হাট তখন শেষের দিকে; রোজের কেনাবেচা সেরে আমবাড়ি হাট ফিরতি মানুষ তখন জটলা করেছে চা দোকানে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া দাম চিন্তার ভাঁজ যেমন বাড়িয়েছে, পাশাপাশি আসন্ন ভোটের উত্তাপের আঁচও এসে পড়েছে চা বাগান সংলগ্ন এই জনপদে। আলোচনা চলছিল এসব নিয়েই, এর মধ্যেই ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রার্থী সদ্য ছাব্বিশে পা দেওয়া ছিপছিপে মেয়েটির নেতৃত্বে লাল পতাকার দৃপ্ত মিছিল এগিয়ে আসছিল। সঙ্গে শ্লোগান, ভোট দেবেন কোনখানে পতাকায় তিনতারার মাঝখানে। ফ্যাসিস্ট বিজেপি দেশবেচা বিজেপি দূর হটো। বিজেপি হটাও বাংলা বাঁচাও। আলোচনা খানিক্ষণের জন্য থমেকে গেলো! ঐ চায়ের দোকানে হাটের এদিকে ওদিকে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকজন যে আলোচনা করছিলেন এরাও তো সে কথাই বলছে। সেসবের বিরুদ্ধেই মিছিলে শ্লোগান দিচ্ছে। মিছিল শেষে হাটে সভা যখন শুরু হয়। সূর্য তখন প্রান্ত সীমায়। কিন্তু মিছিলের দৃপ্ত মেজাজ তখন সভাতেও অক্ষুণ্ণ। একে একে বক্তব্য রাখলেন বর্ষীয়ান চা শ্রমিক নেতৃত্ব বন্ধু বেক, মুক্তি সরকার, বাসুদেব বোস, শরৎ সিংহ এবং প্রার্থী সুমন্তি এক্কা। কেউ বললেন দীর্ঘদিন চা বাগানের মজুরি বৃদ্ধির লড়াইয়ে থেকে কিভাবে সরকার তাদেরকে নায্য পাওনা, জমির পাট্টা, রেশন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত করে চলছে দিনের পর দিন। তবে তারা এ লড়াই লড়ে যাবে শেষ পর্যন্ত। কৃষক-বিরোধী কৃষি আইন, শ্রমিক-বিরোধী শ্রম-কোড পরিবর্তন করার দাবিতেও সরব হলেন বক্তরা। উঠে এসেছে বিজেপির আমলে নারী নিরাপত্তার পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হওয়ার প্রশ্নটিও। বছর ছাব্বিশের সুমন্তি যখন চা বাগানের মজুরি বৃদ্ধির লড়াইয়ের কথা বলছিলেন, বলছিলেন এই মোদী সরকারই আস্ত একটা মহামারী। আমাদের কাছে ভোট তাই জনগনের উৎসব। যে উৎসবে সামিল হয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ করবো ব্যালটের মধ্যে দিয়ে। এক ইঞ্চি জমিও আমরা ছাড়বো না ফ্যাসিস্ট সরকারকে। আসুন আমরা একসাথে বিজেপি মুক্ত বাংলা গড়ে তুলতে আগামী ১৭ এপ্রিল ভোট দিই পতাকায় তিন তারার মাঝখানে। সভার আশেপাশের মানুষদের ছুঁয়ে যাচ্ছিল সেই প্রত্যয়। ভগত সিং এর ৯১তম শহীদ দিবসে জনগণের ভারত গড়ে তুলতে সঙ্গের সহোযোদ্ধারাও তখন সুমন্তির ঋজু আলোয় উদ্ভাসিত।