অর্থনীতির বিপজ্জনক নিম্নগতিকে রোধ করতে ও তাকে বিপরীতমুখে ঘুরিয়ে দিতে, এবং জনগণের সব থেকে বেশি বিপর্যস্ত সেই অংশ, যারা কাজ হারিয়েছেন বা যাদের আয় ও জীবিকায় যারপরনাই ধ্বস নেমেছে তাদের জরুরি ত্রাণের বন্দোবস্ত করতে মোদি সরকারের প্রথম কোভিড-পরবর্তি বাজেট কোনো প্রচেষ্টাই গ্রহণ করেনি। তার বদলে, বাজেটটি সঙ্কটের বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে ভারতের বৃহৎ কোম্পানিদের সম্পদ কুক্ষিগত করার বাড়তি সুযোগ প্রদানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। যখন অর্থনীতির প্রয়োজন বর্ধিত সরকারী ব্যয় ও বিনিয়োগ, তখন বাজেট পাইকারি হারে বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারীকরণের দিকে ধাবিত হয়েছে।
এই বাজেটে দরকার ছিল কর্মসংস্থান, এবং সাধারণ মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরাসরি অর্থ হস্তান্তরের দিকে দৃষ্টি প্রদান। কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্টভাবেই অনুপস্থিত। ভারতের ধনীতম ১০০ অর্বুদপতির সম্পদ অতিমারী ও লকডাউনের সময়ে বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি (প্রায় ১৩ লক্ষ কোটি টাকা) পেয়েছে। ওই বিপুল সম্পদকে ব্যবহারের জন্য সম্পদ কর বা লেনদেন কর আরোপ করতে বাজেটে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। অতি ধনীদের কাছ থেকে বর্ধিত হারে রাজস্ব সংগ্রহ ও জিএসটি ও আয়করে হ্রাস ঘটিয়ে মধ্যবিত্তদের সুরাহা করার উদ্দেশ্যে দেশের রাজস্ব নীতিকে সংস্কার করার বদলে বাজেটটি এক চরম পশ্চাদগামী রাজস্ব নীতিকেই অনুসরণ করেছে।
যথোচিৎ ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তার জন্য কৃষকদের দীর্ঘ দিনের দাবিকে সরকার পুনরায় অগ্রাহ্য করেছে। ভারতের ক্ষুদ্র চাষি ও অতিক্ষুদ্র ঋণগ্রহিতাদের ঋণের বোঝা এক ভয়ানক সমস্যা। সমস্ত ক্ষুদ্র ঋণ মকুব করার প্রয়োজন সারা দেশ জুড়েই তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে এবং বাজেট এই গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে অবহেলা করেছে।
অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের বুনিয়াদি চাহিদাকে সমাধানে এই বাজেট ব্যর্থ হয়েছে। আমরা তাই বাজেটের সম্পূর্ণ সংশোধনের দাবি করছি এবং ভারতের সমস্ত ধরনের শ্রমজীবী জনগণের কাছে প্রতিবাদে সরব হওযার আহ্বান জানাচ্ছি।
– দীপঙ্কর ভট্টাচার্য,সাধারণ সম্পাদক, সিপিআই(এমএল)