কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে লাখো কিষাণের দিল্লী অভিযানের প্রতি সংহতি এবং কৃষকদের উপর মোদী সরকারের বর্বর আচরণকে ধিক্কার জানিয়ে হুগলী জেলার গ্রাম-শহরে প্রায় প্রতিদিনই পার্টি এবং বিভিন্ন বামপন্থী দল ও গণসংগঠনগুলির উদ্যোগে একের পর এক মিছিল, সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হচ্ছে।
জেলাস্তরের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীটি অনুষ্ঠিত হয় ২৭ নভেম্বর তারকেশ্বরের পূর্ব রামনগরে। এখানে পঞ্চায়েত সংলগ্ন মাঠে এআইকেএসসিসি’র হুগলী জেলা কমিটির ডাকা সমাবেশে প্রায় এক হাজার কৃষক ও কৃষিশ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির রাজ্য সম্পাদক সজল অধিকারী, সিপিআই(এম) নেতা সুদর্শন রায়চৌধুরী, এআইকেএস নেতা ভক্তরাম পান, অগ্রগামী কিষাণ সভার শিবপ্রসাদ মালিক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
২৮ নভেম্বর গুপ্তিপাড়া বাজারে পার্টির বলাগড় ব্লক কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়। বিক্ষোভ শেষে মোদীর কুশপুতুল জ্বালানো হয়। বিক্ষোভ কর্মসূচীতে সেখ আনারুল, শোভা ব্যানার্জী প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ৩০ নভেম্বর পান্ডুয়া ব্লকের বৈঁচিতে জিটিরোড চৌমাথায় স্বল্প সময়ের বিক্ষোভ শেষে নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়। কর্মব্যস্ত জিটিরোডে মানুষের ভীড় জমে যায়। আয়ারলা নেতা নিরঞ্জন বাগ ও পার্টি নেত্রী সরস্বতী তুড়ি এই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেন। ১ ডিসেম্বর ধনেখালি ব্লকের আদিবাসী প্রধান কনুইবাঁকা গ্রামে বিক্ষোভ জমায়েতে নেতৃত্ব দেন পার্টির জেলা কমিটি সদস্য সজল দে, স্থানীয় পার্টি নেতা মহাদেব মুর্মু প্মুখ। বিক্ষোভ শেষে নয়া কৃষি আইনের প্রতিলিপি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
৩০ নভেম্বর হুগলীর বালি মোড়ে পার্টির চুঁচুড়া লোকাল কমিটির উদ্যোগে পথসভা সংগঠিত হয়। পথসভায় আয়ারলা নেতা সেখ আনারুল, শ্রমিক নেতা বটকৃষ্ণ দাস ছাড়াও বক্তব্য রাখেন এআইপিএফের সুদর্শন বোস। সভায় বর্ষীয়ান বামপন্থী নেতা সনৎ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘক্ষণ পথসভার শেষে নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল জ্বালানো হয়। ১ ডিসেম্বর কোন্নগর কোতরং এলাকায় পার্টি অফিস থেকে মহিলা, নির্মাণ শ্রমিক, ছাত্র-যুব ও মধ্যবিত্ত নাগরিকদের এক মিছিল বার করা হয়। মিছিলটি হিন্দমোটরের ২নং কলোনি বাজার, ইটখোলামোড়, নন্দনকানন, হিন্দমোটর রেল স্টেশন ও সংলগ্ন বাজার এলাকা পরিক্রমা করে বিনয় বাদল দীনেশ মোড়ে এসে শেষ হয়। মিছিল পরিসমাপ্তির সময় জমায়েতে বক্তব্য রাখেন যুব নেতা তথা পার্টির জেলা কমিটি সদস্য সৌরভ রায়। এরপর নয়া কৃষি আইনের প্রতিলিপি ও মোদীর কুশপুতুল জ্বালানো হয়।
দিল্লীতে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম শরিক পশ্চিমবঙ্গ। এই আন্দোলন আমাদেরও আন্দোলন। এ বিষয়টিকে তুলে ধরে নদীয়ার ধুবুলিয়ায় প্রচার সভায় বক্তব্য রাখলেন কৃষক নেতা কলম বিশ্বাস, ঠান্ডু সেখ। ৩০ নভেম্বর ঐ প্রতিবাদ সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এআইকেএম রাজ্য নেতা সুবিমল সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, চুক্তি চাষের মধ্য দিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে কৃষকের জমি কর্পোরেট পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিতে চাইছে। এ রাজ্যের কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। সার বীজের দাম দ্বিগুন করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নীতির ফলে চুক্তি ও ভাগ চাষিরা দিন মজুরে পরিণত হবে এবং পরিশেষে তারা দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে যুক্ত হবে। সমগ্র কৃষি ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়া হবে কর্পোরেট পুঁজিপতিদের হাতে। এই নীতির বিরুদ্ধে সারা দেশের মতো এ রাজ্যের কৃষকরাও লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছে। আগামী দিনে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচী হিসাবে নদীয়া জেলায় সড়ক অবরোধ সংগঠিত হবে। এছাড়াও প্রচার সভায় বক্তব্য রাখেন আরওয়াইএ নেতা সন্তু ভট্টাচার্য। পরবর্তীতে ১ ডিসেম্বর সাধনপাড়া এলাকার বনগ্রামে অনুরূপ প্রচার সভা সংগঠিত হয়। চাপড়া এলাকায় কৃষক আন্দোলনের দাবিগুলিতে ব্যাপক পোস্টারিং করা হয়। সেখানেও অবরোধ কর্মসূচী সংগঠিত হবে বলে জানিয়েছেন কৃষক নেতা ধনঞ্জয় গাঙ্গুলী, ইনসান বিশ্বাস।
গত ২৭ নভেম্বর বর্ধমান রেল স্টেশন থেকে ৩০০ শতাধিক মানুষের যৌথ মিছিল শহর পরিক্রমা করে কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ অবস্থানে জমায়েত হয়। মিছিলে ঋণ মুক্তি কমিটির ৭০ জন মহিলা ঋণগ্রস্ত মানুষ সামিল হন। শ্লোগান ছিল দিল্লির আন্দোলনরত কৃষকদের উপর অত্যাচার হচ্ছে কেন? মোদী সরকার জবাব দাও। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া কৃষি আইন জালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও। কৃষি ও কৃষক বিরোধী নয়া কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। বিদ্যুত বিল ২০২০ বাতিল করতে হবে। ২লক্ষ টাকা পর্যন্ত সমস্ত ধরনের গরিবদের ঋণ মুকুব করতে হবে। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন এআইকেএম-এর পক্ষ থেকে কুনাল বক্সী ও এআইকেএস-র পক্ষ থেকে অমল হালদার।
২৮ নভেম্বর কালনা ২নং ব্লকের অকালপোষ গ্রাম পঞ্চায়েতের আগ্রাদহ বাস স্ট্যান্ড বাজারে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, এআইকেএম ও আয়ারলার পক্ষ থেকে মিছিল সংগঠিত করা হয়। দিল্লীর কৃষক আন্দোলনের উপর দমন-পীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ও বিদ্যুত বিল ২০২০ বাতিলের দাবি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া কৃষি আইন বাতিল-এর দাবিতে মিছিল গ্রাম পরিক্রমা করে। তারপর সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনোর জেলা কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম।
১ ডিসেম্বর মন্তেশ্বর ব্লকের কুসুমগ্রাম বাজারে মিছিল করে আয়ারলা, এআইকেএম ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর মন্তেশ্বর লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে। মিছিলে দিল্লির কৃষক আন্দোলনের উপর দমন-পীড়ন-এর বিরুদ্ধে শ্লোগান ওঠে। কৃষক বিরোধী নয়া কৃষি আইন বাতিল-এর দাবি করা হয়। বিদ্যুত বিল ২০২০ বাতিলের দাবি তোলা হয়। মোদী হঠাও দেশ বাঁচাও শ্লোগান দিতে দিতে কৃষক বিরোধী ফ্যাসিস্ট ও কোম্পানির দালাল নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করা।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরে ২৭ নভেম্বর দিল্লির কৃষক আন্দোলনের উপর দমন-পীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে খাগড়া চৌরাস্তা মোড়ে ও কুঞ্জঘাটা বাজারে বিক্ষোভ সভা সংগঠিত করা হল। সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সদস্য অপুর্ব লাহিড়ী ও জেলা সম্পাদক রাজীব রায়।
১ ডিসেম্বর বেলঘরিয়ায় কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে, কর্পোরেট কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ও কৃষক আন্দোলনে দমন পীড়নের বিরুদ্ধে মিছিল এবং মোদীর কুশপুতুল পোড়ানো হয় সিপিআই(এমএল), আইপোয়া, আইসা এবং এআইসিসিটিইউ-র নেতৃত্বে। ২৭ নভেম্বর গাইঘাটায় কৃষক সমিতির নেতৃত্বে বিক্ষোভ ও কালা আইনের প্রতিলিপি পোড়ানো হয়। ঐদিন অশোকনগর ভুরকুণ্ডা অঞ্চলের হিজলিয়াঁ গ্রামে বাম কৃষক সংগঠনগুলির নেতৃত্বে বিক্ষোভসভা ও কপি পোড়ানো হয়। ঐদিন নৈহাটি স্টেশনে পার্টির উদ্যোগে বিক্ষোভসভা হয়। ৩০ নভেম্বর হাবরা নৈহাটি রোডে মগরা মোড়ে বাম কৃষক সংগঠনগুলির ডাকে বিক্ষোভসভা ও কপি পোড়ানো হয়। একই সাথে ONGC গ্যাস প্রকল্পে জমি নেবার প্রশ্নে স্বচ্ছতা ও কৃষকদের অধিকার রক্ষার দাবি জানানো হয়। বসিরহাটে পার্টি সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলো মিলিতভাবে এক দৃপ্ত মিছিলে শহর পরিক্রমা করে। ১ ডিসেম্বর বেলঘরিয়া লোকাল কমিটি ও গণসংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এলাকায় মিছিল ও মোদীর কুশপুতুল দাহ হয়। অশোক নগর শহর পার্টি কমিটির ডাকে মিছিল হয় গোল বাজারে এবং কালা কৃষি আইনের কপি পোড়ানো হয়। এ ছাড়াও সপ্তাহব্যাপী জেলাজুড়ে কর্মসূচী চলবে। ১ ডিসেম্বর বারাসাত শহরে AIPF এবং APDR এর উদ্যোগে এক প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত হয়। বারাসাত রেল স্টেশন থেকে শুরু করে শহরের ব্যস্ত পথ পরিক্রমা করে কলোনি মোড়ে মিছিল শেষ হয়। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন AIPF-এর জেলা আহবায়ক সুজিত ঘোষ। বিকালের এই মিছিল এলাকার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
কৃষক বিরোধী কৃষি বিল বাতিল এবং দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের সংহতিতে দার্জিলিং জেলার রাঙাপাণিতে ৩০ নভেম্বর এআইকেএম, এআইকেএস এবং এআইসিসিটিইউ-র নেতৃত্বে একটি মিছিল পার্টি অফিসের সামনে থেকে শুরু হয়ে বাজার ঘুরে পার্টি অফিসের সামনে এসে শেষ হয়। নেতৃত্বে ছিলেন এআইকেএম-এর দার্জিলিং জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ, জেলা সদস্য শরত সিংহ, পঞ্চা বর্মণ, দীপক ঘোষ, এআইকেএম-এর ইন্দ্রনাথ সরকার প্রমুখ। ১ ডিসেম্বর শিলিগুড়ি প্রধান ডাকঘরের সামনে এআইসিসিটিইউ সহ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি অবস্থানে বসে দুপুর ২টা থেকে ৪টে পর্যন্ত। প্রতিবাদ অবস্থানে বক্তব্য রাখেন এআইসিসিটিইউ-র পক্ষ থেকে অভিজিৎ মজুমদার, সিআইটিইউ-র সমন পাঠক প্রমুখ।