রুখতেই হবে
Must stop

রাজ্যে আট দফা বিধানসভা নির্বাচন হবে। এত দীর্ঘ দফা’য় নির্বাচন বোধহয় একটা নজিরবিহীন রেকর্ড। এরকম সিদ্ধান্ত কেন নিতে হল তার কারণটি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন খোলসা করেনি। যদি এর পেছনে অনুঘটক কারণ জুগিয়ে থাকে বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং দু’চারটি পৌরসভা নির্বাচন অবাধ হতে না পারা, তাহলেও পাল্টা যুক্তি ওঠে। আরও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মুড়ে আরও কম দফায় নির্বাচন সারা সম্ভব নয় কেন? নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যাও তো কম নয়। নিন্দুকেরা টিপ্পনী কাটছে, কেন্দ্রের শাসকদল নিজের পর্যবেক্ষক টিম ও আইটি সেল নামিয়েছে বেশ ভারী সংখ্যায়। তাঁদেরই পর্যবেক্ষণ কি আট দফা নির্ঘন্ট নির্ণয়ের পেছনে অদৃশ্য প্রভাব ফেলেছে! বিজেপি নেতারা হুমকি দিয়ে আসছিলেন ‘এবার নির্বাচন হবে কড়া ব্যবস্থায়’। অতঃপর আয়োজন ব্যবস্থার বহর দেখে বিজেপি উল্লসিত। উৎফুল্ল আরও একজন, রাজ্যের রাজ্যপাল, ক্ষমতায় আসার শুরু থেকেই যিনি পরোক্ষে কেন্দ্রের শাসকদলের সপক্ষে যাবতীয় সক্রিয়তা দেখিয়ে আসছেন। এসব লক্ষণ দেখে সন্দেহ জাগে, তবে কি নির্বাচন পরিচালনায় প্রকৃত নিরপেক্ষতা থাকবে? নাকি ক্ষমতার জোরে যোগসাজশ করে ফায়দা তোলার ফন্দি আঁটছে বাংলা দখলের জন্য মরীয়া হওয়া বিজেপি! শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার নয়।

বিজেপি চালাচ্ছে গোয়েবলসীয় প্রচার — হিটলারী হুমকি। প্রচারের শুরুয়াতটা করেছে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে মেরুকরণের ইস্যূগুলো সামনে এনে। কেন্দ্রের প্রকল্পগুলো রূপায়ণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে। তৃণমূল ভাঙিয়ে বিজেপি বাড়ানোর খেলা শুরু হতে নব্য নেতাদের ধরিয়ে দেওয়া হল নানা দুর্নীতি-কেলেঙ্কারীর তুলোধোনার কাজ। ‘সাধু’ সাজতে প্রচারের স্বার্থে নেওয়া হতে থাকল বাংলার মনীষী স্মরণের ধূর্তকৌশল। তারপরে একে একে কতই না কেরদানী প্রদর্শন! হেলিপ্যাড থেকে নেমে নিম্নবর্ণের মানুষের ঘরে গিয়ে সদলবলে ভুরিভোজ সেরে সাড়ম্বরে সমারোহে শোভাযাত্রা। মনে হল চালচোর-কয়লা চোর ধরার তৎপরতা দেখানো দরকার। লেলিয়ে দেওয়া হল সিবিআই। ভুলেও সারদা-নারদ তদন্তের নাম মুখে আনার সাহস হচ্ছে না। কারণ, ঘাঘু-ঘুঘুদের বেশ কিছু এখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে, শুধু তাই নয়, তৃণমূল ভাঙার পাকা হাত। আবার তৃণমূলের দেখাদেখি নেওয়া হল টলিউডে গেরুয়া অনুপ্রবেশের পথ। সিএএ-এনআরসি নিয়ে এখনই প্রচারের ঢল নামানোর প্রশ্নে মোদী-শাহরা দ্বিধান্বিত, কি ফল দেবে না দেবে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, তাই এবিষয়ে প্রচার চালাচ্ছে সাধারণ স্তরে, বলছে ‘ভ্যাকসিন’ শেষ হলেই ‘ক্যা’ শুরু হবে। সমস্ত প্রশ্নের মুখে অমিত শাহ বলছেন মোদীর ওপর প্রশ্নাতীত আস্থা রাখার কথা। আর মোদী বলে চলছেন অন্তঃসারশূন্য ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নির্মাণের কথা। যা বস্তুত ধোঁকা দিতেই। পেছন পেছন উড়ে আসছেন উত্তরপ্রদেশের কাপালিক মুখ্যমন্ত্রী ‘যোগী’ আদিত্যনাথ। সকলেই ওয়াকিবহাল, যোগী জমানায় কি সাংঘাতিক সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদী রাজত্ব চলছে, কি সর্বনাশা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদী একনায়কত্ব চলছে। তবু ঐ চরম ঘৃণা-বিদ্বেষ-বিভাজনের রাজ চালক যোগী বাংলায় এসে মিথ্যাচার আর স্বৈরাচারের বান ছোটাচ্ছেন। যোগী যখন গলাবাজী করছেন তাঁর রাজ্যে গুন্ডারাজকে গলি থেকে গারদে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তখনও নৃশংসতার ঘটনা ঘটছে উত্তরপ্রদেশে, খবর আসছে হাথরস থেকে, বারবার গণধর্ষণের শিকার হওয়া নিম্নবর্ণের মেয়ের বাবাকে অভিযুক্ত ধর্ষকের গুলি করে হত্যার ঘটনার। যোগীর মুখে শুধু হিন্দুত্বের ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদে’র সব এজেন্ডা। বাংলায় ক্ষমতায় এলে তৈরি করা হবে ‘লাভ জেহাদ আইন’, বন্ধ করা হবে ‘গো হত্যা ও গরু পাচার’, ‘গো মাংস বিক্রি’র দোকান, ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি রেয়াত না করলে ঠাঁই হয়ত হবে এরাজ্যে, তবে থাকতে হতে পারে গারদে। এসব যেমন ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ চাপিয়ে দেওয়ার উৎস, তেমনি ‘হিন্দু রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ’ তথা ‘হিন্দু রাষ্ট্রবাদ’ চাপানোর অঙ্গ। ভারতীয় ফ্যাসিবাদের উত্থানের এই দুই রূপের সমন্বয় কায়েমের অভিযান চালাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি। এই লক্ষ্য হাসিলের উদ্দেশ্য থেকেই পশ্চিমবাংলার অন্দরে কন্দরে আজ বিজেপি হায়েনার হানা।

একে রুখতেই হবে নির্বাচনী রণাঙ্গনে। প্রকৃত গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অবিচল থাকতে। সাংবিধানিক সব অধিকার রক্ষা করতে। সংকটে জর্জরিত জনগণের জ্বলন্ত দাবিসমূহ আদায় করতে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-8