প্রতিবেদন
বিহার বিধানসভায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সদ্য নির্বাচিত বিধায়কদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ddaree

মনোজ মঞ্জিল গরিব দলিত পরিবার থেকে আসা লড়াকু যুব নেতা, রেভলিউশনারি ইয়ুথ অয়াসোসিয়েশনের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট, বাবা মা ইঁটভাঁটার শ্রমিক। কম বয়স থেকেই ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক। গরিব দলিত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার আন্দোলনে এগিয়ে নিয়ে আসেন। বিহারের দলিত ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলগুলির আস্বাস্থ্যকর অসুরক্ষিত অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই দিয়ে পথ চলা শুরু। আইসার জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে পার্টির দশম কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। গরিব শ্রমজীবী মানুষের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আমলাতন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছেন। জেল খেটেছেন। ২০১৮ সালে তাঁর নেতৃত্বে ‘সড়ক পর স্কুল’ আন্দোলন বিশেষ সাড়া ফেলে। শত শত ছাত্রছাত্রী নিয়ে সড়কের ওপরই স্কুল বসতো, ক্লাস চলতো। এমন বহু সংখ্যক ‘সড়ক পর স্কুল’ সংগঠিত করেন। এই আন্দোলনের ফলে নীতিশ সরকার বিহারের প্রাথমিক স্কুলগুলির জন্য একগুচ্ছ সংস্কার ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। গুজরাটে ‘উনা থেকে উন্নাও দলিত পদযাত্রায় পার্টির অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, জামিনে মুক্ত হন।

সন্দীপ সৌরভ আইসার বর্তমান ন্যাশনাল সেক্রেটরি, দলিত ও পিছড়ে বর্গের ছাত্রছাত্রীদের সংগ্রামের নেতা, জওহরলাল নেহরু স্টুডেন্টস ইউনিয়িনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি ছেড়ে পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে বিহারের খেটে খাওয়া মানুষের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

মেহেবুব আলম দীর্ঘদিনের বিধায়ক, আন্তরিক কমিউনিস্ট গুণাবলীর নেতা হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়। গরিব, ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের তাঁদের আন্দোলন পরিচালনা করার নেতা হিসেবে তাঁর ওপর গভীর অটুট বিশ্বাস আরোপ করেছেন।

সুদামা প্রসাদ তারারি বিধানসভা ক্ষেত্রের বিধায়ক ছিলেন। বর্তমানে শাসক জনপ্রতিনিধিদের জনতার কাছে কোনওরকম দায়বদ্ধতা যখন মেলা ভার তখন সুদামা প্রসাদ উদাহরণ তৈরি করেন নিজের পাঁচ বছরের কাজের পূর্ণাঙ্গ ও অনুপুঙ্খ ‘রিপোর্ট কার্ড’ জনতার সামনে পেশ করে যেখানে এমএলএ ফাণ্ডের প্রতিটি পাইপয়সার হিসেব দেওয়া হয়।

2

 

সত্যদেও রাম দারাউলির বিধায়ক। বিহার আয়ারলার সাম্মানিক সভাপতি। গত নির্বাচনে কমরেড অমরজীত কুশোয়াহার সাথে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং জেল থেকে নির্বাচন লড়ে জতেছিলেন। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পান।

বীরেন্দ্র প্রসাদ গুপ্তা সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির বিহার রাজ্য সভাপতি। পশ্চিম চম্পারণের সামন্ত প্রভুদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ পরিচালনাকারী নেতা হিসেবে বিশেষ পরিচিত। অনেকবার শরীরীক হামলার সম্মুখীন হয়েছেন এবং মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে দীর্ঘ দিন জেল খেটেছেন।

গোপাল রবিদাস সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির বিহার রাজ্য সম্পাদক। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। গ্রামীণ গরিব, দলিত, মহিলা আন্দোলনের সংগঠক। সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ আদায়ের নামে মাইক্রোফাইনান্স এজেন্সির অত্যাচার ও হয়রানির বিরুদ্ধে বিহারের গ্রামীণ গরিব, বিশেষত মহিলাদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

অরুণ সিং অল ইণ্ডিয়া কিসান মহাসভার ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট। বিহারে কৃষক আন্দোলনের জনপ্রিয় নেতা। কারাকাটে  জিতে থাকা এমএলএ। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য।

3

 

মহানন্দ প্রসাদ পার্টির রাজ্য নেতা। তাঁর জেলার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক ও সাফাই কর্মচারিদের আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। নব্বইয়ের দশকে আইসা আন্দোলনে যোগ দেন, জনসংস্কৃতি মঞ্চের কর্মী হিসেবে সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন।

রামবলি সিং যাদব অল ইণ্ডয়া সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব ট্রেড ইউনিয়ন (এআইসসিটিইউ)-এর বিহার রাজ্য সহ-সভাপতি। রাজ্যের সরকারি কর্মচারি ও শ্রমিকদের আন্দোলনের জনপ্রিয় নেতা। চুক্তি-শিক্ষকদের সম কাজে সম মজুরির অধিকার ও স্থায়িকরণের দাবিতে জনপ্রিয় অভিযান সংগঠিত করেন।

অজিত কুমার সিং রেভলিউশনারি ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের বিহার রাজ্য সভাপতি, দলিত যুব আন্দোলনের নেতা। কোভিড লকডাউনের সমগ্র পর্বে বিপন্ন মানুষের পাশে ধারাবাহিক ত্রাণকার্য চালান।

অমরজিত কুশওয়াহা রেভলিউশনারী ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের সাম্মানিক সভাপতি। গত পাঁচ বছর যাবত জেলবন্দী। জুলাই ২০১৩ তে তাঁকে ও সত্যদেও রামকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। দারাউলি বিধানসভার অন্তর্গত ঘুটনি ব্লকের চিল্মারভা গ্রামের ভূমিহীন দলিতদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য সন্ত্রাসবাদী হামলা চালায় সামন্তী শক্তি। সারা বিহারের মত এখানেও ২০১২ সালে ব্লক প্রশাসন দ্বারা খাস জমিতে ভূমিহীনদের গৃহ নির্মাণের জন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তবু সেই জমি বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণ জমিদারদ্র দখলেই থেকে যায়। সিপিআই(এমএল)-এর ব্যানারে সেই জমি দখল করে দলিত ভূমিহীন মানুষেরা। সেখানে বাড়ি বানায়। ২০১৩’র ৫ জুলাই লোকাল বিজেপি এমএলএ রামায়ন মাঝি, স্থানীয় ব্রাহ্মণ জমিদার ও পার্শ্ববর্তী ইউপি থেকে আসা গুণ্ডাদের একটি নৃশ্নগস বাহিনী চিল্মারভা গ্রামের সীমানায় জমায়েত হয় এবং দলিত পরিবারগুলিকে হঠিয়ে দেওয়ার হুঙ্কার দিতে থাকে। সিপিআই(এমএল) নেতা কমরেড সত্যদেও রাম ও অমরজিত কুশওয়াহা গ্রামে উপস্থিত ছিলেন। জেলাশাসক আসেন, দলিতদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং সিপিআই(এমএল) নেতাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। এসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশের অফিসিয়াল রেকর্ড বলছে যে ডিএমের প্রতিশ্রুতি মেনে নিয়ে সিপিআই(এমএল) নেতারা সেই জায়গা ছেড়ে চলে যান।

কিন্তু পরদিনের ঘটানাবলী দেখিয়ে দেয় যে জেলা প্রশাসন আসলে ভয়ানক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটে যেতে পারত। একটি টিভি চ্যানেলের ভিডিও ক্লিপ্স থেকে দেখে যায় যে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল আর জমিদারদের গুণ্ডা বাহিনী দলিত গ্রামে গুলি চালাচ্ছিল। গ্রামবাসীদের ছেড়ে রাখা হয়েছিল সামন্তী গুণ্ডাবাহিনীর হাতে, গ্রামবাসীরা নিজেরাই আত্মরক্ষা করে। এই প্রক্রিয়ায় দু’জন হামলাকারি গুণ্ডা, যারা দুজনেই এলাকার বাইরে থেকে আসা, প্রাণ হারায় এবং সিপিআই(এমএল) কর্মী কমরেড শ্রিনিবাস রাম আহত হন।

ইন্টারেস্টিং বিষয় হল উক্ত ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি এমএলএ রামায়ন মাঝি এবং ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ সাংসদ ওম প্রকাশ যাদব যিনি পরে বিজেপি থেকে আবার সাংসদ হন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরিস্কার দেখা যাচ্ছে যে গুলির মুখে গরিব গ্রামবাসীরা প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ছুটোছুটি করছে। দিনকে রাত করে বিজেপির এমএলএ এমপিরা হামলাকারিদের ‘আম লোগ’ বলে অভিহিত করে যারা নাকি সিপিআই(এমএল) সমর্থকদের হামলার ‘ভিক্টিম’!

কমরেড সত্যদেও রাম পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হলেও কমরেড অমরজিতকে জেলবন্দী করেই রাখা হয়েছে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-40