কোলকাতা, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১: তিনটি কৃষি আইন বাতিল এবং নারী কৃষিজীবীদের জমি, খাদ্য এবং মজুরির অধিকারকে সুনিশ্চিত করার দাবিতে ১৮ জানুয়ারী কোলকাতায় ধর্মতলার ওআই চ্যানেলে “অন্নদাতাদের সঙ্গে বাংলা” লাগাতার ধর্না মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল মহিলা কৃষক-মজুর বিধানসভা। ১৮ জানুয়ারী মহিলা কিষাণ দিবস উপলক্ষ্যে অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি ও রাজ্যের বিভিন্ন নারী/নারীবাদী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে নারী কৃষিজীবীদের এই বিশাল জমায়েত হয়। উপস্তিত ছিলেন প্রায় ৪০টি কৃষক, মজুর ও নারী/নারীবাদী সংগঠনের নেতৃত্বও।
নেত্রী বক্তারা বলেন: প্রাগৈতিহাসিক যুগে নারীরাই প্রথম কৃষিকাজ শুরু করেছিলেন। নারীর হাতে বোনা বীজ দিয়েই প্রথম চাষাবাদের প্রচলন হয়েছে। এবং বর্তমানেও কৃষিক্ষেত্রে জমিতে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ রোপন, ফসল ফলানো থেকে শুরু করে ফসল কাটার পরে সেটিকে প্রক্রিয়াজাত করে ঘরে তোলার ক্ষেত্রে নারীরাই প্রধান ভুমিকায় থাকে। মেয়েরা ক্ষেতে খামারে নিরবে কাজ করে যায়, কৃষি-বন-মৎস্য চাষে আমাদের ব্যাপক মাত্রায় অংশগ্রহণ থাকলেও আমাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। আমরা অদৃশ্য হয়েই থেকে যাই। চাষির পরিবারের একজন মহিলা পরিবারকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিদিন তথাকথিত বাড়ির কাজে ৮ থেকে ১৬ ঘন্টা ব্যয় করে। বাড়ির পুরুষেরা যখন মজুরি উপার্জন করে তখন তাদের ‘বাড়ির কাজ’ করতে হয়। যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি সংগ্রহ, ঘর রক্ষণাবেক্ষণ, মাছ এবং বুনো ফল সংগ্রহ করা, শিকড় এবং পাতা সংগ্রহ করা, ছাগল, হাঁস, গরু এবং মুরগী পালন, ধান সিদ্ধ প্রভৃতি। এরপরেও জমিতে আগাছা পরিষ্কার থেকে জমির যাবতীয় কাজ মহিলাদের প্রায় বিনা মূল্যে করতে হয়। এমনকি মেয়েরা যখন অন্য লোকের জমিতে ক্ষেতে মজুরের কাজ করেন তখন পুরুষদের চেয়ে বেশি পরিশ্রমী হলেও তাদের অনেক কম মজুরি দেওয়া হয়। জীবন-জীবিকা এবং জমির জন্য সব লড়াইয়ে সর্বদা মেয়েরা সামনের সারিতে থেকেছি। লড়াইয়ের ময়দানে তাদের বিশাল অবদান থাকা সত্ত্বেও কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার মতো সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দিল্লির কৃষক আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহনকে অপমান করে বললেন “কেন নারী এবং প্রবীণদের এই প্রতিবাদে রাখা হচ্ছে?” বয়স্ক ও নারীদের ‘ঘরে ফেরত পাঠানোর’ কথা উল্লেখ করে বললেন তিনি ভবিষ্যতে এই ব্যাপারে অর্ডার পাশ করতে পারেন। এই ঘোষণা মহিলাদের সাংবিধানিক অধিকারের উপর আক্রমণ। নারীরা স্বতস্ফুর্ত ভাবেই এই আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, নতুন কৃষি আইনগুলি যে নারী কৃষকদের অধিকার ও অস্তিত্বকে আরও বহুগুণ বিপণ্ন করে তুলবে, তা বুঝেই তাঁরা আন্দোলনে আছেন। প্রধান বিচারপতির এই কথা নারীদের প্রান্তিক এবং অদৃশ্য করে রাখার এক সচেতন প্রয়াস।
মহিলা কৃষক-মজুর বিধানসভা নিম্নলিখিত রেজোলিউশনগুলি বিস্তারে আলোচনার পর সর্বসম্মতিতে পাস করেন:
রেজোলিউশন-১: আমরা প্রধান বিচারপতির এই ঘোষণাকে ধিক্কার জানাই। আমাদের দাবি প্রধান বিচারপতিকে এই কথা বলার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।
রেজোলিউশন-২: কৃষিতে নারীদেরও কৃষক বলে স্বীকৃতি দিতে হবে। কৃষিতে নারীদের শ্রমের সঠিক মুল্য দিতে হবে। পারিবারিক শ্রমকে কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, যা আজও অদৃশ্য বা ‘নো ওয়ার্ক’ বলে গণ্য করা হয়। আমরা আরও দাবি করি যে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সমান কাজের জন্য ন্যায্য ও সমান মজুরি দেওয়া হোক।
রেজোলিউশন-৩: তিনটি কৃষিআইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। আমরা দাবি জানাই সার্বজনীন রেশন বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। যাতে প্রত্যেকে খাদ্যশস্য, ডাল, তেল, ডিম, আলু এবং অন্যান্য সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস পায়।
রেজোলিউশন-৪: কৃষি আইনগুলির বাতিল করে এমন আইন পাস করুন যা মহিলাদের সমস্ত কৃষি সম্পত্তির যৌথ মালিক করে তোলে। জমিতে মহিলাদের অধিকার দেওয়ার জন্য এফআরএ (FRA) বাস্তবায়ন করুন।
রেজোলিউশন-৫: আমরা কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে আমাদের সকল উৎপাদনে এমএসপি এবং গ্যারান্টেড বিকেন্দ্রিত সংগ্রহ কেন্দ্র চাই।
রেজোলিউশন-৬: নিশ্চিত করুন যে এমএসপি গণনা করার সময় কৃষিতে সমস্ত শ্রমিকের শ্রমের যথাযথ মূল্য যোগ করা হবে। সমস্ত কৃষিশ্রমিককে উপযুক্ত মজুরি দেওয়া হবে তা নিশ্চিত করতে হবে।
রেজোলিউশন-৭: এই আইনটি বাতিল করুন এবং আমাদের গ্রামেই আরও বেশি করে কাজের ব্যবস্থা করুন যাতে বাইরে কাজের সন্ধানে না যেতে হয়।
রেজোলিউশন-৮: আমরা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং মহিলাদের দেওয়া সমস্ত লোন মকুব করার দাবি করছি। লোন দেবার সময় আমাদের কাছ থেকে কোনরকম কাট মানি বা কমিশন নেওয়া চলবে না। সরসারি নিয়ম মেনে লোন দিতে হবে।
ফাইনাল রেজোলিউশন: তিনটি কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। সমস্ত ফসলের জন্য উৎপাদন খরচের অন্তত ১.৫ গুণ এমএসপি ঘোষণা করতে হবে। সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিতে বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে ফসলের বিকেন্দ্রীভূত বিক্রয়ের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এটি কেন্দ্র সরকার পরিচালিত হতে হবে।সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর প্রায় ৫০০ মহিলা ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ মশাল মিছিল করেন।
- অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি (AIKSCC) পশ্চিমবঙ্গ শাখা এবং
বিভিন্ন নারী/নারীবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে জারি করা বিবৃতি।
দিল্লির সিংঘু, টিকরি বর্ডারে গড়ে উঠেছে কৃষকদের কমিউন। যেখানে পুরুষেরা শিখে নিয়েছে কি করে রুটি বানাতে হয়, ছোট শিশুরা হাতে হাতে কাজ করছে মা/বাবার সাথে। ভগৎ সিং-এর নামে লাইব্রেরী তৈরি হয়েছে, সেখানে আন্দোলনের ফাঁকে চলছে নানা বই পড়া। দিল্লিতে আন্দোলনে আসার আগে পাঞ্জাব হরিয়ানার মহিলারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে রসদ সংগ্রহ করেছেন। পাঞ্জাব-হরিয়ানায় বিয়েবাড়ির সঙ্গীত হয়ে উঠেছে মোদি-শাহ বিরোধী গান। সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে আসা ১৫০-২০০ টাকায় ক্ষেত মজুরি করা আদিবাসী মেয়ে সবিতা গুঞ্জল মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লি ৭৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দিতে মোদী আম্বানির বিরুদ্ধে গান বেঁধেছে। দিল্লির বর্ডারে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসবির কাউর সহ অন্যান্য কৃষক নেত্রী। এরা সবাই এক নয়া ইতিহাস রচনা করছেন।
অথচ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দিল্লির কৃষক আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণকে অপমান করে বললেন “কেন নারী এবং প্রবীণদের এই প্রতিবাদে রাখা হচ্ছে?” বয়স্ক ও নারীদের ‘ঘরে ফেরত পাঠানোর’ কথাও তিনি উল্লেখ করেন। পরে কৃষক আন্দোলনের মামলার শুনানির সময়ে আইনজীবী এপি সিং মহিলা এবং প্রবীণদের সরিয়ে নেবার কথা বললে বোবদে এপি সিং-এর বক্তব্যকে তারিফ করে বলেন যে তিনি দেখবেন যাতে এই অর্ডার পাশ করানো যায়। এই এপি সিং হলেন সেই কুখ্যাত ব্যক্তি যিনি ‘নির্ভয়া মামলা’য় ধর্ষকদের পক্ষের উকিল ছিলেন, যিনি বারবার নির্ভয়ার চরিত্রকে দায়ি করে ধর্ষকদের নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে গেছেন। বিজেপি শাসিত মনুবাদী ব্যবস্থায় ক্ষমতায় থাকা পুরুষেরা এক সুরে কথা বলে। গত ১৪ জানুয়ারী মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান বলেছেন নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই মেয়েদের উচিত বাইরে যাবার আগে নিজেদের নাম থানায় রেজিস্টার করে যাওয়া যাতে পুলিশ নজর রাখতে পারে তার গতিবিধির উপর। এই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’! মেয়েদের পায়ে বেড়ি পরানোর গৈরিক জমানা!
কিন্তু প্রধান বিচারপতির এই ‘স্বনিযুক্ত অভিভাবকত্ব’ দেশের কৃষাণীরা খারিজ করে দিয়েছেন। মেয়েদের নিজেদের ইচ্ছেমতো জীবনযাপনের সম্পূর্ণ অধিকার আছে। মেয়েদের আন্দোলন থেকে সরে যেতে বলা আসলে মহিলাদের সাংবিধানিক অধিকারের উপর আক্রমণ। কৃষি আইন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কৃষিজীবীদের জন্য ক্ষতিকর এটা বুঝেই নারীরা স্বতস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন, এগিয়ে নিয়ে গেছেন। প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশ নারীদের শ্রমকে প্রান্তিক এবং অদৃশ্য করে রাখারই এক সচেতন প্রয়াস।
প্রাচীন যুগে নারীরাই প্রথম কৃষিকাজ শুরু করেছিল। বর্তমানেও কৃষিক্ষেত্রে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল কাটার পরে সেটিকে প্রক্রিয়াজাত করে ঘরে তোলার প্রতিটি পদক্ষেপে নারীরাই প্রধান ভুমিকায় থাকেন। ভারবর্ষের জমি-জীবিকার লড়াইয়ের দিকে তাকালে দেখতে পাবো – মেয়েরা সর্বদা সামনের সারিতে থেকেছে। তেভাগা, তেলেঙ্গনা, নকশালবাড়ির লড়াইয়ে মেয়েদের অবিস্মরণীয় আত্মবলিদান সে কথাই বলে। সেই সব আন্দোলনে কৃষক মহিলারাই গ্রামে গ্রামে প্রতিরোধ গড়ে তুলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। মনে করুন সিঙ্গুর–নন্দীগ্রামের মেয়েদের কথা যারা শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে পুরুষদের আগে এসে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০১৫ সালে মুন্নারে চা বাগানের মহিলা শ্রমিকেরা একাই লড়াই করে মালিকশ্রেণীকে বাধ্য করেছিলো ৮.৩৩ শতাংশ হারে বোনাস এবং ১১.৬৭ শতাংশ এককালীন বাড়তি ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করতে। এনআরসি, সিএএ বিরোধী আন্দোলনে মহিলারাই ফ্যাসিস্ত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কৃষিকাজে কৃষাণীদের অবদানকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৮ জানুয়ারী মহিলা কিষাণ দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দিল্লির আন্দোলনকারীরা। ঐ দিন দিল্লির সিংঘু , টিকরি, গাজিপুর বর্ডার সহ সারা দেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গেও পালিত হল মহিলা কিষাণ দিবস। এই দিন মহিলাদের সংগঠিত প্রতিবাদ আরেকবার প্রমাণ করলো মনুবাদী পিতৃতান্ত্রিক শাসকরা যতই মেয়েদের ঘরে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করুক মেয়েরা সেই শিকল ভেঙ্গে বারবার বেরিয়ে আসবে।
দিল্লিতে চলমান কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে এআইকেএসসিসি সংগঠনের উদ্যোগে কলকাতার ধর্মতলায় ওয়াই চ্যানেলে ‘অন্নদাতাদের সংহতিতে বাংলা’ – এই ব্যানারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী চলেছে। সেই ধর্ণামঞ্চেই এআইকেএসসিসি, আইপোয়া, শ্রমজীবী মহিলা সমিতি, এআইআরডব্লিউও, এমএসএস, জয় কিষাণ আন্দোলন – সহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল ‘মহিলা কৃষক–মজুর বিধানসভা’। সামিল হয়েছিলেন বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কৃষক ও কৃষিমজুর মহিলারা। কৃষি আইন বাতিল, মহিলাদের কৃষক হিসাবে স্বীকৃতি, কৃষিজীবী মহিলাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং সম মজুরি, জমির যৌথ মালিকানা, ঋণ মুক্তি, সমস্ত ফসলের জন্য উৎপাদন খরচের অন্তত ১.৫ গুণ এমএসপি (ন্যূনতম সহায়ক মূল্য) ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে দশটি প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।
বিধানসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে মঞ্চে স্পিকারের দায়িত্বে ছিলেন সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী দত্ত। ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্বে ছিলেন জয় কিষাণ সংগঠনের রত্না পাল, এআইআরডব্লিউও-র শিখা সেন রায় এবং পশ্চিমবঙ্গ শ্রমজীবী মহিলা সমিতির অমৃতা দে।
প্রস্তাবনার বিষয়ে বিভিন্ন সংগঠন থেকে মহিলারা বক্তব্য রাখেন। শ্রমজীবী মহিলা সমিতির নমিতা হালদার বলেন “আমরা মেয়েরা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি, ক্ষেত মজুরি করি, এই আইন এলে জমি পুঁজিপতিদের হাতে চলে যাবে। চুক্তি চাষ হবে। ফলে আমরা কাজ হারাবো, কাজের ন্যায্য দাম পাবো না। দঃ ২৪ পরগণার গ্রামে একটি কোম্পানি মেয়েদের বাধ্য করছে ফুল চাষ করতে, কিন্তু ফুল চাষ করে লাভ হয় না। ধান, কড়াই, শস্য চাষে কিছুটা লাভ হয়। তাই আমরা মনে করি এই আইন এলে মেয়েদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। কারণ ছেলেরা কাজে বাইরে চলে গেলে আমরাই জমি লিজ নিয়ে চাষ করি।” ভাঙড় থেকে আসা জাহানারা বিবি বলেন, “যে সব মহিলাদের স্বামী ছেড়ে যায় বা মারা যায় তারা অনেকেই দিন মজুরি করে সংসার চালায়। আমাদের কাজ ঠিক মতো হয় না, এই আইন এলে কোল্ড স্টোরেজে শস্য মজুত রেখে দাম বাড়িয়ে দেবে। আমরা গরিব মহিলারা তখন কি করে খাবো?”
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে রাজ্য নেত্রী কাজল দত্ত এবং মিড ডে মিল কর্মী অঞ্জনা মন্ডল বক্তব্য রাখেন। কাজল দত্ত বলেন মহিলাদের শ্রমকে সবসময় অদৃশ্য করে রাখা হয়, মহিলাদের ‘কৃষকের’ মর্যাদা দেওয়া হয় না। আমাদের লড়াই করে সেই অধিকার ছিনিয়ে নিতে হবে। অঞ্জনা মন্ডল বলেন কোভিড মহামারীর জন্য লকডাউনের সময় মেয়েরা কাজ হারিয়েছেন, জমির ফসল বিক্রি হয়নি, তাই যে মেয়েরা লোন নিয়েছিলেন তাদের ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা নেই। সেই জন্য সরকারের সেই ঋণ মকুব করে দেওয়া উচিত।
এছাড়াও সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, নিখিল বঙ্গ মহিলা সংঘ, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির থেকে বক্তব্য রাখেন রাজ্য মহিলা নেতৃত্ব।
সুন্দরবন থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা মহারানী সর্দার ও মায়া সর্দার গানে গানে সরকারের নানা নির্যাতন এবং শোষণে গরিব মানুষের দুর্দাশার কথা ফুটিয়ে তোলেন।
প্রস্তাবনা পেশ শেষ হলে সমাবেশে উপস্থিত মহিলারা হাত তুলে এবং করতালিতে সমর্থন জানিয়ে সেটি পাশ করেন। মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয় এই প্রস্তাবনার কপি দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। সভা শেষে মহিলাদের এক মশাল মিছিল ধর্মতলা থেকে মৌলালী আসে। জ্বলন্ত মশাল হাতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত মহিলারা বুঝিয়ে দিলেন কৃষিতে, শ্রমে, আন্দোলনে মহিলারা ছিলেন, আছেন, থাকবেন।
– মিতালি বিশ্বাস