বিকল্প চাকুরির দাবিতে ৫১ দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের সাথে কোনো কথা না বলে জোরপূর্বক আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়া ও সারাদিন ধরে বিক্ষোভরত শিক্ষকদের উপর নিষ্ঠুর পুলিশী দমনপীড়নের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি প্রেস বিবৃতিতে সিপিআই(এমএল) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে সম্পাদক পার্থ কর্মকার বলেন, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ থেকে টানা ৫১ দিন ধরে বিকল্প চাকুরির দাবিতে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আগরতলা সিটি সেন্টারে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসছেন। রাজ্য সরকার ও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়। তখুনি চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা গণআন্দোলনে বসতে বাধ্য হন। কিন্তু সরকার এতটাই অমানবিক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন যে, এই প্রচন্ড ঠাণ্ডা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টানা ৫১ দিনের মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেনি। সরকারের অমানবিক আচরণে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে ইতিমধ্যে ৮৪ জন শিক্ষককের বিভিন্ন কারণে মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুগুলির জন্য সরকারই প্ররোক্ষভাবে দায়ী। তাই গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষকদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। তাঁরা মশাল মিছিল থেকে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করার ঘোষণা করে। আর তাতেই সুযোগ বুঝে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দোহাই দিয়ে সরকার দমনের পথ গ্রহণ করে।
আজ সকালে ঘুম ভাঙার আগেই ১৪৪ ধারা জারি করে সিটি সেন্টার পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে তোলে। সেখান থেকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের গ্রেপ্তার করে তল্পিতল্পা সহ উৎখাত করে নিয়ে যায়। যাতে এখানে তাঁরা আবার বসতে না পারে। ফলে সারা রাজ্য থেকে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা আগরতলায় জমা হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। সরকার দিনভর নিষ্ঠুরভাবে পুলিশ দিয়ে দমনপীড়ন চালায়। আগরতলা আজ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে ৪১ জন শিক্ষক শিক্ষিকা আহত হন। পুরুষ পুলিশ দিয়ে মহিলা শিক্ষিকাদের পেটানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষকরা মুক্তি পায়নি। শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক এফআইআর নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক নেতা বিজয় কৃষ্ণ সাহাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি সরকার কর্তৃক চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের প্রতি এই অমানবিক আচরণ ও নিষ্ঠুর পুলিশী দমনপীড়নের তীব্র নিন্দা জানাই। আহত শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের জন্য দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি করছি। গ্রেপ্তার হওয়া বিজয় কৃষ্ণ সাহা সহ অন্যান্য শিক্ষকদের নিঃশর্ত মুক্তি ও সমস্ত মিথ্যা ও সাজানো মামলা প্রত্যাহার করার দাবি করছি। আমরা দাবি করছি সরকার তাঁর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এগিয়ে আসুক। চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য সরকার বিকল্প স্থায়ী চাকুরির ব্যবস্থা করুক। ১৩ হাজার শূণ্যপদ পুনরায় সৃষ্টি করে তাঁদের বিকল্প চাকুরির ব্যবস্থা করার জন্য সরকার আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। সরকার আগুন নিয়ে খেলা করা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা অবিলম্বে বন্ধ করুক। প্রজাতন্ত্রের ৭২ বছরে দেশে ও রাজ্যে সংবিধান, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের এই গভীর সংকটে রাজ্যের সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। আর একজন শিক্ষকেরও যাতে মৃত্যু না হয় এবং চাকুরিচ্যুত ও বিপর্যস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় সরকারের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে রাজ্যের সব মানুষকে প্রতিবাদে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।