খবরা-খবর
নো ভোট টু বিজেপি মিছিল সভা আলোড়িত করল কলকাতার রাজপথ
No Vote to BJP

১০ মার্চ এন্টালির রামলীলা পার্ক থেকে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনির ব্যাপারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠল তীব্রস্বরে। নো ভোট টু বিজেপি, ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক, আরএসএস-বিজেপি বাংলা থেকে দূর হঠো, হাম ছিনকে লেঙ্গে আজাদি – মনুবাদ সে আজাদি ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে কয়েক হাজার মানুষের মিছিল এগিয়ে চলল ধর্মতলার দিকে। গোটা মিছিল ছিল নানা বর্ণের পতাকায় সুসজ্জিত, নানা ভাষার স্লোগানে মুখরিত, নানা বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে বৈচিত্র্যে ভরা। বিশেষ করে নজর কাড়ছিল বিপুল সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী, তরুণ তরুণীদের উপস্থিতি। দিল্লির বুকে চলমান কৃষক আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন মিছিলে। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, শ্রমিক কৃষক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা কুশল দেবনাথ, বাসুদেব বসু, অমিতাভ ভট্টাচার্য, জয়তু দেশমুখ, সুব্রত সেনগুপ্ত, শঙ্কর দাস, শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, বর্ণালী মুখার্জী, অভীক সরকার, অতনু চক্রবর্তী, সুমন সেনগুপ্ত সহ অনেকেই। লেখক শামিম আহমেদ, দেবতোষ দাস, নাট্যকর্মী ঋতদীপ ঘোষ, চলচ্চিত্রবিদ্যার অধ্যাপক মৈনাক বিশ্বাস, মানস ঘোষ সহ সাংস্কৃতিক জগতের নানা মুখ। পা মিলিয়েছে কুড়ি-পঁচিশের  অন্বেষা, ত্রিয়াশা, বর্ষা, আমন, ইমতিয়াজ, সায়নি, নিলাশিস, সৌমেন্দু, স্বর্ণেন্দুর মতো অনেকে। সামিল ছিলেন দিল্লীর জেএনইউ থেকে আসা আইসা নেত্রী সুচেতা। ছিলেন আহ্বায়কমন্ডলীর কস্তুরী বসু, অনিকেত চট্টোপাধ্যায়, সুজাত ভদ্র, শতাব্দী দাশ; শতাব্দীর সঙ্গেই পোস্টার বুকে এঁটে ব্যানার ধরে পথ হেঁটেছে তার ছ-বছরের মেয়ে আঁখি। মিছিলের ব্যানারে ধ্বনিত হচ্ছিল কিছু কেন্দ্রীয় স্লোগান – ‘একুশের ডাক, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাংলা রুখে দাঁড়াক’, ‘নো ভোট টু বিজেপি’। ছিল ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিং, প্রীতিলতা, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ সহ অনেকের ছবি দেওয়া রঙ বেরঙের পতাকা। মিছিল যখন এগিয়েছে তখন দু-পাশের জনতার সারি আগ্রহ ভরে দেখেছে তাকে, সেখান থেকে কেউ কেউ ঢুকেও পড়েছেন মিছিলে। তালতলা হাইস্কুলের সামনে দিয়ে যখন মিছিল যাচ্ছে তখন সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের অনেকে বেরিয়ে এসেছে আগ্রহ নিয়ে। সঙ্গের ফোন ক্যামেরায় ধরে রেখেছে মিছিলের স্থির আর ভিডিও চিত্র। মিছিল নিউমার্কেটের সামনে পৌঁছনোর পর শুরু হয় সভার কাজ। দিল্লি থেকে আসা কৃষক আন্দোলনের নেতারা তাদের বক্তব্যে মনে করিয়ে দেন স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা ও পাঞ্জাবের গৌরবময় সহযোগী ভূমিকার কথা। আজকের দিনেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের কৃষকের লড়াই আর বাংলার জনতার লড়াই এক জায়গায় এসে মিলছে। বাংলায় বিজেপিকে পরাস্ত করা গেলে তা দিল্লির বুকে চলমান কৃষক আন্দোলনকে যে প্রভূত শক্তি ও মনোবল জোগাবে সেটা উল্লেখ করে তারাও ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগানের গুরুত্বের ওপরে জোর দেন। কুশল দেবনাথ তাঁর বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলার নানা জায়গায় নো ভোট টু বিজেপি-র প্রচার চলছে। এই মিছিল ও সভা সেই প্রচার আন্দোলনেরই অংশ। এই প্রচারকাজ আরো এগিয়ে যাবে। একই কথা উঠে আসে শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, শতাব্দী দাশ সহ বিভিন্ন বক্তার কথায়। দীপঙ্কর ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বিজেপিতে যোগ দিয়েই মিঠুন চক্রবর্তী বলেছেন এক ছোবলেই ছবির কথা। বিজেপি আসলে এটাই। সে যেখানে যায় সর্বত্র বিভাজনের বিষ ছড়িয়ে দেয়, ধ্বংসের বিষ ছড়িয়ে দেয়। পশ্চিমবাংলাকে বিজেপির বিষ থেকে মুক্ত করার জন্য লড়তে হবে।

পাঞ্জাবের কৃষক নেতারা বলছিলেন বাংলা আর পাঞ্জাবের সম্পর্কের কথা। স্বাধীনতা আন্দোলনে পাশাপাশি লড়াইয়ের কথা। এই দুই ভূখণ্ডই ভাগ হয়েছে দেশভাগের সময়ে। বিজেপি পাঞ্জাবে চেষ্টা করেছিল একে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানোর। পাঞ্জাব বিজেপিকে হারিয়ে এর জবাব দিয়েছে। বিজেপি বাংলাকেও বিভক্ত করতে চাইছে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে। বিজেপিকে হারিয়ে এর জবাব দিতে হবে।

আগামী দুমাস আমাদের সমস্ত শক্তি, উদ্যোগকে নিয়োজিত করতে হবে বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্য। বিজেপি বিরোধী উদ্যোগকে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে। আশার কথা প্রচুর তরুণ তরুণী এখানে এসেছেন। বিহারে এই তরুণ প্রজন্ম বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল। ছাত্র যুব নেতাদের বিহারের জনগণ বিধানসভায় পাঠিয়েছেন। বাংলার ছাত্র যুবরাও বিজেপি বিরোধী উদ্যোগকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে সামিল থাকবে।”

No Vote to BJP procession in Kolkata

শ্লোগান --

১) বিজেপি হারাও বাংলা বাঁচাও।
২) দাঙ্গাবাজ, গণতন্ত্র হত্যাকারী, মানুষের জীবন জীবিকার অধিকার হরণকারী বিজেপি’কে পরাস্ত করুন।
৩) রুটি-রুজি গণতন্ত্রের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সিপিআই (এম-এল) প্রার্থীদের ‘পতাকায় তিনতারা’ চিহ্নে ভোট দিয়ে জয়ী করুন।
৪) কর্পোরেট সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী বিজেপি’কে প্রতিরোধের কার্যকরী শক্তি সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন প্রার্থীদের ভোট দিন।
৫) কৃষি ও কৃষককে কর্পোরেট পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিয়ে কোম্পানিরাজ চাপিয়ে দেওয়ার  বিরুদ্ধে, রেশন ব্যবস্থাকে বাঁচাতে
ভোট দিন।
৬) বছরে ২০০ দিনের কাজ ও ৬০০ টাকা মজুরির দাবিতে ভোট দিন।
৭) ৮ ঘন্টা কাজের আইন সহ শ্রমিকের অধিকার তুলে দিয়ে দাস শ্রমিক প্রথা ফিরিয়ে আনার চক্রান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিন।
৮) এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের নামে দেশের মানুষকে বিদেশী বানানোর চক্রান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিন।
৯) মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব সৃষ্টিকারী কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে ভোট দিন।
১০) কালা কানুন জারী করে গণআন্দোলনের উপর দমন পীড়ন চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিন।
১১) পুঁজিপতিদের কর ছাড় দেওয়ার বিরুদ্ধে, মাইক্রোফিনান্স কোম্পানীর চড়া সূদের ঋণফাঁদ থেকে ঋণমুক্তির দাবীতে ভোট দিন।
১২) রেল, ব্যাংক বীমা সহ সরকারি ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ ও কর্মসংস্থান বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে, সমস্ত শূন্য পদে নিয়োগের দাবিতে ভোট দিন।
খণ্ড-28
সংখ্যা-9