উত্তরের ডুয়ার্সের সঙ্কোশ নদীর কাছে কুলকুলি বনবস্তির থেকে ৬ ফেব্রুয়ারী শ্রমজীবী অধিকার অভিযানের যাত্রা শুরু হয়। উত্তরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত বনবস্তির মানুষদের উদ্দীপনা, অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার অদম্য লড়াইকে সম্বল করে বর্তমানে উদ্ভুত ফাসিস্ত পরিস্তিতিতে যখন ক্রমশ গণতান্ত্রিক পরিসর কমে আসছে, সেই অবস্থায় উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক জনপদের মানুষেরা, চা বাগানের শ্রমিকেরা যারাই মূলত উত্তরের অর্থনৈতিক কাঠামোর ধারক, বাহক তাদেরকে নিয়েই শুরু হয় অভিযানের প্রথম পর্যায়। কুলকুলি বনবস্তি, আলিপুরদুয়ার শহর, চৌপাথি, হলদিবাড়ি মোড়, রাজাভাতখাওয়া, মেন্দাবাড়ি চা বাগান, মাদারিহাট, হাসিমারা বাজার যেখানেই অভিযাত্রিরা থেকেছেন, বক্তব্য রেখেছেন শমীক চক্রবর্তী, অভিজিৎ রায়, মুকুল চক্রবর্তী, সুন্দর রাভা মানবাধিকার কর্মী সুমন থেকে শ্রমজীবী মঞ্চের সহযোদ্ধা লাল সিং ভুজেলরা মানুষ দাঁড়িয়ে শুনেছেন, গানের দল লালিগুরাসের ‘গাও ছোড়াব, নেহি জঙ্গল ছোড়াব’ গানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গলা ছেড়েছেন অধিকারের প্রখর দাবিতে। আদিবাসী নাচ গান সংস্কৃতিতেও বারংবার উঠে এসেছে বিকল্প দিনের ভাবনা। একইসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় চলেছে অভিযানের সমর্থনে লিফলেট বিলি, পোস্টারিং।
বাগরাকোট চা বাগানে প্রথম ধাপের অভিযান শেষ হয়। অভিযাত্রিদের রাত কেটেছে এদের আতিথেয়তায়।
দ্বিতীয় দফায় অভিযান শুরু হয় শিলিগুড়ির অদূরে তরাইয়ের গজোলডোবা বনবস্তি থেকে। একইরকম উত্সাহ উদ্দীপনাকে সঙ্গি করে কিছু নতুন সফরসঙ্গী সহযোদ্ধাদের সাথে।
লালিগুরাস, মীরা চতুর্বেদী, রনজিত মুখার্জি, নগর কবিয়াল গৌতম চক্রবর্তীদের গানে, কবিতায় যেমন ছিলো চলমান কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন সংহতি। মেহনতি মানুষের ঐক্যে শৃঙ্খল ভাঙার তীব্র আকাঙ্খা। তেমনই দেশবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জেদ। গাজলডোবা, রাঙাপাণি, খড়িবাড়ির বিকেলের হাট, নকশালবাড়ির চা বাগান থেকে বামনপকরি বনবস্তি, কাটারিয়া বনবস্তি, শুকনা বনবস্তি থেকে এনজেপি রেলওয়ে মজদুর ইউনিয়নের অফিস। শমীক চক্রবর্তী, অভিজিৎ মজুমদার, অভিজিৎ রায়, বনজন শ্রমজীবী মঞ্চের রাজকুমার, অধ্যাপক অজিত রায় ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব গৌতম ঘোষ, চা বাগানের শ্রমিক বর্ষীয়ান শ্রমিক নেতৃত্ব ললিতা পুরিয়া, রাজু সরকাররা বারংবার সরব হয়েছেন প্রান্তিক মানুষদের অধিকারের সপক্ষে, বনের অধিকার, জমির অধিকারের পক্ষে। ফাসিস্ত বিজেপির তার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কৃষক, শ্রমিক, প্রান্তিক বনবস্তির মানুষদের সার্বিক ঐক্যের মাধ্যমে এই দীর্ঘকিন্তু অক্লান্ত লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে। যে কোনোভাবেই প্রতিহত করতে হবে এই সর্বনাশা শক্তিকে। সমস্ত বন্ধন,শৃঙ্খল ছিন্ন করে আমরা এগিয়ে যাবোই আগামীর দিকে যে আগামী নিশ্চিত স্বর্গ যদি কোথাও থেকে থাকে তাকে নামিয়ে আনবেই পৃথিবীতে। এই রিপোর্টলেখা পর্যন্ত অধিকার অভিযান তৃতীয় দফায় অধিকারের দাবিতে তরাই থেকে পাহাড়ের দিকে তাদের যাত্রা চলছে। শেষ হবে আগামী ১ মার্চ।