মন্তেশ্বর বিধানসভা ১৭টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে মন্তেশ্বর ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও মেমারী ২নং ব্লকের ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এই বিধানসভা এলাকায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের শক্তিশালী সংগঠন আছে বলা যায় না। মন্তেশ্বর ব্লকের ৪টা গ্রাম পঞ্চায়েত ও মেমারী ২নং ব্লকের ৩টা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কিছু গ্রামে কম-বেশী সংগঠন আছে। বিগত লকডাউন সময়ে ব্যাপক পরিযায়ী শ্রমিক এই বিধানসভার গ্রামাঞ্চলের মেহনতি মানুষ বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়েন এবং চরম অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তখন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের কর্মীরা সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটির সদস্য ও এলাকার নেতা কমরেড আনসারুল আমান মন্ডলের নেতৃত্বে উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন প্রদেশের সিপিআই(এমএল) লিবারেশন সংগঠন মারফত এবং সরাসরি সেই সব রাজ্যের প্রশাসনকে জানিয়ে ঐ সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়। এবং এলাকার গরিব মানুষের দুরবস্থার মোকাবিলার জন্য এক দিকে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা অন্যদিকে নিজেরা ত্রাণ সংগ্রহ করে গরিব মানুষের বন্টনের ব্যবস্থা করা হয়। এই সমস্ত কার্যক্রম এলাকার মানুষের মধ্যে ভালো প্রভাব বিস্তার করেছিল। ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থার মধ্যেই ঘরে ফেরার পর ব্যাপক পরিযায়ী শ্রমিক সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাদের এলাকায় ১০০ দিনের কাজ দেওয়ার দাবি, জবকার্ড পাওয়ার দাবি ও লকডাউন ভাতা বা অনুদানের দাবিতে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। রেশনকার্ড খাদ্যের দাবিতে আন্দোলন চলছিল এই সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর একটি সমীক্ষার ফর্ম পূরণ করার জন্য দেওয়া হলে ৫টা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ১৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক তাদের ফর্ম পূরণ করে সংগঠনের কাছে জমা দেন। প্রায় ২৫০০ পরিযায়ী শ্রমিকদের ফোন নম্বর ও হোয়াটসপ নম্বর সংগঠনের কাছে আছে। যাদেরকে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ার গ্রুপ চালানোর চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই গ্রামীণ মহিলাদের ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য মাইক্রোফিনান্স সংস্থার এজেন্টদের জুলুম নির্যাতন বেড়ে চলছিল। তাই ঋণ মকুব এবং কিস্তি আদায় স্থগিত রাখাও এজেন্টদের জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঋণগ্রস্ত মহিলাদের নিয়ে ঋণ মুক্তিকমিটির মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। কিছু কিছু গ্রামে এই আন্দোলনের ভাল উৎসাহ তৈরি করে।
তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই ব্লকে কোনো বিরোধী দল জনগণের কোনো দাবি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার শাহস বা উদ্যোগ নিতে পারছিলনা। তাই সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের উদ্যোগগুলো এক দিকে জনগণের মধ্যে আশা সঞ্চার করেছিল অন্য দিকে শাসক তৃণমূলের গাত্রদাহের কারণ হয়ে ওঠে। তৃণমূলের তোলাবাজির স্বীকার ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষের কেউ কেউ সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে থাকেন। সিপিএমের সমর্থনে থাকা গরিব মেহনতীদের মধ্যে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল বিভিন্ন ভাবেই সিপিআই(এমএল)-কে মোকাবিলার চেষ্টাও শুরু করে। সন্ত্রাস দেখিয়ে সাধারণ কর্মীদের দমিয়ে দেওয়া মিথ্যা মামলার মাধ্যমে পুলিশ দিয়ে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে দমন করতে চেষ্টা করে।
এই সব মোকাবিলা করারমধ্য দিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যেতে। কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী তিন কৃষি আইন ও বিদ্যুত বিল ২০২০ বাতিলের দাবিতে বার বার সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও তাঁর গণ সংগঠন এআইকেএম, আয়ারলা, আরওয়াইএ এবং এআইএসএ-র উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করা হয়। এআইকেএসসিসি-র নেতৃত্বে যৌথ উদ্যোগে বহু আন্দোলন সংগঠিত হয়। বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল চাপানোর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ গ্রামের কৃষকদের নিয়ে ব্যানার ছাড়াই সংগঠিত করা হয়। দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সংহতিমূলক টাক্টর মিছিল ও শহীদের স্মরণে অনুষ্ঠান ও প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। আর এইসব জনগণের জীবন-জীবিকার দাবির আন্দোলনকে শক্তিশালী ও এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বিধানসভার নির্বাচনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের প্রধান প্রচারের এজেন্ডা হিসেবেই থাকছে। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রার্থী আনসারুল আমান মন্ডলের নামে পতাকার মধ্যে তিন তারা চিহ্ন নিয়ে ক্যালেন্ডার করা হয়েছে। ব্লক নির্বাচনী টিম তৈরি হয়েছে। ভাল সংখ্যক দেওয়াল লিখন হয়েছে। প্রচারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।