সম্প্রতি ঋণগ্রস্ত নাগরিকদের চাপে মাইক্রো ফিন্যান্স কোম্পানির জুলুম রুখতে আসাম সরকার রাজ্য বিধানসভায় পাস করিয়েছে মাইক্রো ফিন্যান্স নিয়ন্ত্রণ আইন। এই ধরনের আইন ইতিপূর্বে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক সরকার তৈরি করেছে। ঋণ পরিশোধের প্রশ্নে যাতে জুলুমবাজি বন্ধ হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একই দাবি রেখেছেন ঋণ জর্জরিত আন্দোলনকারীরা।
ঋণ মুক্তি কমিটির রাজ্য কনভেনশন থেকে ৮ জানুয়ারী রাজ্যব্যাপী ব্লকে ব্লকে ডেপুটেশন, অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচী সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দাবি ছিল – (১) মাইক্রোফিনান্স সংস্থার এজেন্টদের জুলুম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। মাইক্রোফিনান্স সংস্থার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে। (২) গরিব জনগণের স্বনির্ভর গোষ্ঠী সহ সমস্ত ধরনের ঋণ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মুকুব করতে হবে। (৩) ২ বছর ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত রাখতে হবে। এছাড়া, সিদ্ধান্ত ছিল, নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থন ও সংহতিতে কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল, ২০২০ বাতিলের দাবি তোলা হবে। সেই অনুযায়ী পূর্ব বর্ধমান জেলার পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়। দীর্ঘ সময় বিক্ষোভ অবস্থানের পর বিডিওর কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হল। এবং মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিডিও মারফত একটি স্মারক পত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
রায়না ২নং ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান সংগঠিত করা হল। এখানে মূলত ঋণ মুক্তি কমিটির উদ্যোগে ঋণগ্রস্ত মহিলাদের নিয়ে কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছিল।
জামালপুর ব্লকে বিডিও এবং থানা থেকে অনুমতি না দেওয়ার ফলে ব্লকের গ্রামাঞ্চলে ৮ জানুয়ারী ও ৯ জানুয়ারী দুই দিন পর পর দুই দিকে মিছিল করা হয়। এখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঋণ মুক্তি কমিটির ব্লক সভাপতি অর্চনা মল।
৭ জানুয়ারী কালনা ২নং ব্লকের অকালপোষ গ্রাম পঞ্চায়েতের আগ্রাদহ গ্রামে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির উদ্যোগে সাবিত্রী বাই ফুলে ও ফাতেমা সেখ-এর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সাথে সাথে নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লীতে আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানান হয়। এবং উত্তর প্রদেশ সহ সমস্ত জায়গার নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। এই কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেন জেলা সম্পাদিকা কমরেড সুমি মজুমদার।
১০ জানুয়ারী মেমারী ১নং ব্লকের নিমোতে জেলার ৭০ জন কর্মীর উপস্থিতিতে প্রয়াত জেলা কমিটির সদস্য কমরেড সুনীল কুমার বসুর স্মরণ সভা করা হল। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পলিটবুরো সদস্য কমরেড কার্তিক পাল। প্রথমে মাল্যদান ও এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। তারপর রায়না থানার ছোট বৈনান গ্রামের বর্ষীয়ান পার্টি সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ কমরেড বিদ্যুৎ সিনহা কমরেড সুনীল বসু স্মরণে বক্তব্য রাখেন। জেলা সম্পাদক কমরেড সলিল দত্ত ও কমরেড কার্তিক পাল সুনীল বসুর রাজনৈতিক জীবন ও পার্টি ও জনগণের জন্য তাঁর অবদানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং কমরেড সুনীল বসুর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানান। কমরেড সুনীল কুমার বসু লাল সেলাম।
জেলা কর্মী বৈঠক থেকে থেকে ধর্মতলার ‘অন্নদাতাদের সংহতিতে বাংলা” কর্মসূচীতে যোগদান, ১৮ জানুয়ারী কালনা ও জামালপুর ব্লকে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে মহিলা সংসদ ও ২৬ জানুয়ারী বিধানসভার এলাকায় ট্রাক্টর নিয়ে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত হয়। বিধানসভা এলাকার গ্রামে বৈঠক ও জনগণের কাছে যাওয়ার কর্মসূচী নেওয়া হয়। জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহে বর্ধমান শহরে বিজেপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে নিয়ে কনভেনশন সংগঠিত করা হবে।
উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাটে এই কর্মসূচী জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। অবস্থানকারীরা এখানে ঋণ মুক্তি কমিটির রাজ্য স্তরের নেতা দেবব্রত বিশ্বাসের নেতৃত্বে বসিরহাট ১ বিডিও মারফত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি সনদ পাঠান। হুগলির ধনেখালি, পোলবা ও পান্ডুয়া ব্লকে সংশ্লিষ্ট বিডিওদের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবিসনদ পাঠানো হয়। ধনেখালির মদনমোহনতলা ও পান্ডুয়ার তিন্না মোড়ে অবস্থান কর্মসূচী চলে সারাদিন। হাওড়ার আমতা ১ নং ব্লকে ঋণ মুক্তি কমিটির সংগঠক অঞ্জনা মন্ডল অবস্থান কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দান করেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে প্রগতিশীল মহিলা সমিতি ও আয়ারলা যৌথভাবে অবস্থান কর্মসূচী সংগঠিত করে। সম্প্রতি নদীয়ার চাকদহে গড়ে উঠেছে ঋণ মুক্তির আন্দোলন। সেখানে ওইদিন বন্ধন ব্যাঙ্কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় এবং বিডিওকে ডেপুটেশন দিয়ে ঋণগ্রস্ত মহিলাদের দাবিগুলি সম্পর্কে অবহিত করেন আন্দোলনকারীরা।