বিজেপি-নীতীশ জোট পুনরায় ক্ষমতায় আসতে না আসতেই বিহারে পুড়িয়ে মারা হল এক মুসলিম যুবতীকে। ২০ বছরের কিশোরী গুলনাজ তাঁর মা, বোন এবং তিন ভাইয়ের সাথে বিহারের বৈশালী জেলার দেশরী থানা এলাকার রসুলপুর হাবিব গ্রামে থাকতো। গুলনাজের বাবা না থাকায় মা একাই দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। গুলনাজ ছিল চার ভাইবোনের সব চেয়ে বড়। দু’মাস পরেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল গুলনাজের। কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রতিবেশি সতীশ ও তার ভাই চন্দন কুমার তাকে রাস্তায় নানাভাবে যৌন হেনস্থা করতো। গুলনাজ তাঁর প্রতিবাদ করায় হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যে বেলায় গুলনাজ ময়লা ফেলতে বাইরে গেলে তাঁর গায়ে কেরাসিন তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় সতীশ কুমার এবং তাঁর বাবা ভিনয় এবং ভাই চন্দন কুমার। শরীরের ৭০ শতাংশ পোড়া অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে করতে গত ১৫ই নভেম্বর চিরতরে বিদায় নেয় ২০ বছরের গুলনাজ। কিন্তু সেই কষ্টের মধ্যেও তাঁর খুনিদের নাম জানিয়ে যায় পুলিশকে। পাটনা হাসপাতাল থেকে গুলনাজকে মৃতঘোষণার কিছুক্ষণ পরই তাঁর পরিবারের সদস্যরা পাটনার রাস্তায় লাশ নিয়ে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ শুরু করেন এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হন।
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির (আইপোয়া) সাধারণ সম্পাদিকা মীনা তেওয়ারির নেতৃত্বে একটি টিম গুলনাজের গ্রামে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে ও আশেপাশের মানুষের সংগে কথা বলেন। এই টীমে সিপিআই(এমএল)-এর নেতা কমরেড বিশেশ্বর যাদব এবং জেলা সচিব যোগেন্দ্র রায় ও অন্যান্যরাও সামিল ছিলেন। গুলনাজের মা শাইমুনা জানান ২০১৭ সালে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি নিজের পরিশ্রম দিয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করছিল, তার না ছিল পেনশন না ছিল কোনো যোজনা। শৈমুনা জানান “আমার শুধু বিচার চাই, আর কিছু না”।
এই সমগ্র ঘটনায় নিতীশ কুমারের পুলিশের সাথে অপরাধীদের গভীর আঁতাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাঁর জন্যেই গুলনাজ অপরাধীদের নাম বলে দেওয়ার পরেও আজও তাদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আইপোয়ার পক্ষ থেকে গুলনাজ হত্যার নিন্দা জানিয়ে সরকারের কাছে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। জাতীয় সাধারণ সম্পাদক মীনা তিওয়ারি বলেছেন যে পুলিশ কর্তৃক অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া চলবে না।
আইপোয়া এবং বিহারের সিপিআইএমএল লিবারেশন দাবি জানায় — চাঁদপুরা থানার ইনচার্জ ও দেশারী থানার প্রধানকে অবিলম্বে বরখাস্ত করতে হবে। সমস্ত অপরাধীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে।
শাইমুনা খাতুনকে সরকারী চাকরী এবং পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
-- মিতালি বিশ্বাস