প্রতিবেদন
মিড-ডে-মিল রন্ধনকর্মিদের প্রতি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সকারের বঞ্চনার জবাব চাই
dddrj

রাজ্যের প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাদ্রাসাগুলিতে দীর্ঘ ১৮ বছর মিড-ডে-মিল প্রকল্পে কর্মরত আড়াই লক্ষ রন্ধন কর্মী। করোনা মহামারী, লকডাউনের দিনগুলিতে অন্যান্য ফ্রন্টলাইন কর্মীদের মতো এই কর্মীরাও মিড-ডে-মিল বিলি করেছেন। এমনকি করোনা আক্রান্ত পরিবারের শিশুদের পরিবারে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, এমনকি মৃত্যুও ঘটেছে।

দিল্লীর বিজেপি সরকার ২০১৪ ক্ষমতায় এসে এই কর্মীদের জন্য ৫০০ টাকা ভাতা বাড়ানোর সিন্ধান্ত নেন। কিন্তু, প্রথম পাঁচ বছর ক্ষমতায় সেটা কার্যকরী করেননি। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ২০১৯ সাল থেকে গোটা মিড-ডে-মিল প্রকল্পকেই বেসরকারীকরণ ও এনজিও’দের হাতে তুলে দেবার পরিকল্পনা করে, কিছুক্ষেত্রে সফল হয়। আবার আসাম, বিহার সহ কয়েকটি রাজ্যে প্রতিরোধের ফলে পিছু হটে। একইসাথে বিজেপি সরকার এই প্রকল্পে তার বরাদ্দ ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬০ শতাংশ করে দেয়। বর্তমানে রন্ধন কর্মীদের মাথা পিছু মাসিক ১,৫০০ টাকার কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ১,০০০ টাকা।

কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, গোয়া সহ আরো কিছু রাজ্য নিজ তহবিল থেকে ২,৫০০ থেকে ৫,৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাতা দেন। যদিও এই ভাতা ১২ মাস কাজ করে ১০ মাস পেয়ে থাকেন।

২০১৮ সাল থেকে একাধিক ইউনিয়ন শ্রম সম্মেলন থেকে দিল্লির রাজপথে শ্রমিকের স্বীকৃতি, ন্যূনতম মজুরি, সামাজিক সুরক্ষার দাবি তুলে আসছেন। কিন্তু বর্তমান বিজেপি, কর্পোরেট সেবায় এতই মশগুল যে এই দরিদ্র শ্রমজীবীদের কথা তাদের কানেই পৌঁছয় না।

পশ্চিমবঙ্গের রন্ধন কর্মীরা ২০০৭ সাল থেকে তাদের দাবি নিয়ে সোচ্চার। ব্লক, পৌরসভা, পঞ্চায়েত, জেলা প্রশাসন সব জায়গায় এই দীর্ঘ বছর বিক্ষোভ, ধর্না, দাবি সনদ পেশ চলেছে। রন্ধন কর্মীদের উপর রাজনৈতিক হামলা, ছাঁটাই, সম্মান আদায় কিছুটা ক্ষেত্রে করা গেলেও মূল দাবিগুলো এখনো আদায় সম্ভব হয়নি।

২০১৯ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে এই প্রকল্প কর্মীদের আয় বাড়ানোর কিছু প্রতিশ্রুতি দেন। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের সাথে মিড-ডে-মিল প্রকল্পকে কিভাবে যুক্ত করা যায় সে পরিকল্পনা বলেন। ঐ বছর ২৯ আগস্ট রন্ধন কর্মীদের সুবিশাল সমাবেশে ও ডেপুটেশনে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী প্রতিনিধিদলকে জানান তারা ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছেন। কিন্তু,আজ অবধি কোন সাড়া নেই। উল্টে তারা বলছেন, টাকা নেই। রাজ্যের মানুষ দেখছেন ক্লাব গুলিকে ৫০,০০০ টাকা বিলি হল। অন্যান্য প্রকল্প কর্মীদের ভাতা বাড়লো, বোনাস দিল। শুধু, গ্রাম-শহরের এই দরিদ্র মহিলাদের জন্যই ভাড়ার শূন্য?

একি, অভাব, না অনিচ্ছা, না প্রতারণা? এই প্রশ্নটার জবাব চাইতেই রন্ধন কর্মীরা আবার নবান্নের অভিমুখে যাত্রা শুরু করবেন। তাই, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারী (১১ফাল্গুন) হাজার হাজার রন্ধন কর্মী কলকাতায় হাজির হবেন বঞ্চনার জবাব চাইতে। শ্রমিকের স্বীকৃতি, মজুরি বৃদ্ধি, বোনাস প্রভৃতির দাবি আদায়ে এই মহতী অভিযানে বাংলার সমস্ত শ্রমজীবী, গণতান্ত্রিক মানুষের সহযোগিতা তারা কামনা করেন।

- অজয় বসাক   

খণ্ড-28
সংখ্যা-3