একদা গান্ধীজীর ‘এক বছরের মধ্যে স্বরাজ’ এর প্রতিশ্রুতি তাঁদের আশান্বিত করেছিল। কিন্তু অসহযোগ আন্দোলনের পরিণতি তাঁদের হতাশ করল। নারাজীদের আইনসভার বাইরে থেকে অসহযোগ বা স্বরাজীদের আইনসভার মধ্যে ঢুকে ভেতর থেকে প্রতিবাদ – কোনোটিই তাঁদের বিশেষ পছন্দ হয়নি। চরমপন্থী বিপ্লবী হিসেবে সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিলেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে ভগৎ সিং ছাড়াও ছিলেন সূর্য সেন, যতীন দাস, চন্দ্রশেখর আজাদ, শুখদেব সিং প্রমুখ বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও বাংলার অনেক উজ্জ্বল তরুণ মুখ। ভগৎ সিং-কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল গদর আন্দোলনের ঐতিহ্য। গদর পার্টি রাজনীতি থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করতে উদ্যোগী হয়েছিল, সেই সঙ্গে চোখ রেখেছিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর। গদর পার্টির বিপ্লবী তরুণ কর্তার সিং সরাভার মাত্র কুড়ি বছর বয়েসে স্বাধীনতার যূপকাষ্ঠে আত্মবলিদান ভগৎ সিং-কে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।
১৯২৩ সালে পাঞ্জাব থেকে কিছুদিনের জন্য ভগৎ সিং চলে আসেন কানপুরে এবং সমমনোভাবাপন্ন এক ঝাঁক তরুণের সঙ্গে সেখানে তাঁর যোগাযোগ হয়। এদের মধ্যে ছিলেন গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থী, বটুকেশ্বর দত্ত, বিজয় কুমার সিংহ, চন্দ্রশেখর আজাদ প্রমুখ। ১৯২৩ সালে সচ্চিদানন্দ সান্যাল তৈরি করেছিলেন হিন্দুস্থান রিভোলিউশনারি অ্যাসোসিয়েশন, ভগৎ সিং কানপুরবাস পর্বে এতে যোগ দেন। সচ্চিদানন্দের লেখা ‘বন্দী জীবন’ বইটি তিনি পাঞ্জাবীতে অনুবাদও করেন। ১৯২৪ সালের অক্টোবরে কানপুরে ভগৎ সিং ও অন্যান্য তরুণ বিপ্লবীরা মিলে গড়ে তুললেন হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন (মতান্তরে আর্মি) (এইচ আর এ)। এর লক্ষ্য ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের উচ্ছেদ ঘটিয়ে তার জায়গায় ‘ফেডারেল রিপাবলিক অব ইউনাইটেড স্টেটস’ প্রতিষ্ঠা। এই নামটির দিকে খেয়াল করলেই আমরা বুঝতে পারব অতিরিক্ত কেন্দ্রিকতার বদলে গণতন্ত্রের স্বার্থে ফেডারেল ধরনের এক স্বাধীন ভারতবর্ষর প্রতিষ্ঠাই তাঁরা চেয়েছিলেন। ১৯২৫ সালে ভগৎ সিং পাঞ্জাবে ফিরে যান। সেখানে তখন গদর আন্দোলন নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। ভগৎ সিং এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যান।
কাকোরি ডাকাতি মামলায় হিন্দুস্থান সোশালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন এর অনেক বিপ্লবী নেতা গ্রেপ্তার হন। আশফাকুল্লা খাঁ, রামপ্রসাদ বিসমিল, রোশন সিং ও রাজেন্দ্র লাহিড়ীকে বিচারের পর ফাঁসি দেওয়া হয়। অনেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, আন্দামানে দীপান্তর ও দীর্ঘমেয়াদি কারাবাসের শাস্তি দেওয়া হয়। এই ধাক্কার পর ভগৎ সিং ও তাঁর অবশিষ্ট সাথীরা একটি আইনি, প্রকাশ্য সংগঠন তৈরি করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই প্রয়োজন মেটাতেই ১৯২৬ সালে তৈরি হয় ‘নওজোয়ান ভারত সভা’। ১৯২৮ সালে ভগৎ সিং ও সুখদেব তৈরি করেন এর ছাত্র শাখা লাহোর স্টুডেন্ট’স ইউনিয়ন।
১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন এলো ভারতে। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস একে বয়কটের ডাক দিল। ভগৎ সিং ও তাঁর সাথীরাও সক্রিয় প্রতিবাদে জোর দিলেন। লাহোর শহরে লাজপত রায়ের নেতৃত্বে যে বিরাট মিছিল বেরোয় তাতেও তাঁরা সামিল ছিলেন। মিছিলের ওপর পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালায়। লালা লাজপত রায় মারাত্মক আঘাত পান ও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর মারা যেন। এর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদরা দৃঢ়সংকল্প হন। তাঁরা পুলিশ অফিসার স্কটকে হত্যার পরিকল্পনা করেন, যদিও ভুলবশত আরেক পুলিশ অফিসার জে পি স্যান্ডার্স বিপ্লবীদের হাতে নিহত হন।
১৯২৯ সালে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত আইনসভার মধ্যে ফাঁকা জায়গায় একটি বোম নিক্ষেপ করেন ও তাঁদের বক্তব্য সকলকে জানিয়ে দেন। এই ঘটনা শুধু দেশের কোণে কোণেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেই চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে।
ভগৎ সিং এর রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ গঠনে রুশ বিপ্লবের প্রভাব ছিল ব্যাপক। সেই সময় লাহোরে লাজপত রায় তৈরি করেছিলেন দ্বারকাদাস লাইব্রেরি। এখানে রুশ বিপ্লবের ইতিহাস, মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন এর লেখালেখি, ইতালি, আয়ার্লাণ্ড প্রভৃতির জাতিয়তাবাদী আন্দোলনের ওপর বইপত্রের খুব ভালো সংগ্রহ ছিল। ভগৎ সিং ছিলেন এই গ্রন্থাগারের প্রধান পাঠক। তিনি শুধু নিজেই প্রচুর পড়তেন তা নয়, তাঁর কমরেডদেরও এইসব পড়াশুনোয় নিরন্তর উৎসাহ দিতেন। এই সব বইপত্রের ভিত্তিতে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রকেই ভগৎ সিং ও তাঁর কমরেডরা তাঁদের নতুন আদর্শ করে তোলেন। বিপ্লবী তরুণদের প্রকাশ্য সংগঠন নওজোয়ান ভারত সভা ১৯২৮ সালের অগস্ট মাসে সাত দিন ব্যাপী ‘রুশ বান্ধব সপ্তাহ’ পালন করেছিল। ১৯৩০ সালের জানুয়ারি মাসে ভগৎ সিং ও তাঁর কমরেডরা লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় বিচারাধীন বন্দী ছিলেন, সেই সময়ে তাঁরা জেলের মধ্যেই পালন করেন ‘লেনিন দিবস’। সোভিয়েত রাশিয়ার জনগণকে জেলের ভেতর থেকেই তাঁরা শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন। বস্তুতপক্ষে সোভিয়েত সমাজবাদের প্রভাবেই এই সময় তাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগঠিত বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জায়গা থেকে সরে এসে বৃহৎ জনসমাজকে সমন্বিত করে বিপ্লবী গণ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শুরু করেন। ১৯২৭ সালের পর থেকেই ভগৎ সিং ও তাঁর কমরেডদের দৃষ্টিকোণের এই পরিবর্তনের স্পষ্ট সাক্ষ্য আছে ১৯৩১ সালের এক বয়ানে। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে এখন আমি যেভাবে ভাবছি, আমার বিপ্লবী জীবনের শুরুতে সেভাবে ভাবিনি। আমি ঘোষণা করতে চাই যে আমি আর সন্ত্রাসবাদী পথে বিশ্বাসী নই। আমি মনে করি না এই পথে হেঁটে আমাদের কোনও লাভ হবে। সেইসঙ্গে তিনি এও বলেন যে তিনি একদমই মনে করেন না তাঁর বোম ছোঁড়ার ঘটনাটি অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকারক ছিল।
ভগৎ সিং-এর সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা বুঝতে তাঁর বিভিন্ন উক্তি আমাদের সহায়ক হতে পারে। তরুণদের উদ্দেশে একটি ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, এরই অবিচ্ছেদ্য প্রাথমিক কাজ হল রাজনৈতিক বিপ্লব সফল করা। তাই-ই আমরা করতে চাই। রাজনৈতিক বিপ্লব মানে শুধুমাত্র ব্রিটিশের হাত থেকে ভারতীয়দের হাতে রাষ্ট্র হস্তান্তর করা বোঝায় না। আমাদের সুনির্দিষ্ট বিপ্লবী লক্ষ্য আছে, জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতে বিপ্লবী দলের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা আমরা চাই। তারপর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে গোটা সমাজকে পুনর্গঠিত করার পথে সংগঠিতভাবে আমাদের এগোতে হবে। বিপ্লবের এই সঠিক ধারণা যদি আপনার না থাকে তবে দয়া করে থামুন, ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান তুলবেন না। বিপ্লব শব্দটির তাৎপর্য অন্তত আমাদের কাছে সুমহান। এ শব্দটিকে যেমন তেমন করে ব্যবহার করতে বা অপব্যবহার করতে আমরা দিতে পারি না।”
ভগৎ সিং বলেছিলেন, ‘‘রাষ্ট্র এবং সরকারী প্রশাসন শাসক শ্রেণির একটা হাতিয়ার – যা দিয়ে সে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে, নিজের স্বার্থকে রক্ষা করে। আমরা এই ক্ষমতা ছিনিয়ে এনে সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মার্কসবাদের চিন্তা অনুযায়ী নতুন সমাজ গড়ে তুলতে চাই। এ কারণেই সরকারী ক্ষমতা হাতে পাওয়ার জন্য আমরা লড়ছি। সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জনগণকে সচেতন ও প্রস্তুত করে গড়ে তোলা যায়। বিপ্লবের জন্য জনগণকে প্রস্তুত করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এজন্য বিপ্লবী কর্মীদের অপরিসীম আত্মত্যাগ প্রয়োজন। আমি খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনি যদি ব্যবসায়ী হন কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠা এবং পারিবারিক পিছুটান যদি আপনার থাকে তবে এ পথ আপনার জন্য নয়। বিপ্লবী দলের নেতা হওয়ার যোগ্যতা আপনার নেই। সান্ধ্য অবকাশে কিছু ভাষণ দেবার মতো নেতা আমাদের অনেক আছে, এসব নেতাদের কোনও মূল্যই নেই। লেনিন যাকে বলছেন জাতবিপ্লবী, তেমন ধরনের নেতা আমাদের চাই। আমাদের চাই এমন সব সর্বক্ষণের বিপ্লবী কর্মী, বিপ্লব ছাড়া আর কোনও আকাঙক্ষা, বিপ্লবের জন্য কাজ ছাড়া আর কোনও কাজ যাদের নেই। সুপরিকল্পিত অগ্রগতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল জাত বিপ্লবীদের নিয়ে গঠিত একটি দল – আদর্শ সম্পর্কে যাঁদের ধারণা সুস্পষ্ট, যাঁদের পর্যবেক্ষণ নিখুঁত, উদ্যোগ গ্রহণ করার এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের আছে।”
ভারত স্বাধীন হয়েছে দেশভাগের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে। ধর্ম ও রাজনীতিকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করার যে কথা ভগৎ সিং ও তাঁর কমরেডরা ভেবেছিলেন, আজকের ভারত তাঁর বিপরীত দিকে প্রবল গতিতে এগোচ্ছে। তার বিষময় ফল আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ভগৎ সিং-এর কথাগুলি এই প্রসঙ্গে আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখার। তিনি বলছেন, ‘‘ধর্ম আমাদের অগ্রগতির পথে দুর্লঙ্ঘ্য বাধা। যেমন ধরুন আমরা চাই সমস্ত মানুষ সমান হোক, মানুষে মানুষে উঁচু-নীচু বা অস্পৃশ্যতার ভেদাভেদ যেন না থাকে। কিন্তু সনাতন ধর্ম তো এই ভেদাভেদের পক্ষে। এই বিংশ শতাব্দীতে পণ্ডিত মৌলবীরা আজও মেথরের ছেলের কাছ থেকে গলায় মালা নেন তারপর কাপড়-চোপড় সহ স্নান করে শুদ্ধ হন। অচ্ছুৎদের তাঁরা পৈতা পরার অধিকার দেন না। এমন যে ধর্ম তার বিরুদ্ধে কিছু না বলে নীরবতাই যদি শ্রেয় মনে করি, তবে তো সব কিছুতে জলাঞ্জলি দিয়ে মরে বসে থাকতে হয়। চোখের উপর আমরা দেখছি ধর্ম আমাদের সামনে পর্বত প্রমাণ বাধা স্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একের ধর্ম বলছে গরু কাটা চলবে, অন্যের ধর্মে লেখা আছে গরুকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করতে হবে। তাহলে এখন কী হবে? যদি অশ্বত্থ গাছের ডাল ভাঙলেই ধর্ম ভেঙে পড়ে তাহলে কী-ই বা করা যায়। এইসব ধর্মীয় দর্শন, সংস্কার ও ধর্মীয় আচার-আচরণকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভেদ শেষ পর্যন্ত জাতীয় ধর্ম হয়ে দাঁড়ায় এবং তাকে ভিত্তি করে পৃথক পৃথক সংগঠন গড়ে ওঠে। এর অশুভ পরিণাম যে কী তা আমরা স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি। যতদিন পারস্পরিক বিদ্বেষ মন থেকে মুছে ফেলে আমরা এক না হব, ততদিন বাস্তবে ঐক্য গড়ে উঠতে পারে না। কেবলমাত্র ব্রিটিশ সিংহের থাবা থেকে মুক্তি পাওয়ার নাম স্বাধীনতা নয়। পূর্ণ স্বাধীনতার অর্থ হল সমস্ত মানুষের মিলেমিশে থাকবার ক্ষমতা অর্জন এবং সর্বপ্রকার মানসিক দাসত্ব ও দুর্বলতা থেকে মুক্তি।” বাবাসাহেব আম্বেদকরের জাতিপ্রথা উচ্ছেদের আন্দোলন তখন আলোড়িত করছে ভারতীয় রাজনীতিকে, সেই সময়কালেই ‘অচ্ছুৎ সমস্যা’ সংক্রান্ত লেখাটিতে ভগৎ সিং শুধু কারখানার মধ্যে শ্রমিক শ্রেণিকে খুঁজছেন না, দলিত মেহনতি মানুষের জাগরণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন শ্রমিক জাগরণকে। এর মধ্যে দিয়ে মার্কসবাদের ভারতীয়করণের একটি কাজ সেই তরুণ বয়সেই তিনি শুরু করে দিয়েছিলেন বলে মনে হয়। ২৩ মার্চ ফাঁসির মঞ্চে অকালে তাঁর পথচলা শেষ না হয়ে গেলে শুধু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনই নয়, ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনও নিঃসন্দেহে বিশেষভাবে লাভবান হত।
ভগৎ সিং ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম উজ্জ্বল বিপ্লবী। তবে শুধু স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের মধ্যেই নয়, আজকের ভারতের নতুন সঙ্কটগুলির সমাধানের ক্ষেত্রেও তাঁর চিন্তাভাবনা ও কাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
- সৌভিক ঘোষাল