বিবৃতি
ভারতীয় নাগরিকদের গর্বিত আন্দোলনজীবী হয়ে ওঠা দরকার
indian

মোদী শাসনের শেষ ছয় বছর নাগরিক স্বাধীনতা, ভারতের সংবিধান এবং গণতন্ত্রের উপর নিরন্তর আক্রমণ চলেছে। ৮ ফেব্রুয়ারী সংসদে বক্তৃতা করে প্রধানমন্ত্রী মোদী সমস্ত ভণ্ডামির মুখোশ খুলে ফেললেন এবং কোনো রাখঢাক না রেখেই প্রতিবাদকারী ও বিরোধী স্বরকে “পরজীবী” অভিধায় অভিহিত করলেন। এই শব্দচয়ন সমগ্র পৃথিবী জুড়েই স্বৈরাচারী শাসকের প্রতিবাদী মানুষকে অবমাননা এবং অশুভ শক্তি হিসেবে প্রতিপন্ন করার ভাষা। এই ভাষা শাসকের গণহত্যার পথে অগ্রসর হওয়ার ভাষা। মোদী “আন্দোলনজীবী” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, মহিলা এবং আরও কিছু মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করতে যারা বিভিন্ন প্রতিবাদ প্রতিরোধের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তিনি বললেন যে এই জাতীয় লোকেরা, যারা বিভিন্ন গণআন্দোলনের সমর্থক, তারা আসলে “ষড়যন্ত্রকারী”, দেশকে তাদের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে।

বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষক ইউনিয়ন, মহিলা আন্দোলন, দলিত আন্দোলন, নাগরিক স্বাধীনতা এবং পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা সকলেই গর্বিত “আন্দোলনজীবী” যাদের বাঁচা মরার অর্থই নিপীড়িত ও সর্বহারা মানুষের প্রতিবাদের পক্ষে থেকে সংগ্রাম করা — মিছিলে তাই শ্লোগান ওঠে, “লড়াই করে বাঁচতে চাই”। প্রতিটি দেশে তারা দরিদ্র ও নিপীড়িতদের সংগ্রামে যোগ দেয় এবং এই সংগ্রামগুলিকে তাদের নিজের সংগ্রাম হিসেবেই আঁকড়ে ধরে, এরা দেশের গর্ব, এমনকি সে দেশের সরকার তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও।

আমরা আন্দোলনজীবীরা স্বাধীনতা আন্দোলনের গর্বিত উত্তরাধিকারের পক্ষে দাঁড়াই। স্বাভাবিকভাবেই মিঃ মোদী আন্দোলনের প্রশংসা করতে পারেন না – কারণ তাঁর নিজস্ব দল আরএসএস স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণই করেনি। আরএসএস তত্কালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং তার কোম্পানি রাজের সেবাদাস ছিল। এখন মোদীরাজ কোম্পানিরাজের সেবাদাস এবং তার সংঘকে টিকিয়ে রাখতে ‘নির্বাচনী বণ্ড’-এর মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্থ কর্পোরেট তহবিলের উপর নির্ভরশীল। বিপরীতে আমরা আন্দোলনজীবীরা একমাত্র ভারতের “উই দ্য পিপল” জনগণের উপর নির্ভরশীল।

যেসব আন্তর্জাতিক অধিকার কর্মী এবং স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন, মোদী তাদের “বিদেশী ধ্বংসাত্মক মতাদর্শ” হিসাবে অভিহিত করেছেন। তবে মোদী নিজেই ট্রাম্প এবং বলসেনরোর মতো বিভিন্ন স্বৈরাচারীদের এবং বিল গেটসের মতো বিগ কর্পোরেট প্রধানদের প্রশংসাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি কেবল তখনই আপত্তি করেন, যখন নিজেদের দেশে বর্ণবাদ, স্বৈরতন্ত্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরোধী কণ্ঠস্বরগুলি ভারতের জনগণের আন্দোলনকে সমর্থন করে। আমরা সমস্ত প্রগতিশীল স্বাধীনতা-প্রেমী ন্যায়বিচার-সন্ধানী ভারতীয়দের কাছে আবেদন করছি “আন্দোলনজীবী” উপাধিটিকে গর্বের সঙ্গে সানন্দে আপন করে গ্রহণ করুন। ভারত এবং বিশ্বের আন্দোলনজীবীরা যথার্থই অন্য একটি বিশ্ব গড়ে তুলবে, যে বিশ্ব হবে বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক, এবং এটা অবশ্যই সম্ভব।

– দীপঙ্কর ভট্টাচার্য,সাধারণ সম্পাদক, সিপিআই(এমএল )   

খণ্ড-28
সংখ্যা-5