১৮ অক্টোবর পুর্ব বর্ধমান জেলার পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের ফলেয়া স্টেশন বাজারে ঋণ মুক্তি কমিটির ডাকে গণ কনভেনশন সংগঠিত হয়। এই গণ কনভেনশনের প্রস্তুতি হিসেবে ৩ হাজার লিফলেট বিলি হয়, ব্লকের ৯টা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামে গ্রামে মাইক নিয়ে প্রচার করা হয়। অনেকগুলো গ্রামে ঋণগ্রস্ত মহিলাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। ঋণ মকুবের দাবিতে পোষ্টার ছাপানো হয়। লিফলেট ও পোষ্টারে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর দেওয়া হয়। যেহেতু এর আগে বিডিও ডেপুটেশন, থানা ডেপুটেশন ও ব্লকের মাইক্রোফিনান্স সংস্থাগুলোর অফিসে অফিসে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত করা হয়েছিল তাই ব্লকের বিভিন্ন এলাকাতেই মাইক্রোফিনান্স সংস্থার এজেন্টদের গরিব ঋণগ্রস্ত মহিলাদের সাথে বচসা কিস্তি আদায়ের জন্য বাদানুবাদ ঘটেই চলছে। এমতাবস্থায় কনভেনশনের প্রচারে গরিব মানুষের, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে, সাড়া পড়ে। আবার মাইক্রোফিনান্স সংস্থার এজেন্ট ও শাসক পার্টির কর্মী নেতাদের, বিশেষ করে বিজেপি-তৃণমূলের, ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফলে গ্রামে গ্রামে মহিলারা যাতে এই কনভেনশনে সামিল হতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিমুলক প্রচার ও ঘর পাওয়ার টোপ ও বিভিন্ন ধরনের ঋণ অনুদান থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিতে থাকেন তার। এমনকি পারিবারিক ও সামাজিক চাপের মাধ্যমেও মহিলাদের অংশগ্রহণ আটকানোর চেষ্টা করে। তাই প্রচণ্ড আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই আসতে পারেননি। সমস্ত বাধা মোকাবিলা করেই ৫০০-এর অধিক ঋণগ্রস্ত মহিলা বেলা ২টার মধ্যেই কনভেনশনে সামিল হয়েছেন। শতাধিক পুরুষও উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে নতুন নতুন গ্রাম থেকে ভাল সংখ্যক মহিলাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। অনেকেই বলছেন তাঁরা মাইকের প্রচার এবং লিফলেট পেয়ে এসেছেন। মহিলারা নিজেদের উদ্যোগেই অটো, টোটো ট্রাক্টর ভাড়া করে কনভেনশনে সামিল হয়েছেন। কনভেনশন শুরু হল বেলা আড়াইটার সময়। আহ্বায়ক শিবু সাঁতরা কনভেনশন শুরু করেন এবং প্রস্তাবনা পাঠ করেন। কনভেনশন পরিচালনা করেন সজল পাল। বক্তব্য রাখেন সলিল দত্ত। তার পর উপস্থিত মহিলাদের মধ্যে থেকে সান্তনা দাস, অলকা দে, আলেমা বিবি, গৌরী মাঝি, মনসুরা বিবি, সায়েরা বিবি, সালেহার বিবি ও আসমানী বিবি বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত পুরুষদের মধ্যে থেকে ময়না সেখ বক্তব্য রাখেন। আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমন মন্ডল বক্তব্য রাখেন। অশোক চৌধুরীর বক্তব্য ও গানের মধ্যে দিয়ে কনভেনশনের কাজ সমাপ্ত হয়। কনভেনশন থেকে প্রস্তাব নেওয়া হয় –
(১) ঋণের কিস্তি আদায়ের নামে মাইক্রোফিনান্স সংস্থার এজেন্টদের গরিব মহিলাদের অসম্মান অপমান ও হেনস্থা বন্ধ করতে হবে।
(২) আগামী ২ বছর ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত রাখতে হবে। এই সময়ের অতিরিক্ত সুদ নেওয়া চলবে না। এবং নতুন করে ঋণ দিতে হবে।
(৩) স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও মাইক্রোফিনান্স সংস্থা সহ গরিবদের সমস্ত ধরনের ঋণের ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মকুব করতে হবে।
এই সমস্ত দাবি নিয়ে এলাকায় এলাকায় কনভেনশন প্রচার ও এজেন্টদের হামলার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।
গত ১৬ অক্টোবর পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারী ১নং ব্লকে সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির অন্তর্ভুক্ত ঋণ মুক্তি কমিটির ডাকে গণ ডেপুটেশন সংগঠিত করা হল। ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম থেকে দেড় শতাধিক ঋণগ্রস্ত মহিলা এই ডেপুটেশনে অংশগ্রহণ করেন। ভাল সংখ্যক পুরুষও উপস্থিত ছিলেন। মেমারী শহরের চেক পোস্ট থেকে ব্যনার প্লাকার্ড হাতে সুসজ্জিত মিছিল শহরের মধ্যে দিয়ে বিডিও অফিসে হাজির হয়। বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমন মন্ডল ও রফিকুল ইসলাম।
ডেপুটেশনে প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন মুনমুন পাল, ঝুমা রাই, পার্বতী হাজরা, সীমা মাল, বেবী বিবি, রিনা বিবি, মারুফা বিবি, মমতাজ বিবি, রাসদা বিবি ও চাদু দে। ডেপুটেশনে দাবি ছিল –
(১) স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও মাইক্রোফিনান্স সহ সমস্ত ধরনের গ্রামীণ গরিবদের ঋণ মকুব করতে হবে।
(২) আগামী ২ বছর ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত রাখতে হবে। এই সময়ের অতিরিক্ত সুদ নেওয়া চলবে না।(৩) কিস্তি আদায়ের নামে এজেন্টদের গরিব মহিলাদের অসম্মান অপমান ও হেনস্থা বন্ধ করতে হবে।
(৪) কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে গ্রামের গরিব মেহনতীদের ২০০ দিন কাজ ও ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরী দিতে হবে। ব্যক্তিগত জবকার্ড দিতে হবে।
(৫) গ্রামীণ গরিবদের পরিবার পিছু মাসিক ১০ হাজার টাকা লকডাউনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
(৬) কৃষকবিরোধী কেন্দ্রের ৩টি নয়া কৃষি আইন বাতিল করতে হবে এবং বিদ্যুৎ বিল ২০২০ বাতিল করতে হবে।
২১ অক্টোবর পুর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের আটপাড়া গ্রামে ঋণ মুক্তি কমিটির ডাকে গন কনভেনশন সংগঠিত হয়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে দুই শতাধিক মানুষ জমায়েত হন। বেশিরভাগই মহিলা ঋণ গ্রস্ত মানুষ। কনভেনশনের প্রস্তাবনা পাট করেন জয়দেব বাগ। কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন অর্চনা মল, মনিকা দাস, রুপালী কিস্যু ও ময়না সাঁতরা। তার পর আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমন মন্ডল বক্তব্য রাখেন ও হুগলি থেকে আসা অরুণ বাগ। সভা পরিচালনা করেন আয়ারলার রাজ্য সভাপতি সজল পাল। কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন সলিল দত্ত। কনভেনশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন — গ্রামে গ্রামে প্রচার অভিযান চালাতে হবে। পুজোর ছুটির পর ব্লকের মাইক্রোফিনান্স সংস্থার অফিস গুলোর সামনে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত করা হবে। এজেন্টদের হামলার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ সংগঠিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। ঋণ মকুবের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
সমস্ত গরিব মানুষের ঋণমুক্তি এবং এজেন্টদের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে, এলাকার শাসকদলের চাপ ও চক্রান্তকে নাকচ করে বাগনানের দেবলীনা হলে সংগঠিত হলো ঋণমুক্তি কমিটির হাওড়া জেলা কমভেশন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আয়ারলা রাজ্য সম্পাদক এবং ঋণমুক্তি কমিটির আহ্বায়ক সজল অধিকারী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সজল দে, দেবাশীষ মুখার্জী, দিলীপ দে, নীলাশিস বসু, দেবব্রত ভক্ত, কাকলী ঘোষাল, আনোয়ারা বেগম, গীতা মান্না, আরবিনা বেগম, হাফেজা বেগম। ৩০০ জনের ওপর ঋণগ্রহিতা কনভেনশনে সামিল হন। কনভেনশন থেকে ১৮ জনের কমিটি গঠিত হয়। জেলা আহ্বায়ক হন কল্যাণী গোস্বামী এবং নবীন সামন্ত। আগামী দিনে সমস্ত ব্যাঙ্কগুলোর শাখা অফিস এবং স্থানীয় থানা ঘেরাও ও আগামীদিনে জেলা শাসকের দপ্তর অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়।
অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ঋণগ্রস্ত শ্রমজীবী জনতাকে নিয়ে গড়ে উঠেছে ঋণমুক্তি কমিটি। বজবজে ঋণমুক্তি কমিটির কনভেনশন অনুষ্ঠিত হল। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বক্তব্য রাখেন মহিলা সমিতির পক্ষে কাজল দত্ত, দেবযানী গোস্বামী, অঞ্জনা মাল, অর্চনা দাস, লতিকা রায়, মমতাজ বেগম। উপস্থিত ছিলেন আয়ারালা জেলা নেতা ইন্দ্রজিৎ দত্ত, সারাভারত কিষাণ মহাসভার জেলা সম্পাদক দিলীপ পাল। ঋণমকুবের দাবিকে শক্তিশালী করতে আগামীদিনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অঙ্গীকার নিয়ে কনভেনশন শেষ হয়।