কালান্তক ফুসফুসের ক্যান্সারে গত ২৮ অক্টোবর জীবনাবসান হ’ল তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মার্ক্স-স্কলার পরেশ চট্টোপাধ্যায় এবং আরেক বিরল পন্ডিত ও মার্ক্স-চর্চাবিদ প্রদীপ বকশিকে ঘিরে যে পার্টিতন্ত্র-কলুষ মুক্ত মার্ক্স-চর্চার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল কলকাতা মার্ক্স সার্কলকে কেন্দ্র করে তার অন্যতম ছিলেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। পরেশদা শেষবার যখন কলকাতায় এসেছিলেন ২০১১ সালে, ফ্রন্টিয়ার সাপ্তাহিকে তাঁর এক উল্লেখযোগ্য সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তপন। মার্চ ২০১২-র মাঝামাঝি প্রকাশিত হয়েছিল। তার কিছু আগে ‘একদিন’ দৈনিকে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন নিত্যানন্দ ঘোষ। পরেশ চট্টোপাধ্যায় সেবার আড়াই মাস কলকাতায় ছিলেন। অথচ কোনো দৈনিকের কোনো তথাকথিত বাম রাজনীতি বিশেষজ্ঞ কলমচি তাঁর সাথে যোগাযোগ বা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেননি। তিনি ১৯৯০ দশকের প্রথম দিক অব্দি সিপিআই-এর সদস্য (প্রায় সিকি দশক) ছিলেন। ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের পুনর্গঠন কর্মকান্ডের (মধ্য ১৯৮০র দশকে) সঙ্গে ও তার পশ্চিমবঙ্গ শাখা ভারতীয় গণসংস্কৃতি সঙ্ঘ (আইপিসিএ) পুনর্সংগঠনে রতন বসু মজুমদারের সহযোগী ছিলেন। তিনি ১৯৬০ দশকের শেষ দিক থেকে প্রায় দুই দশক ‘মূল্যায়ন’ পত্রিকার (দ্বিমাসিক) সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রখ্যাত মার্ক্সবাদী ইতিহাসবিদ নরহরি কবিরাজ, প্রাথমিক শিক্ষক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ অধ্যাপক নির্মাল্য বাগচি ও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল আন্দোলন ও যুব বিদ্রোহের বীর রণধীর দাশগুপ্ত ও সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মহাপ্রাজ্ঞ সত্যেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার (রণধীরদা ও সত্যেনদা আন্দামানে সেলুলার জেলে অনেক বছর বন্দী ছিলেন, সেখানে কমিউনিস্ট কনসলিডেশন ও অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান) তার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। নরহরিদা ও সত্যেনদা ছিলেন সম্পাদক। সেই সময় মার্ক্সবাদী সাময়িকী হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত কতিপয় পত্রিকার অন্যতম ছিল ‘মূল্যায়ন’। তার সাথে যুক্ত ছিলেন ডঃ অসিত রায়, সুদীপ্ত কবিরাজ, শোভনলাল দত্তগুপ্ত, দীপিকা বসু, নন্দিনী সেন, ভানুদেব দত্ত, সত্য রায় প্রভৃতি। এই অভাজনও। ভানুদেববাবু স্মরিয়ে দিয়েছেন তপনের দুটি স্মরণীয় প্রবন্ধ – ‘অক্টোবর বিপ্লব ও রূশ বুদ্ধিজীবিরা’ ও অ্যাঞ্জেলা ডেভিসকে নিয়ে লেখা ‘বারুদের উজ্জ্বল পাখী’। আমার মনে পড়ছে স্পেনের রিপাব্লিক্যান সংগ্রামের প্রসিদ্ধ নেত্রী দলরেস ইবারুরি-কে (লা পাসিওনারিয়া) নিয়ে লেখা ‘সে পথ দিয়ে ফিরল নাকো তারা।’
তপনের সাথে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সুসম্পর্ক ছিল। বলতেন, পার্টিটার নেতৃত্বের মুক্তমতিত্ব পার্টিকেন্দ্রিক রাজনীতিতে অনুসরণযোগ্য। আমাকে ও নিত্যানন্দ ঘোষকেও বলেছিলেন।
- শঙ্কর রায়