প্রতিশ্রুতি ছিল বাংলায় মিড-ডে-মিল কর্মীদের আয় কিভাবে বাড়ানো যায়? সে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু, রাজ্যের অন্যান্য প্রকল্প কর্মীদের জন্য ছিটে ফোটা ভাবলেও মিড-ডে-মিল কর্মীদের জন্যই টাকার অভাব পরে গেল। ক্লাব,উৎসব, দান-খয়রাতির শত কোটি টাকা ব্যয় হয়, কিন্তু বাংলার আড়াই লক্ষ মিড-ডে-মিল কর্মীর ভাগ্যে কিছু জোটে না।
সোনার বাংলা গড়ে তুলবে বলে যারা বাংলায় শোরগোল তুলছে, তাদের তো আরো ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা। বছর বছর বরাদ্দ তো কমাচ্ছেই, এখন প্রকল্পটিই বেসরকারী ব্যবসায়ী, এন জি ও দের হাতে তুলে দেবার মতলব করছে।
স্বাভাবিকভাবেই, আজ কর্মীদের লড়াই আরো বৃহৎ ও শক্তিশালী করে তুলতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী কলকাতার পথে থালা মিছিলে হাজার হাজার কর্মী সামিল হয়ে আওয়াজ তুললেন — শ্রমিকের স্বীকৃতি চাই, ন্যূনতম মজুরি চাই, ভবিষ্যৎ সুরক্ষা চাই।
দক্ষিণবঙ্গের ৭টি জেলার কর্মীরা সকাল থেকে শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশনে উপস্থিত হয়ে এক দৃপ্ত মিছিল কলকাতা কর্পোরেশন পাশে জমায়েত হয় এক মহতী সমাবেশে। এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধন কর্মী ইউনিয়ন এবং নদীয়া জেলা সংগ্রামী রন্ধন কর্মী ইউনিয়ন যৌথ আহ্বানে এই সমাবেশে অন্যতম নেত্রী জয়শ্রী দাস বলেন, “আমরা আজ দাবি জানাতে আসিনি, আমরা এসেছি কৈফিয়ত চাইতে। কিভাবে রাজ্য সরকার এই দরিদ্র মহিলাদের কথা ভুলে গেলেন। বর্তমান বা নতুন সব সরকারের জন্য আমাদের হুঁশিয়ারি, মজুরি না বাড়লে লড়াই আরো তীব্র হবে। সম্প্রতি (২০/১২/২০২০) এলাহাবাদ হাইকোর্ট মিড-ডে-মিল কর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও ন্যুনতম মজুরি দেওয়ার রায় দিয়েছে, তাকে এ রাজ্যেও অবিলম্বে কার্যকরী করতে হবে। আমরা শুধু রাস্তার লড়াই না, এবার মহামান্য হাইকোর্টের ও দ্বারস্থ হব।”
আন্দোলনের অন্যতম নেতা কৃষ্ণ গোপাল দাস বলেন, আমরা অনেক আশা নিয়ে দুবছর আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এসেছিলাম। তিনি ভেবে দেখবেন বলেছিলেন। কিন্তু দেখলাম সবটাই ফাঁকা প্রতিশ্রুতি। আজ আমরা যদি কোনো সদুত্তর না পাই, তবে এ লড়াই আরো বৃহত্তর হবে।
বিভিন্ন জেলার রন্ধনকর্মীরা কিভাবে এই করোনা কালেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে এমনকি বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। তার বিনিময়ে কেবলই পেয়েছেন বঞ্চনা। এ বছর ১২ মাসের মজুরি শুধু তারা মেনে নেবেন না। আগামী বছর থেকে প্রতিবছরই ১২ মাসের মজুরি দিতে হবে।
সভা থেকে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিকাশ ভবনে স্মারকলিপি দেন। মন্ত্রীর পক্ষে তার সচিব স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
প্রতিনিধি দলের পক্ষে এআইসিসিটিইউ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু বলেন, “আসন্ন নির্বাচনে এই দাবি আমাদের সর্বত্র তুলতে হবে। নতুন সরকারের সূচনায় আমাদের আরো জোরদার আন্দোলনে দাবি আদায়ে নামতে হবে। পথেই আমাদের মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে হবে।” এই সভাকে সম্বোধিত করে ভাষণ দেন আইসা নেত্রী অন্বেষা রায়, প্রগতিশীল মহিলা সমিতির নেত্রী চন্দ্রাষ্মিতা চৌধুরী। লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে গণসংগীত পরিবেশন করেন গণশিল্পী অনুপ মজুমদার (বাবুনি)। আসন্ন নির্বাচনে এলাকায় এলাকায় কর্মীদের সমাবেশিত করে তীব্র প্রচার জারি রাখার আবেদন জানিয়ে সভা শেষ হয়।