রাজ্যের ১৩টি জেলা থেকে সহস্রাধিক কর্মীর উপস্থিতিতে কলকাতার রামলীলা পার্কে অনুষ্ঠিত হলো এআইকেএসসিসি আয়োজিত কৃষক গণ কনভেনশন। কেন্দ্রীয় নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে এবং ২৬ নভেম্বর সারা বাংলা গ্রামীণ ধর্মঘটের সমর্থনে বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। নতুন কৃষি আইনকে কৃষি পণ্যের কালোবাজারি, মজুতদারী, বাজার ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেওয়া এবং চুক্তি করে চাষিকে দিয়ে যা খুশী তাই চাষ করানোর আইন বলে অভিহিত করেন এআইকেএসসিসি-র জাতীয় সাংগঠনিক সচিব ও যোগেন্দ্র যাদবের নেতৃত্বাধীন জয় কিষাণ আন্দোলনের নেতা অভীক সাহা। তিনি বলেন, ২৬ নভেম্বর দিল্লীর বুকে লক্ষ লক্ষ কৃষক সংসদ অভিযান করবে। গড়ে তুলবে ঐতিহাসিক প্রতিরোধ আন্দোলন। রামলীলা পার্ক ময়দানে কনভেনশনে অংশগ্রহণকারী শক্তিগুলির পতাকার বিভিন্ন রং এবং সংগ্রামী প্রতীকের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বৈচিত্র দেখিয়ে দিচ্ছে কৃষকের স্বার্থে বড় ধরনের এক সংগ্রামী ঐক্য গড়ে উঠেছে, মোদী সরকার হুশিয়ার!
অগ্রগামী কিষান সভার নেতা হাফিজ আলম সাইরানী বলেন, নয়া আইনে দেশের কৃষি উৎপাদন, সংরক্ষন ও বিপননকে দেশী বিদেশী কর্পোরেট শক্তির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন আমাদের দেশের কৃষির উপর কর্পোরেটদের লোভী নজর কেন? দেশের জলবায়ু অংশত কৃষির অনুকুল, এখানে সারা বছর চাষাবাদ হয়। আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। নয়া কৃষি আইন এদের উপর চরম আঘাত নামিয়ে আনবে। এ রাজ্যে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পাঞ্জাব, কেরল যদি পারে তাহলে এ রাজ্যের সরকার কেন কেন্দ্রীয় আইনকে প্রতিহত করার উপযোগী আইন প্রনয়ণ করবে না?
এআইকেএস (বি বি গাঙ্গুলী স্ট্রিট) সংগঠনের নেতা তপন গাঙ্গুলী বলেন,নয়া আইনে কেবল কৃষকরাই নয়, দেশের সমগ্র জনগণের স্বার্থ বিপন্ন। খাদ্যদ্রব্য এখন আর ওদের কাছে অত্যাবশ্যকীয় নয়! আগে জিনিষপত্র মজুত করে দাম বাড়ালে মামলা করা যেতো। এখন কর্পোরেট ক্ষেত্রের অবাধ মজুতদারী মূল্যবৃদ্ধিকে চতুর্গুন করে তুলবে। কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে, তাই আজ সমগ্র কৃষক শ্রেণীর স্বার্থে বিভিন্ন রং এর পতাকার সংগ্রামী একতা গড়ে উঠেছে।
এআইকেএম নেতা কার্তিক পাল বলেন, চরম কৃষক বিরোধী বিজেপি এ রাজ্যে জায়গা করে নিতে পারবে না। এই লক্ষে কৃষক সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। এই নয়া কৃষি আইনে পঃ বাংলার চাষিদের তেমন ক্ষতি নেই বরং লাভ হবে বলে অপপ্রচার চলছে। বাস্তবে তৃণমূলের অপশাসনে এ রাজ্যের কৃষকরা আদৌ ভালো নেই। এ রাজ্যে কৃষক স্বার্থবাহী আইন প্রনয়ণের দাবিতে আন্দোলনের পথে যেতে হবে। পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
কেকেএসএস সংগঠনের নেতা সমীর পুতুতুন্ডু বলেন, এ রাজ্যে চাষিদের ফসলের সরকারী দাম পাওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারের ফসল কেনার সময় ও পদ্ধতির উপর অনেকটাই নির্ভর করে। যথা রাজ্য সরকার অনেক দেরীতে ধান কিনতে নামে, ফলে গরিব চাষিদের অভাবী বিক্রি চলতেই থাকে। পঃ বঙ্গে ক্ষুদ্র জোতের আধিক্য থাকার জন্য গ্রামীণ জনগণের ব্যাপকতর সংগ্রামী একতা গড়ে তোলার সভাবনা রয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারের কৃষক বিরোধী নীতির বিরুদ্ধেই সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। সারা ভারত কৃষিমজুর ইউনিয়নের সভাপতি তুষার ঘোষ বলেন, কেন্দ্রীয় নয়া আইন গরিবের বিরুদ্ধে, ক্ষেতমজুরের বিরুদ্ধে এমনকি ধনী চাষিদেরও বিরুদ্ধে। তাই বৃহত্তর একতা গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশে খাদ্যে যে স্বয়ংভরতা রয়েছে সাম্রাজ্যবাদীরা সেটাকেই ভেঙ্গে দিতে চাইছে৷ মোদী সরকার সেই লগ্নিপুঁজির কাছে নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। আম্বানি আদানি ওয়ালমার্টের স্বার্থ সেবা করতে এই কৃষি আইন নিয়ে আসছে। চুক্তিচাষের মধ্য দিয়ে চাষির স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হবে। এ রাজ্যে বিধানসভায় আইন করার দাবি তুলে ধরে তৃণমূলের মুখোষ খুলে দিতে হবে। রাজ্যের চাষিরা ফসলের সরকারী দর পায় না। গরিবরা অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আমাদের দাবি কেবল মান্ডি থেকেই নয়, পঞ্চায়েত স্তর থেকে ফসল কিনতে হবে। এ রাজ্যে কৃষকের সংগ্রামী একতা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিষবাস্পকে প্রতিহত করতে পারবে।
এআইকেএসসিসি পঃ বঙ্গ আহ্বায়ক অমল হালদার আগামী কর্মসূচী ঘোষণা করে বলেন, ২৬ নভেম্বর গ্রামীণ ধর্মঘটকে এরাজ্যে সর্বাত্মক সফল করে তুলতে হবে। এজন্য রাজ্যের সমস্ত জাতীয় ও রাজ্য সড়কে কৃষকরা অবরোধে সামিল হবে। আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে ব্লক ও মহকুমাস্তরে কৃষক গণ কনভেনশন সংগঠিত করা হবে। ধর্মঘটের পরদিন ২৭ নভেম্বর জাতীয় স্তরে কৃষক বিক্ষোভ কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে রাজ্যের জেলায় জেলায় কৃষক সমাবেশ সংগঠিত হবে। পরবর্তীতে রাজ্য বিধানসভা খোলার পর রাজ্যে কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণ ও রাজ্য আইন প্রনয়ণের দাবি তুলে ধরে কর্মসূচী গৃহীত হবে। এছাড়াও কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন সংযুক্ত কিষাণ সভার নেতা মিহির পাল, এআইকেএমএস নেতা সুশান্ত ঝা।
- জয়তু দেশমুখ