শহীদ-ই-আজম ভগৎ সিং-এর ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সিপিআই(এমএল) সারা দেশেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ভগৎ সিং স্মরণ কর্মসূচী সংগঠিত করে এবং তাঁর স্বপ্নের ভারতবর্ষ গড়ে তোলার শপথ নেয়। এআইসিসিটিইউ এবং আরওয়াইএ এই দিনটিকে “শ্রমিক ও কৃষকদের অধিকার রক্ষা এবং কাজের অধিকার দিবস” রূপে পালন করে।
পাটনায় শতশত শ্রমিক ও যুবক গান্ধী ময়দানে ভগৎ সিং-এর মূর্তিতে মালা দেন এবং ভগৎ সিং-এর স্বপ্নের ভারত গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সেখানে অনুষ্ঠিত জনসভায় যাঁরা বক্তব্য রাখেন তাদের মধ্যে ছিলেন এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আর এন ঠাকুর, সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অভ্যুদয়, এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য সম্পাদক রণবিজয় কুমার, মহাসংঘ (গোপ গোষ্ঠী) সাধারণ সম্পাদক প্রেমচাঁদ কুমার সিনহা, আরওয়াইএ রাজ্য সম্পাদক সুধীর কুমার ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেন যে, শ্বেত ব্রিটিশ রাজকে সরিয়ে তার স্থানে বাদামি ব্রিটিশ রাজকে আনা কখনই ভগৎ সিং-এর স্বপ্ন ছিল না। তিনি অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে এমন এক সর্বজনীন সমানাধিকারের ভারত গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন যেখানে জাতপাতবাদী, ধর্মীয় ও বর্ণবাদী বৈষম্য থাকবে না। যেখানে প্রতিটি মানুষেরই জীবন ও জীবিকার অধিকার সুনিশ্চিত হবে, এমন এক আধুনিক গণতন্ত্রের স্বপ্নই ভগৎ সিং দেখেছিলেন। কিন্তু আজ মোদী জমানায় কোটি-কোটি যুবক বেকার আর সরকার আবার কাজ নষ্ট হওয়ার সমর্থনে যুক্তি দিচ্ছে। স্বাধীনতা লাভের ৭৩ বছর পর দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র আজ আরও একবার বিপর্যয়ের মুখে এবং কৃষক ও শ্রমিকদের কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর ক্রীতদাসে পরিণত করা হচ্ছে।
এদিন সিপিআই(এমএল)-এর পালিগঞ্জ অফিসে ছাত্র ও যুবকদের শিক্ষা ও কাজের অধিকার নিয়ে এক আলোচনাসভা আয়োজিত হয়। এই সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন পালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এমএল) প্রার্থী সন্দীপ সৌরভ। তিনি বলেন, আজ যখন শিক্ষা ও কাজের মতো যুবকদের বুনিয়াদি অধিকারকে ধ্বংস করা হচ্ছে, কৃষক স্বার্থ বিরোধী কৃষি আইনের মধ্যে দিয়ে কৃষকদের কর্পোরেট দাসত্বের অধীন করে তোলা হচ্ছে, শ্রম আইনগুলোকে বাতিল করে দিয়ে শ্রমিকদের অধিকারকে খারিজ করা হচ্ছে, তখন ভগৎ সিং-এর তাৎপর্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়েই সামনে আসছে। নীতীশ কুমার বলেন যে, বিহারে এখন দুই ইঞ্জিন সম্পন্ন সরকার চলছে, এটা আসলে হল দুটো বুলডোজারওয়ালা সরকার, একটা বুলডোজার চালাচ্ছে কেন্দ্রের মোদী সরকার, আর বিহারে নীতিশ কুমার তাঁর বুলডোজার দিয়ে যুবকদের শিক্ষা ও কাজের অধিকারকে চূর্ণ করছেন।
ছত্তিশগড়ে সিপিআই ও সিপিআই(এমএল) দিনটিকে “কাজ বাঁচাও, অধিকার বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও” দিবস রূপে উদযাপন করে। ভগৎ সিং এবং অন্যান্য শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, শ্রমিকরা আজ অত্যন্ত কঠোর সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মোদী সরকার তাদের সুরাহা করার বদলে তাদের সঙ্গে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের মতোই আচরণ করছে এবং শ্রমবিধি বিলগুলো এনে শ্রমিকদের যেটুকু অধিকার অবশিষ্ট রয়েছে সেটুকুও ছিনিয়ে নিতে চাইছে।
ভগৎ সিং জন্মজয়ন্তী দিবসে অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার তেনালিতে আরওয়াইএ এক মিছিল সংগঠিত করে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। পূর্ব গোদাবরী জেলার কাঁকিনাড়াতেও শহীদ ভগৎ সিং স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। উড়িষ্যায় রায়গড়ার গুনুপুর এবং অন্যান্য স্থানে সরকারের নীতিমালার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভগৎ সিং স্মরণ অনুষ্ঠিত হয়।
এআইসিসিটিইউ ১৬ থেকে ২৮ আগস্ট যে “শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা কর” প্রচারাভিযান চালায়, এদিন তার সমাপ্তি ঘটে।
ঝাড়খণ্ডে ডেবরির ভেলওয়াঘাটির সালাইয়া টাঁড়ে ঝাড়খণ্ড নির্মাণ মজদুর ইউনিয়ন ২৮ সেপ্টেম্বর এক জনসভা সংগঠিত করে। কয়েক শত নির্মাণ শ্রমিক সভায় যোগ দেন। স্থানীয় সাঁওতালি ভাষায় বক্তব্য রেখে আদিবাসী মহিলা ফুলমুনি কিস্কু এবং বড়কি বাস্কে নির্মাণ শ্রমিকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, নির্মাণ শ্রমিকরা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এবং জীবিকার জোগাড় তাঁদের কাছে দু্ঃসাধ্য হয়ে দেখা দিচ্ছে।
উত্তরাখণ্ডে হলদোয়ানির বুদ্ধ পার্কে ভগৎ সিং স্মরণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এআইসিসিটিইউ-র শ্রমিক অধিকার রক্ষা প্রচারাভিযানের সমাপ্তি ঘটে। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বাম সংগঠন অংশ নেয়। ভগৎ সিং ও তাঁর মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নামিয়ে আনা কোম্পানি রাজের বিরুদ্ধে লড়াই করার শপথ নেওয়া হয়।
গুজরাটে সিপিআই(এমএল)-এর আহমেদাবাদ কমিটি আমরাইওয়াদি থেকে খোখার সর্কেল পর্যন্ত এক মিছিল সংগঠিত করে। ওই মিছিলে নেতৃত্ব দেন লক্ষ্মণভাই পাটানওয়াদিয়া এবং অমিত পাটানওয়াদিয়া। জাতীয় রাজধানী দিল্লিতে নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন আয়োজিত বেশকিছু স্থানে ভগৎ সিং স্মরণের মধ্যে দিয়ে সরকারের শ্রমিক স্থার্থ বিরোধী নীতিগুলোকে ধিক্কার জানানো হয়।