যোগীরাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে গণধর্ষণ ও বর্বরতম নৃশংসতায় হত্যা করা হল
hgh

হাথরাসের ক্ষত এখনও দগদগে। তিন মাসের মধ্যেই, উত্তর প্রদেশের বদায়ুঁ জেলার উঘৈতি গ্রামে মাঝবয়সী এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে গত রবিবার সন্ধ্যায় নারকীয় হিংস্রতায় গণধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। মহিলা রোজকার মতো গ্রামের মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে আর ফেরেননি। পরে বাড়ির কাছে তার রক্তাক্ত সংজ্ঞাহীন দেহ মেল। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। পরিবারের অভিযোগ, উঘৈতি থানার স্টেশন অফিসার এই ঘটনায় কোনো গুরুত্ব দেননি এবং চরম পুলিশি গাফিলতিতে মৃত্যুর ১৮ ঘন্টা পর দেহ ময়নাতদন্তে যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে, গণধর্ষণের পর যৌনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে নির্যাতন করায় অবিরাম রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু ঘটেছে। শুধু তাই-ই নয়, বুকে ভারি পাথরের আঘাতে তার পাঁজরের হাড় ভেঙেছে। এক পায়ের হাড়ও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় মন্দিরের পুরোহিত ও তার দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার মামলা দায়ের হয়েছে। দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হলেও মূল অভিযুক্ত পুরোহিত বাবা মোহান্ত সত্যনারায়ণ এখনও পলাতক। কর্তব্যে গাফিলতির জন্য স্টেশন অফিসার রাবেন্দ্রপ্রতাপ সিং-কে সাসপেণ্ড করা হয়েছে।

উত্তর প্রদেশ সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি (সাভাপ্রমস)-এর রাজ্য সভানেত্রী কৃষ্ণা অধিকারী এবং রাজ্য সম্পাদিকা কুসুম বর্মার এক যৌথ বিবৃতিতে এই মর্মন্তুদ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে পরিবারকে সমবেদনা জানানো হয়েছে ও পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে কঠিনতম শাস্তি দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বার বার এইসব ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতিকে দায়ী করে যোগী সরকারের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আগামী ৯ জানুয়ারী রাজ্য জুড়ে উপরি উক্ত দাবিতে সর্বত্র বিক্ষোভ প্রদর্শনের আহ্বান রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘সন্ন্যাসী’ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, যিনি হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তর ও ‘সম্ভ্রম’ রক্ষার্থে তথাকথিত লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ ধর্মান্তর প্রতিরোধ আইন’ এনে শুধু ক্ষান্ত হননি, মুসলিম যুবকদের ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’-এর হুমকিও দিয়ে রেখেছেন, তার প্রশাসন একের পর এক উচ্চ বর্ণের হিন্দুর দ্বারা দলিত কন্যা, দরিদ্র মহিলাদের গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অপরাধীদের আড়াল করে চলেছে। কেন যে তিনি বলেন ‘শূদ্র নারী অচ্ছুত, কিন্তু তার যোনি পবিত্র’ এবং ‘মুসলিম মেয়েদের কবর থেকে তুলে ধর্ষণ করা উচিত’ — তা অত্যন্ত পরিষ্কার। তিনি বর্ণবিদ্বেষী তো বটেই, তিনি আদ্যন্ত নারী বিদ্বেষী; তার রাজ্যের মাথায় তাই নারী নির্যাতনে একনম্বরের শিরোপা। তিনিই হলেন বিজেপি তথা আরএসএস-এর ‘মডেল’ মুখ্যমন্ত্রী!

অবৈধ ধর্মান্তর প্রতিরোধ আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং এটির মাধ্যমে যে উত্তর প্রদেশ সরকার ঘৃণা, হিংসা ও গণ-উন্মাদনা ছড়াচ্ছে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনজীবী বিশাল ঠাকরে এবং সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ সুপ্রিম কোর্টে আইনটি স্থগিত করার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এস এ বোবড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আপাতত সেই আবেদন রাখেনি তবে উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড সরকারকে এবং কেন্দ্রকেও এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানানোর জন্য নোটিস ইস্যু করেছে। চার সপ্তাহ পর ফের শুনানি। তারপরই বোঝা যাবে সংবিধান-বিরোধী এই আইন আইনি পথে আদৌ বাতিল হবে কি না, রাস্তার আন্দোলন অবশ্য্য চলবে।

- জয়ন্তী দাশগুপ্ত 

খণ্ড-28
সংখ্যা-1