যে তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকরা আন্দোলনরত, সুপ্রিম কোর্ট সেগুলোর উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও কৃষকদের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য চার-সদস্যের একটি প্যানেল ঘোষণা করেছে।
একটি আইনকে স্থগিত বা সাময়িকভাবে মুলতবি রাখার ক্ষেত্রে, আদালতের রায়ে, আইনটি যে অসাংবিধানিক সে সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ এবং তার যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা প্রত্যাশিত। এই ধরনের পর্যবেক্ষণ ও যথেষ্ট বলিষ্ঠ যুক্তির অনুপস্থিতিতে কৃষি আইনগুলির উপর এই স্থগিতাদেশ প্রতিবাদী কৃষকদের ও ভারতের জনগণকে ভরসা যোগাতে পারছে না।
সত্যি বলতে কি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মধ্যে একটা ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট যে কৃষি আইনের উপর এই স্থগিতাদেশের নিছক একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে মাত্র; এই রায় পর্যবেক্ষণ করেছে, “আমরা যখন একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে স্তব্ধ করে দিতে পারিনা, আমরা মনে করি যে কৃষি আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে এই অসাধারণ স্থগিতাদেশটি, অন্তত এই সময়ের জন্য, এই ধরনের প্রতিবাদের উদ্দেশ্যপূরণ হিসাবে উপলব্ধ হবে এবং কৃষক সংগঠনগুলিকে তাদের সদস্যদের, নিজেদের জীবন ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষা সহ অন্যদেরও জীবন ও সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যে নিজের জীবিকায় ফিরে যাওয়ার জন্য বোঝাতে উৎসাহিত করবে।” রায়ের এই বয়ান থেকে এটা স্পষ্ট যে এই কৃষি আইনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র কৃষকদের উদ্দেশ্য পূরণের একটা “উপলব্ধি” দেওয়ার জন্য যাতে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিতে পারে। এটা সত্যিই সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটা লক্ষণীয় এবং গভীর সন্দেহজনক বিষয় যে তারা সাংবিধানিক যুক্তিতে নয়, বরং একটি রাজনৈতিক যুক্তিতে একটা রায় দিল।
প্যানেলের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচিত চার সদস্যের সকলেই হলেন সেই সব ব্যক্তি যারা প্রকাশ্যে এই কৃষি আইনগুলির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং এই প্যানেল স্পষ্টভাবেই সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এবং এমনকি আপাত-নিরপেক্ষও নয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবাদী কৃষকদের মধ্যে এই প্যানেলের কোনো গ্রহণযোগ্যতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই এবং তারা এই প্যানেলের আলোচনা প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছেন।
ভারতের প্রধান বিচারপতির, আন্দোলন থেকে মহিলাদের দূরে রাখা নিয়ে মন্তব্যও অত্যন্ত আপত্তিকর। মহিলারা তাদের নিজেদের তাগিদে, নিজেদের ইচ্ছায় প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন — কোথায় এবং কখন তাঁদের প্রতিবাদ করা উচিৎ সে সম্পর্কে কারও কিছু বলার কোন অধিকার থাকতে পারে না।
তিনটি আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে আমরা কৃষক আন্দোলনের পাশে আছি।
চাষ বাঁচাও। রেশন বাঁচাও। দেশ বাঁচাও। সংবিধান বাঁচাও। প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষক মিছিলে এগিয়ে চলুন!