প্রায় গোটা বছর করোনার বিরুদ্ধে প্রাণপাত সার্ভিস দিয়ে নার্সরা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক থেকে যে দারুণ গিফট পেতে চলেছে তা হলো “ন্যাশনাল নার্সিং অ্যাণ্ড মিডওয়াইফারি কমিশন (NNMC) বিল, ২০২০”। ৭৩ বছরের পুরনো ‘ইণ্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিল (INC) অ্যাক্ট’ সরিয়ে এই নতুন আইন আসতে চলেছে। নার্সদের সংগঠন এই বিলের বিরোধিতা করে জানিয়েছে যে নতুন আইন নার্সিং এর স্বায়ত্বতা কেড়ে নেবে, বহু দিনের সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত নার্সিং ডিরেক্টরেট গুরুত্বহীন হয়ে যাবে এবং নার্সিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সমস্ত কাজকর্ম ডিরেক্টর জেনেরাল অব হেলথ সার্ভিস দপ্তর দ্বারা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে।
নতুন আইনে বলা আছে কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে নার্সিং শিক্ষা, অনুশীলন ও প্রশাসন চলবে। সেখানে কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবে না। রাজ্যগুলি থেকে নার্স-প্রতিনিধিও থাকবে না। কেবল সরকার মনোনীত ব্যক্তিরা (নার্সিং এবং অন্যান্য) এই বোর্ডগুলোর সদস্য হবেন। বহু কষ্টে অর্জিত স্বশাসন (অটোনমি) অবলুপ্ত হবে। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল যা ভবিষতে নার্সিং-এর সবকিছু নির্ধারণ করবে তা মূল পক্ষ অর্থাৎ নার্সদের সাথে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি পাস করানো হচ্ছে। নার্সিং জগত নার্সরা সবথেকে ভাল বুঝবেন ও চালাতে পারবেন। প্রস্তাবিত অ্যাডভাইসারি কমিটিতে নার্সের থেকে অন্য সদস্য বেশি রাখা এবং সংখ্যাধিক্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া একেবারেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। এই প্রক্রিয়ায় নার্সিং পেশা তার গুরুত্ব হারাবে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় তার প্রতিফলন অনিবার্য। কোভিড মোকাবিলার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে কী ধরনের ট্রেনিং বা অনুশীলন প্রয়োজন সে বিষয়েও সম্মুখ সমরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নার্সিং কর্মীদের যৌথ অভিমতই সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। সামনের সারির কর্মী হিসেবে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে নার্সদের ‘সেরাটা’ দেবার চাপ থাকেই, অর্জন করতে হয় আরো ভালো করে কাজ করার মানবিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী হস্তক্ষেপ নয়, দরকার পেশাগত নেতৃত্বকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া।
নার্সিং পেশা একটা অত্যন্ত মর্যাদার পেশা এবং এর সাথে জড়িত আছে সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা। আলোচ্য ক্ষেত্রে INC’র মধ্যে যে যে ত্রুটি আছে বা যদি দুর্নীতির অভিযোগ থেকে থাকে তা কি বিদ্যমান আইন দিয়ে শোধরানো যায়! অথবা, নতুন আইনটি নার্সিংয়ের উন্নতির জন্য যা করবে বলে দাবি করা হচ্ছে সেগুলো INC’র গণতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমেই তো বলবত করা যেত! স্বাধীন ভারতে গড়ে ওঠা INC’র ৭৩ বছরের নিজস্ব পরিচিতি, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, অথরিটি, সম্পদ, কাজের পরিধি, গবেষণা, সর্বোপরি সব স্বাধিকার-স্বশাসন একটা বিল এনে তড়িঘড়ি সরকারের কুক্ষিগত করার প্রস্তাব মেনে নেব কোন যুক্তিতে? ভারতবর্ষের তিরিশ লক্ষাধিক নার্সদের পক্ষেও এই পরিবর্তন মেনে নেওয়া সহজ নয়।
(সুব্রতা সরকারের লেখা থেকে সংক্ষেপে)