অধ্যাপক সুধীর চক্রবর্তী স্মরণে
sud

চলে গেলেন অধ্যাপক লেখক সুধীর চক্রবর্তী। বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতি জগৎ অনেকখানি রিক্ত হল তাঁর প্রয়াণে। বাংলা গান নিয়ে, বিশেষত বাউল ফকিরদের নিয়ে তাঁর কাজ আমাদের মনন জগৎকে ঋদ্ধ করেছে প্রবলভাবে। তাঁর লেখা ‘বাউল ফকির কথা’ বইটি বাংলা সাহিত্যের এক চিরন্তন ক্লাসিকে পরিণত হয়েছে।

বাংলা গান নিয়ে সুধীর চক্রবর্তী অনেক বই লিখেছেন। সেগুলির মধ্যে আছে – সাহেবধনী সম্প্রদায় ও তাদের গান, বলাহারি সম্প্রদায় ও তাদের গানে পশ্চিমবঙ্গের মেলামহোৎসব, লালন, ব্রাত্য লোকায়ত লালন, গানে গানে গাওয়া, গানের লীলার সেই কিনারে, গান হতে গানে, বাংলা গানের আলোকপর্ব, বাংলা দেহতত্বের গান, লালন সাঁই কুবির গোসাই ও তাদের ১০০ গানা ইত্যাদি।

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, তাঁর গান নিয়ে লিখেছেন নির্জন এককের গান রবীন্দ্রসঙ্গীত, গীতাঞ্জলীঃ সুর ও বাণী, রবিকররেখা প্রভৃতি। সত্যজিৎ ও সিনেমার গান নিয়ে লিখেছেন বাংলা ফিল্মের গান ও সত্যজিৎ রায়।

সুধীর চক্রবর্তীর পৈতৃক ভিটে নদীয়া। শৈশব কৈশোর হাওড়ার শিবপুরে কাটলেও নিজেকে তিনি ‘কৃষ্ণনাগরিক’ বলতেই ভালোবাসতেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি পিএইচডি করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন কৃষ্ণনগর সরকারী মহাবিদ্যালয়ে।

তাঁর একটি বিশিষ্ট কীর্তি ধ্রুবপদ পত্রিকার সম্পাদনা। এই পত্রিকাটির প্রতিটি সংখ্যাই মননশীল পাঠকের কালেক্টরস আইটেম হয়ে উঠতে পেরেছিল। বুদ্ধিজীবীর নোটবই, নারীবিশ্ব, যৌনতা ও বাঙালি সংস্কৃতি, রবীন্দ্রনাথ বা বাংলা গান নিয়ে ধ্রুবপদের প্রকাশিত সংখ্যাগুলি অত্যন্ত জনপ্রিতার জন্য সেগুলিকে আলাদা বই হিসেবে প্রকাশ করতে হয় পাঠকদের তাগাদায়। যে কোনও পত্রিকা সম্পাদকের কাছেই যা অত্যন্ত আনন্দের।

মননশীল সাংস্কৃতিক গবেষণার জন্য তিনি আনন্দ ও সাহিত্য আকাদেমীর মতো বিশিষ্ট পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন, তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার বোধহয় মননশীল বাঙালি পাঠকের তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

সুধীর চক্রবর্তী চলে গেলেন। থেকে গেল তাঁর সারস্বত সাধনার ভাণ্ডার।

- সৌভিক ঘোষাল    

খণ্ড-27
সংখ্যা-45