২৬ নভেম্বরের দেশজোড়া ধর্মঘটকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন -- সরকার ক্ষমতায় এলে আর যেতে চাইছে না। বিজেপি তো বলছে আরও পঞ্চাশ বছর ক্ষমাতায় থাকবে। অথচ মানুষের চাকরির নিরাপত্তা নেই। এখন অধিকংশ ক্ষেত্রেই তা বছরে বছরে নবীকরণ করতে হচ্ছে।
চাকরি হারাচ্ছে মানুষ। শ্রমিককে ক্রীতদাসে পরিণত করা হচ্ছে, তার ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে ২৬ নভেম্বরের ধর্মঘট। আগে মানুষ অনেক সময় বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন মানে ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলন বুঝত। এখন শিক্ষা স্বাস্থ্যের প্রবল পণ্যায়নের সূত্রে মানুষ বুঝছেন তাদের অধিকার চলে যাচ্ছে। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর মানুষ দেখছেন সরকারী চাকরির সংকোচন ও বেসরকারী সংরক্ষণের ব্যাপার না থাকার ফলে কার্যত সংরক্ষণের অধিকারই চলে যাচ্ছে।
শ্রমিকদের মতো হামলা নামছে কৃষি ও কৃষকদের ওপরেও।
আলু পেঁয়াজের মতো পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যে কৃষি আইনগুলো হচ্ছে তাতে কৃষকের স্বাধীনতা চলে যাবে, কৃষক কর্পোরেটের দাস হয়ে যাবে। এর বিরুদ্ধে পাঞ্জাব লড়ছে। সেখানকার সম্পন্ন কৃষকেরাও সঙ্কটটা বুঝতে পারছেন। তাদের লড়াই আন্দোলনকে বিজেপি শাস্তিযোগ্য মনে করছে। যেহেতু পাঞ্জাবে কৃষকেরা অবরোধ করেছিলেন তাই সেখানে মালগাড়ি চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কয়লা যাচ্ছে না। যুদ্ধেও যা করা হয় না, দেশের মানুষকে শুকিয়ে মারার জন্য তাই করা হচ্ছে। কাশ্মীরে বুলডোজার চালানো হচ্ছে। পাঞ্জাব, কাশ্মীরের অভিজ্ঞতা থেকে গোটা ভারতের শেখার আছে।
২৬ নভেম্বরের আন্দোলনে কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষেরা গোটা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হবেন।
আমরা দেখেছি অতীতের ধর্মঘটে অনেক সময় লেঠেল বাহিনী নেমেছে এর বিরুদ্ধে। আমরা আশা করি আগামী ধর্মঘটে এটা কেউ করবেন না। বাংলার মানুষ কৃষক শ্রমিকদের পাশে থাকবেন।
সংসদে বসে ওরা বাতিল করে দিতে পেরেছে শ্রম আইনে অর্জিত অধিকারগুলি, ঘোষণা করেছে বেসরকারীকরণের ছক, পাস করিয়ে নিয়েছে কৃষিকাজ ও ফসলের ওপর কোম্পানিরাজ কায়েমের নয়া আইন, শিক্ষার অধিকার বাঞ্চাল করতে এনেছে নয়া শিক্ষানীতি, খর্ব করেছে অরণ্যের অধিকার। সংসদের পর্ব শেষ, এবার লড়াই রাস্তার, লড়াই এখন রাজ্যে রাজ্যে। দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির মঞ্চর পক্ষ থেকে ডাকা ২৬ নভেম্বরের ধর্মঘট এই লড়াইয়ের শুরু। ক্ষমতাসীন কর্পোরেট ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দীর্ঘনির্ধারক লড়াই চলবে।
শ্রম আইন বিল
দেশকে ওরা ১০০ বছর পিছিয়ে দিচ্ছে। ভারতীয় জনতা ও শ্রমিক শ্রেণী দীর্ঘ প্রচেষ্টায় যে শ্রম আইন বলবত করেছিল তা বিলোপ করছে। অধিকার ও মজুরির প্রশ্নকে অস্বীকার করে ওরা পুঁজির অমানবিক নৃশংস শোষণের কোড চালু করেছে।
মজুরি কোড ন্যায্য মজুরির অধিকারকেই নাকচ করে দিচ্ছে
‘মজুরি তল’ বা ‘ওয়েজ ফ্লোর’-এর মতো নতুন ধারণা হাজির করে ন্যূনতম মজুরির প্রশ্নকে ইতিমধ্যে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। মজুরি প্রদানে গাফিলতির ক্ষেত্রে যে শাস্তির ব্যবস্থা ছিল তা তুলে দিয়ে ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তি বিধি চালু করা হচ্ছে
কেড়ে নেওয়া হয়েছে ধর্মঘটের অধিকার
‘শিল্পে সম্পর্ক কোড’ ধর্মঘটের অধিকার কার্যকরীভাবে নাকচ করে দিয়েছে। যে কোনও প্রতিষ্ঠানে স্ট্রাইক করতে ৬০ দিন আগে নোটিশ প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং এবং ডিসপুট চলাকালীন স্ট্রাইক নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটে অংশ নিলেও শাস্তি হিসেবে ৫০,০০০ টাকা জরিমানা ও হাজতবাসের দণ্ডবিধি আনা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে ট্রড ইউনিয়নকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নির্দিস্ট সময়ভিত্তিক নিয়োগের নামে শ্রমিককে ইচ্ছে মতো ভাড়া করা ও তাড়িয়ে দেওয়াকে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছে। সরকারী শ্রম দপ্তরের মধ্যস্থতায় ত্রিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্টিগত বোঝাপড়া ও সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বদলে ‘ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির চুক্তি’-র কথা বলে শ্রম সম্পর্কে নৈরাজ্য তৈরি করা হয়েছে। শিল্পীয় সংস্থার সংজ্ঞা বদলে দিয়ে বহু শিল্পকে আইনের আওতার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিট্রেঞ্চমেন্ট ক্লোজার লে-অফ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আইন প্রযোজ্য হতে ন্যূনতম ৩০০ কর্মচারি সম্পন্ন সংস্থা হওয়ার বিধান বিপুল অংশের শ্রমিককে সুরক্ষার সুযোগ থেকে বের করে দিয়েছে।
মহিলাদের উপর যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ জানানোর জন্য কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক ছিল কিন্তু এই শ্রম কোডে তা নেই। এখন থেকে খনি সহ যে কোনো বিপজ্জনক কাজে মহিলাদের নিয়োগ করা যাবে। নিয়োগকর্তাকে কোনো আইনি বাধ্যতায় নিয়ন্ত্রিত রাখল না সরকার। মাতৃত্বকালীন ছুটির উপর নেবে এসেছে নানা ধরনের শর্ত। ফলে সন্তান সম্ভবা মহিলাদের কর্মচ্যুত করাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আশা, অঙ্গনওয়াড়ি, মিড ডে মিল কর্মীদের ‘শ্রমিক/কর্মচারি’ হিসাবে স্বীকৃতি, পিএফ, ইএসআই-এর মতো সামাজিক সুরক্ষা, ন্যূনতম মজুরি- এইসব সুপারিশকেই নাকচ করে দিয়েছে শ্রমকোড।