“এক বারো বছরের কিশোরীর কামিজের উপর থেকে বুক টেপা আর সালওয়ার খোলার চেষ্টা করার পরে, এক ভারতীয় আদালত মাথা নেড়ে নেড়ে ভাবে, একে কি যৌন নিগ্রহ বলা যায়? বোম্বে হাইকোর্ট-এ এমনটাই ঘটেছে আর এ’খবর সংবাদপত্রে শোভা পেয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবসে। এরপর নিজের কন্যা ও আশেপাশে সমস্ত কন্যাশিশুর জন্য চিন্তিত হয়ে ওঠা ছাড়া উপায় কী?
অথচ আগেই পক্সোয় অপরাধীর শাস্তি ঘোষণা করেছিল নাগপুর কোর্ট। বস্তুত বোম্বে হাইকোর্ট নাগপুর হাইকোর্টের সেই রায়কে খারিজ করে পক্সো ছাড়া অন্যান্য ধারা বজায় রাখল। আয়রনি হল, বিচারপতি আবার এক মহিলা। তিনি যা বললেন, তার সার হল, পক্সোতে ‘টাচিং’ কথাটি লেখা আছে। স্তন, নিতম্ব, যোনি ‘টাচ’ করার কথা লেখা আছে। এবং জামা না সরালে ‘টাচ’ করা যায় না। জামার উপর থেকে টেপাটেপি তাই পক্সোর ৭ বা ৮ ধারা অনুযায়ী ‘যৌন নির্যাতন নয়’।
এটাকে আইনের ভাষায় সুচারুভাবে ‘narrowest interpretation’ বলতে হয়। মানে হল, ‘ছোঁয়াছুঁয়ির সংকীর্ণতম ব্যাখ্যা’। কিন্তু গোদা ভাষায় একে পাতি ‘মিথ্যাচার’ বলে৷ পক্সোর ৭, ৮ ধারায় কোথাও লেখা নেই, ‘স্কিন টু স্কিন কনট্যাক্ট’-কেই শুধু ‘টাচ’ বলা হবে৷ আর পক্সোর প্রাণ হল ২৯নং ধারা, যেখানে লেখাই আছে, পক্সোর ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে অপরাধী ধরেই এগোতে হবে, কারণ পক্সো শিশুদের কল্যাণের সঙ্গে জড়িত৷ এখানে শিশুর স্বার্থ সবার আগে দেখা হবে। সাধারণ যৌন হেনস্থা, নির্যাতন বা ধর্ষণের ধারাগুলি আদালতে শিশুদের বাড়তি নির্যাতনের কারণ হয়ে উঠছে বলেই পস্কো এসেছিল কিন্তু। আবারও মনে করিয়ে দিই মেয়েটির বয়স বারো। নারীরা মনে করে দেখুন নিজের কিশোর বয়স। স্কুলে যাওয়া আসার পথে ট্রেনে বাসে যারা বুক-পাছা টিপেছিল, তারা জামা সরিয়ে টেপেনি, কারণ সে অবকাশ ছিল না৷ তার মানে সেগুলো যৌন নির্যাতন ছিল না?
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বজায় আছে ৩৫৪র মতো ধোঁয়াশাযুক্ত আইন যা ‘মডেস্টি অফ উইমেন’ ধরনের প্রাগৈতিহাসিক ভাষা ব্যবহার করে। একটা বারো বছরের মেয়ে, যাকে পেয়ারার লোভ দেখিয়েই অন্তরালে যৌন উৎপীড়নের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে ‘মডেস্টি’-র কী বোঝে? সে কেন এই বার্তা পেল না একটা উচ্চ আদালত থেকে যে টেপাটেপি দূরস্থান, তার বুকে হাত দেওয়াও জামিন-অযোগ্য অপরাধ? তাহলে আমরা যারা শিশু যৌন নির্যাতন সম্পর্কে শিশুদের সচেতন করছি, তাদের আশ্বাস দিচ্ছি, ‘এমন কিছু তোমার সঙ্গে হলে দেখে নেব’, তারা কি ভুল করছি?
মোদ্দা ব্যাপার হল, পক্সো জামিন-অযোগ্য। পক্সো নির্মম৷ ৩৫৪ অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ ধারা৷ তাই অপরাধীকে বাঁচাতেই এই রায়, যা আইনের ‘স্পিরিট’-এর বিরুদ্ধে যায়। এবার তাহলে পক্সোকেও পিতৃতান্ত্রিক ছাঁচে ঢেলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল। নিজের কন্যাসন্তানের স্বার্থে এর প্রতিবাদ করা আশু দরকার।”
-- শতাব্দী দাস