বর্তমানে আমি অসুস্থ অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ডিসেম্বর মাসে পার্টির রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে আমাদের নির্বাচনী অভিযানের পরিকল্পনা গৃহীত হওয়ার পরই আমি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়ি, গুরুতর অসুস্থতার মোকাবিলা করে এখনও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাইনি। আমার বিশ্বাস রাজ্যের সমগ্র পার্টি শক্তি সেই পরিকল্পনা কার্যকরী করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমিও হাসপাতালে এক কঠিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।
রাজ্যের পার্টি কর্মী, দরদী, শুভার্থী এবং সেই সাথে বাংলার বামপন্থী বিবেক ও বাম-গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন মানুষ এই রাজ্যের বুকে বিজেপিকে এক ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দেবে না, এই দৃঢ় বিশ্বাস আমার রয়েছে।
বিজেপির বিপদ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই,সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের উন্মত্ত হামলা সারা দেশজুড়ে বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, সেটা আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি। একই সাথে আমরা দেখছি কৃষকদের প্রতিরোধ। “আইন পাশ করিয়ে” কৃষকদের সর্বশান্ত ও প্রতারিত করার বিরুদ্ধে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। পঞ্জাব-হরিয়ানা জানিয়ে দিয়েছে সেখানে বিজেপির কোনো স্থান নেই, পশ্চিমবাংলাও নিশ্চিতভাবে সেটা জানিয়ে দেবে। আজ রাজ্যের ছাত্র-যুব-মহিলা সহ সমস্ত অংশর মানুষ পথে নেমেছে, প্রতিরোধ চলছে, চলবে।
ফ্যাসীবাদী হামলার মুখে বিভিন্ন রূপে বামপন্থী মহলে আলাপ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশে বিজেপি সাংবিধানিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটাকে ধ্বংস করতে চাইছে। রাস্ট্র ব্যবস্থাকে স্বৈরতান্ত্রিক করে তোলা, আইন কানুন সংবিধানকে নিজের মতো করে পরিবর্তন করা, এসব ছাড়াও বিজেপির লক্ষ হলো দেশের সমগ্র কাঠামোকেই ভেঙ্গে দেওয়া। সাংবিধানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করার বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। ওরা যে “ডবল ইঞ্জিন” সরকারের ধারণা নিয়ে আসছে সেটা এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করার একটা ষড়যন্ত্র! বিহারে ওরা সেই অপচেষ্টা চালিয়েছে, অন্যান্য সমস্ত রাজ্যেও চালাবে। এটা আমাদের কাছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম একটা প্রধান ইস্যু।
অতীতে বাংলাকে ভাঙ্গা হয়েছে, তার রয়েছে এক দুঃখজনক রক্তাক্ত ইতিহাস। পঞ্জাবও সেই একই জায়গা থেকে আজ উঠে দাঁড়িয়েছে। বাংলাকেও সেই দায়িত্ব নিতে হবে। এই প্রেক্ষাপটেই আমাদের নির্বাচনী প্রধান স্লোগান হয়ে উঠেছে বিজেপিকে হারাও বাংলা বাঁচাও।
বামপন্থীদের কাজ হলো মতপার্থক্য দেখা দিলো সেটা সুস্থভাবে পরিচালনা করা। মতপার্থক্য দেখা দিলেই ভয় পেয়ে বা ঘাবড়ে গিয়ে একে অপরকে কটু কথা বলা এটা বামপন্থীদের কাজ হতে পারে না। ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে আলাপ আলোচনা চলুক, এর মধ্য দিয়ে বামপন্থীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠবে। এই অবস্থানকে বিবেচনা করেই আমরা ১২টি আসনে লড়ছি, বামপন্থীদের জয়ী আসনে তাঁদের সমর্থন দিচ্ছি, আরও দুটি আসনে বামদের সমর্থন দিচ্ছি। যেমন বাকি আসনে ফ্যাসীবাদকে পরাস্ত করাকেই আমাদের প্রাথমিক কর্তব্যরূপে নির্ধারণ করছি।
- ১১ মার্চ ২০২১