বিবৃতি
বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীদের বেকসুর খালাস ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান এবং সামাজিক বিন্যাসের উপর আরেকটি ধাক্কা
vew

(বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র মামলার সকল আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়ার রায় সম্পর্কে সিপিআই(এমএল)-র সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য)

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত সকলকেই সিবিআই আদালত বেকসুর খালাস করে দিয়েছে। এই রায়টি, বাবরি মসজিদের জমিকে রাম মন্দির ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও ছাপিয়ে গিয়ে ভারতে ঘৃণা ছড়ানোর অপরাধের দ্বারা আক্রান্তদের জন্য ন্যায়বিচারের কফিনে চূড়ান্ত পেরেক। এই রায়গুলি বিদ্বেষ সৃষ্টির অপরাধের অপরাধীদের জন্য উৎসাহজনক, রায়টা তাদেরকে আশ্বস্ত করে যে তারা এ জাতীয় অপরাধের রাজনৈতিক ও বৈষয়িক ফল পুরোপুরি দায়মুক্তির সাথে উপভোগ করতে পারে।

বিজেপির প্রবীণ নেতা এল কে আদবানি, যার নেতৃত্বে ঠিক বাবরি মসজিদের জায়গাতেই রাম মন্দির নির্মাণের উগ্র দাবি তুলে রথযাত্রা সংগঠিত হয়েছিল। তিনি সহ অন্যান্য অপরাধীদের এই দাবিটির গর্ভেই মসজিদের কাঠামোটিকে ধ্বংস করার উন্মাদনা ছিল এবং রথযাত্রার নামে হিন্দু আধিপত্যবাদী হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো হয়েছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে, যা বহু মুসলমানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। আদবানি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন তাঁর সমর্থকরা কীভাবে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে মসজিদটি গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল। তবুও, আদবানি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস হয়ে গেছে। বাস্তবে সিবিআই আদালত বিজেপির এই প্রকাশ্য মিথ্যাচারকে সমর্থন করেছে যে, ধ্বংসটি নাকি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, পরিকল্পনামাফিক ষড়যন্ত্রের ফলাফল নয়। মসজিদটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে দেখে উমা ভারতী ও মুরলি মনোহর জোশীর উল্লাস করার ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। এই ধ্বংসলীলায় তারা তাদের ভূমিকা নিয়ে গর্ব করেছিল। তবুও তারা বেকসুর খালাস পেয়েছে। মুসলমানদের গণহত্যা এবং অন্যান্য মসজিদগুলোকেও এইভাবে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়ে সাধ্বী ঋতম্ভরার বিষাক্ত বক্তব্যগুলি জনসাধারণের জ্ঞাতব্যে আছে। তবুও সে বেকসুর খালাস পেয়েছে।

বিজেপি এবং আরএসএস ক্যাডাররা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার সাথে সাথে চিৎকার করেছিল “এক ধাক্কা অউর দো” (আর একটি ধাক্কা মারো)। এই হামলাগুলি কেবল মসজিদেই নয়, ভারতের সংবিধান এবং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক বিন্যাস এই ধাক্কার লক্ষ্য ছিল। এই রায় একই অভিমুখে “আরও একটি ধাক্কা”।

– দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন   

খণ্ড-27
সংখ্যা-35