গত ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর চার দিন হালিসহর রবীন্দ্র বিদ্যামন্দিরে বিকেল পাঁচটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের অন্তর্ভূক্ত হালিসহর সাংস্কৃতিক সংস্থা’র আয়োজনে ৪২তম ‘কাগজ ভাঁজের খেলা, আলোকচিত্র, চিত্র ও ভাস্কর্য প্রদর্শনী’ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে পথ চলা শুরু। আমরা যারা ভাববাদে বিশ্বাসী নই, তারা চিন্তা করি বিকল্প সংস্কৃতির সপক্ষে অসহায় মানুষের স্বার্থে কিছু সৃজন আমরা করতেই পারি। প্রায় প্রতি বছর বিভিন্ন শাসকদলের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আর প্রতিবারই সাধারণ মানুষের উৎসাহ আর সংস্থার উদ্দীপনা অতিক্রম করার সাহস দেখিয়েছে। প্রতিবার ‘হাসাস’ মানুষের কাছে কিছু না কিছু বার্তা দিয়েছে। এবছর সংগঠনের সম্মিলিত প্রদর্শনী আয়োজিত হয় শতবর্ষের সত্যজিৎ রায় ও বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে উৎসর্গ করে। প্রদর্শনীতে স্মরণ করা হয় প্রয়াত শিল্পীদের সাথে গণসঙ্গীত শিল্পী ও পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি প্রবীর (মনা) বল এবং মাইম ও অঙ্কন শিল্পী অমিতাভ (পপি) সরকারকে।
এবার হালিসহর সাংস্কৃতিক সংস্থা সুধী সাধারণ দর্শকদের বার্তা দিয়েছে সৃজনশীল শিল্পের মাধ্যমে “ফ্যাসিবাদ ও বিপন্ন স্বদেশ”। পাঁচটি হোর্ডিং-এ শিল্পী অভিজিত সেনগুপ্ত ও একটি কক্ষে শিল্পী কল্লোল দাস এই বিষয়টি নান্দনিকভাবে উপস্থাপিত করেছে, সাধারণ মানুষকে স্তম্ভিত করে, অনুভূতিকে দ্রোহে পরিণত করেছে। একএকটি কক্ষে শিশুদের আঁকা, বৈচিত্র্যময় আলোকচিত্র এবং কারিগরদের চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্প প্রদর্শিত হয়েছে। শতবর্ষে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা উপলক্ষে তমাল সাহার কবিতা কোলাজ উপস্থাপিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী জিগীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের ভাবনা ও শিশু মনোপযোগী শিল্প ভাবনায় - সৌমেন প্রধানের রঙ বেরঙের কাগজ ভাঁজের খেলা মানুষকে উৎসাহিত করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন অবস্থা আলোকচিত্রে দর্শককে বিমূঢ় করে তুলেছে। সাইকেলকে ধরে খেটে খাওয়া মানুষের ব্যবহৃত জিনিস দিয়ে ইনস্টলেশন মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।
শেষদিন ২৫ অক্টোবর সত্যজিৎ রায় জন্মশতবর্ষে স্মরণে ‘সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র এবং সত্যজিৎ’ আলোচনা উপস্থাপিত হয়। স্ক্রিনে চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ দেখানোর সাথে সাথে প্রাণবন্ত মনোগ্রাহী আলোচনা করেছেন ‘সংবর্ত সিনে সোসাইটি’র বিশিষ্ট বক্তা আবীর মজুমদার। পরে সত্যজিৎ রায়ের পোস্টমাস্টার চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করা হয়। ৫৯ জন শিল্পীর উৎকর্ষতা দেখতে অন্যবারের তুলনায় কিছু কম হলেও, চেনা রাজনৈতিক বন্ধুদের অনাগ্রহ থাকলেও (বৃহৎভাবে দেখলে, এই উপেক্ষা আমাদের সার্বিক ব্যর্থতা। প্রসঙ্গক্রমে এক রাজনৈতিক বন্ধু বলেছিলেন, তোমাদের সাথে আমাদের পার্থক্য কি জানো? তোমরা রাজনৈতিক পত্রিকা কিনে পড়, আমরা সাংস্কৃতিক পত্রিকা কিনে পড়ি না, দিলে দেখি) প্যান্ডেলে না ঘোরা বেশ কিছু শিল্প রসিক বন্ধু (শুধু প্রদর্শনী দেখতেই এসেছে) ও প্রচুর সাধারণ মানুষের অসাধারণ সমাগমে এ বছরের আলোকজ্জ্বল, বর্ণময় প্রদর্শনী দৃঢ়তা রেখেই সার্থক হয়েছে, মানুষের উৎসাহে।