বিবৃতি
বিহার নির্বাচনের বার্তা : বামপন্থী আন্দোলন গণতন্ত্র রক্ষার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কাজ করবে
rar

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলফল প্রকাশিত হওয়ার পর সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য একটি ভিডিও বার্তায় বাংলায় এই বার্তাটি দেন :

করোনাকালের মতো একটা কঠিন সময়ে এবং বিহারের মত একটা সংকটগ্রস্ত রাজ্যে বিপন্ন মানুষ কীভাবে রুখে দাঁড়াতে পারে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রশ্নগুলো কীভাবে একটা নির্বাচনে অ্যাজেণ্ডা হয়ে উঠতে পারে সেটা বিহারের নির্বাচন এবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বিহারের নির্বাচন বস্তুত একটা গণ আন্দোলন হয়ে উঠেছিল। একটা যুবশক্তির আন্দোলন এবং পরিযায়ি শ্রমিকদের আন্দোলন, এবং সেই আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল বলেই বামপন্থীদের ফলাফলটা তুলনামূলকভাবে বিহারে ভালো। কারণ লকডাউনের সময় মানুষের অভিজ্ঞতা হল, কোনও সরকার মানুষের পাশে ছিল না, সেখানে বামপন্থী কর্মীবাহিনীই ছিল, তাঁরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং সেটা বামপন্থার যে ঐতিহ্য — দীর্ঘদিন ধরে — মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার, থেকে রাজনীতি করার, সেটা আবার মানুষ দেখলেন।

বিহারের নির্বাচন এটাও দেখালো যে আজকের এই যে বিজেপির দাপট, যে বিজেপি মানেই সে নির্বাচনে অপরাজেয়, এবং কেন্দ্রের সরকার এবং বিভিন্নভাবে যে পুরো ভারতবর্ষের যে পলিটিকাল সিস্টেম – সেখানে আর কোনও গণতন্ত্রের জন্য জায়গা নেই, সাধারণ মানুষের জন্য আর কোনও জায়গা নেই। এই যে একটা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে – সেখানে এখনও মানুষের মূল্য আছে এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়া যায়, সেই লড়াই করে উঠে দাঁড়ানো যায়, বিহার সেটা দেখিয়ে দিল। অবশ্যই শেষরক্ষা হয়নি, সরকারটা বদলে যাওয়া উচিৎ ছিল, সেটা হতে পারেনি, কিছু সিট কম পড়ল। কিন্তু আমার মনে হয় যে বিহার যে একটা বার্তা দিল সেটা গোটা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনগুলোতে, আগামী বছরের শুরুতে, বিহারের পরে, পশ্চিমবাংলার নির্বাচন, আসামের নির্বাচন, তামিলনাড়ুর, কেরালার নির্বাচন। তো সমস্ত জায়গাতেই, আমার মনে হয়, বিজেপি একটা বিরাট বড় বিপদ এই মুহূর্তে, গণতন্ত্রের জন্য সংবিধানের জন্য, আইনের শাসনের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবাংলাতেও একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে, তাদের যে গণতন্ত্র-বিরোধী আচরণ সেই রাজ্যে, পশ্চিমবাংলাতেও যে দুর্নীতি, সেই প্রশ্নগুলো আমাদের কাছে আছে। কিন্তু তবুও আমি বলব যে, পশ্চিমবাংলাতেও বিজেপিকেই এক নম্বর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে বামপন্থীদের অবশ্যই নিতে হবে। কারণ ত্রিপুরা বিজেপির হাতে চলে গেছে, আসাম বিজেপির হাতে চলে গেছে, বিহারে বিজেপি আবার ক্ষমতায় ফিরে এল। ঝাড়খণ্ড কোনোমতে বিজেপি থেকে কিছুটা অব্যাহতি পেয়েছে, কিন্তু পশ্চিমবাংলায় বিজেপির যেভাবে দাপট বেড়ে উঠছে লোকসভা নির্বাচনের পরে, সেটা বাংলার মানুষ দেখছে। পশ্চিমবাংলার বুকে বামপন্থীরা বিহার থেকে উৎসাহ নিয়ে আরও বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী হয়ে তারা লড়াই করুক এবং গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, সাধারণ মানুষের লড়াইয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বামপন্থীরা উঠে দাঁড়ান। এটা বিহারের মানুষও দেখতে চায়। তো, যেরকম বিহার থেকে ... বিহারকে বামপন্থীরা উৎসাহ দিয়েছেন গোটা দেশের, তেমনই বিহারও চায় পশ্চিমবাংলা রুখে দাঁড়াক।

এবং, আরেকটা কথা হচ্ছে, গোটা দেশে যেভাবে কেন্দ্র সরকার একটা বুলডোজার চালাচ্ছে — ভারতবর্ষের ফেডেরাল স্ট্রাকচার বিপন্ন, রাজ্যে রাজ্যে রাজ্য সরকারগুলো তাদের ক্ষমতা হারাচ্ছে। সেখানে পশ্চিমবাংলা, বিহার — আমাদের যে পূর্ব ভারত সেই পূর্বভারতের যে ফেডেরাল রাইটস, আমার মনে হয় এটা একটা বড় প্রশ্ন — সেখানে বাংলার মানুষ, পশ্চিমবাংলা, বিহার, আসাম — এই সমস্ত রাজ্যের মানুষ একসাথে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করুন গণতন্ত্রের প্রশ্নে, সংবিধান রক্ষার প্রশ্নে, ভারতবর্ষের ফেডেরালিজমের প্রশ্নে এবং খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের প্রশ্নে। এটা সময়ের দাবি। আমার মনে হয় বিহারের আন্দোলন বিহারের নির্বাচন সেই বার্তা দিয়েছে। আমরা সেই বার্তা নিয়ে গোটা দেশে বামপন্থীরা এগিয়ে যাব। এটাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। বামপন্থী আন্দোলন গণতন্ত্র রক্ষার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কাজ করবে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-40