কেন্দ্রের তিনটে কর্পোরেটপন্থী ও কৃষকের স্বার্থ বিরোধী কৃষি আইনের বিরুদ্ধে যে রাজ্যগুলোতে কৃষক আন্দোলন প্রবল আকার নিয়েছে হরিয়ানা তার অন্যতম। প্রসঙ্গত, হরিয়ানার শাসন ক্ষমতায় এখন বিজেপি ও জননায়ক জনতা পার্টির (জে জে পি) জোট সরকার। জেজেপি ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী অবস্থান থেকে লড়লেও নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর তারা বিজেপির সঙ্গে জোট সরকারে শামিল হয়। শাসক জোটের অঙ্গ হওয়ায় বিজেপির সঙ্গে তাদের নেতা-বিধায়করাও কৃষকদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে পড়ছেন, সরকার সমর্থক নির্দল বিধায়করাও কৃষক রোষ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। কৃষকরা বিধায়ক, নেতা ও মন্ত্রীদের বাড়ির বাইরে অবস্থান করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করছেন। কৃষকদের ক্রোধ এমন মাত্রা নেয় যে তাঁরা কার্নালের পারহা গ্ৰামের এবং জিন্দের উচানা গ্ৰামের হেলিপ্যাড দুটো ক্ষতিগ্রস্ত করেন, যে হেলিপ্যাড দুটোতে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী দুশ্যন্ত চৌটালার হেলিকপ্টার থেকে নামার কথা ছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, রাজ্যের এক জাট নেতা কিছুদিন আগে জানান, “মন্ত্রীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, আগামী দু-মাস তাঁরা যেন হরিয়ানা ভ্রমণ না করেন।”
গত ১০ মার্চ তিনটে কৃষি আইনের ইস্যুতে কংগ্ৰেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে হরিয়ানা বিধানসভায় ভোটাভুটি হয়। প্রস্তাবের বিপক্ষে বেশি ভোট পড়ায় খট্টর সরকার অনাস্থা ভোটে জয়ী হলেও কৃষক নেতারা দাবি করেছেন, সরকার “জনগণের আস্থা হারিয়েছে।” অনাস্থা ভোটের পর সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতা গুরনাম সিং চারুনি বলেন, “গতকাল আমরা হরিয়ানার সমস্ত বিধায়কদের অনুরোধ করেছিলাম … শুধু এই একবারের জন্য আপনাদের ভোট চেয়েছিলাম। (বলেছিলাম) আমরা সবসময় আপনাদের ভোট দিয়েছি, এবার চাই আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু ওঁরা পুঁজিবাদকে ভোট দিলেন। ভবিষ্যতে … ওরা যদি আমাদের গ্ৰামে আসে, আমরা ওদের বিরোধিতা করব, সামাজিকভাবে বয়কট করব, আর আমাদের সামাজিক জমায়েতে এই বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না। ওরা যদি আসার চেষ্টা করে, আমরা ওদের ঢুকতে দোবো না।”
কৃষকরা এই অবস্থান নেওয়ায় সারা রাজ্যেই বিজেপি-জেজেপি বিধায়ক ও সরকার সমর্থক নির্দল বিধায়কদের অভূতপূর্ব সংকটজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। জিন্দ জেলার নারওয়ানাতে বিজেপির জেলা স্তরের প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে। গত ১৪ মার্চ কৃষকরা সেখানে পৌঁছে বিক্ষোভ দেখালে পুলিশের সহায়তা নিয়ে বিজেপি কর্মীদের স্থান ত্যাগ করতে হয়। ১৫ মার্চ উপ-মুখ্যমন্ত্রী চৌটালার জিন্দের উছানা অফিসে পৌঁছে কৃষকরা বিজেপি ও সরকার বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকেন। অফিসের সবাইকে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়। বিধায়ক অসীম গোয়েল ও গোপাল গয়াল কাণ্ডার বাড়ির বাইরেও বিক্ষোভ প্রদর্শনের খবর পাওয়া গেছে। কৃষক প্রতিবাদের জেরে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরও তাঁর গ্ৰামের বাড়িতে ঢুকতে পারেননি বলে সংবাদ বেরিয়েছে।
এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসা পাঞ্জাবের আকালি দলের নয় বিধায়ক বিধানসভার বাইরে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরকে ঘেরাও করলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। মন্ত্রী-বিধায়কদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সামাজিক বয়কট আন্দোলন তীব্র মাত্রা অর্জন করায় হরিয়ানা সরকার বিধানসভায় বয়কট বিরোধী প্রস্তাব পাশ করানোর পথে যায়। হরিয়ানা বিধানসভার নির্বাচনের দেরি আছে, এবং শাসন ক্ষমতায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সামনে আশু কোনো বিপদও নেই। তবে, জনসমর্থনের দিক থেকে বিচার করলে এই মুহূর্তে জনসমর্থন যে সরকারের পাশ থেকে সরে গেছে তা হলপ করে বলা যায়।