উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় এলে সবর্ণ হিন্দুরা উল্লসিত হয়েছিল এবং তারা তাদের সেই বিজয়োল্লাস প্রকাশ করেছিল সাহারানপুরে একটি দলিত গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে। পরবর্তীতে অসংখ্য ছোট বড় ঘটনায় দলিতদের ওপর সবর্ণ হিন্দুদের অত্যাচারের এই রূপ দেখা গেছে যেখানে এই সামন্তী ধর্ষক-ঘাতকেরা শাস্তি পাওয়ার বদলে বিজেপি নেতাদের বাহবা পেয়েছে, আর ধর্ষিতা ও তার পরিবারের কন্ঠ স্তব্ধ করাতে পুলিশ প্রশাসনও ঝাঁপিয়ে পড়েছে। হাথ্রাসের নৃশংস ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। বিজেপি’র ‘রামরাজ্যে’ দলিত ও নারীর পরিণতি কী হতে পারে তা হাথ্রাসের ঘটনায় বোঝা যায়।
চারজন মিলে দল বেঁধে ধর্ষণ। জিহ্বা কেটে দেওয়া হল। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হল। উচ্চপদস্থ আমলা বললেন “ফেক নিউজ”। সময়ে এফ আই আর নেওয়া হল না। এক সপ্তাহ ফেলে রাখা হল এইমসে না নিয়ে। শেষপর্যন্ত মৃত্যু হল। পরিবারকে মরদেহ দেওয়া হল না। পরিবারের লোকেদের আটকে রেখে গোপনে রাতের অন্ধকারে পুলিশ প্রহরায় পুড়িয়ে দেওয়া হল দেহ, প্রমাণ লোপাট করতে। হাথরাসের মনীষার মৃতদেহ এভাবে লোপাট করে দেওয়ার মাঝেই আরও একটি নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার খবর আসে সেই উত্তরপ্রদেশ থেকেই। বলরামপুরে একইভাবে এক দলিত যুবতিকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে হাত-পা ভেঙ্গে মেরে ফেলে উচ্চবর্ণের যুবকেরা।
ন্যাশনাল ক্যাম্পেন অন দলিত হিউম্যান রাইটস (একটি এনজিও)-র সমীক্ষায় প্রকাশ : ২৩% দলিত নারী (নাবালিকা ও শিশু সহ) ধর্ষিতা এবং তারা অনেকেই বারবার ধর্ষিতা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্যাতনকারীরা ছাড় পেয়ে যাবে, শাস্তি হবে না — এটা ধরে নিয়ে এত বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বাস্তবে ঘটেও তাই। যেমন ঘটেছিল উন্নাওয়ের মেয়েটির ক্ষেত্রে। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্য নাথের বাসভবনের সামনে মা-মেয়ে গায়ে আগুন দেওয়ার পর পুলিশ এফ আই আর করতে বাধ্য হয়েছিল। যেমন ঘটেছে হাথরাসের মেয়েটির ক্ষেত্রে । পুলিশ প্রথমে গুরুত্বই দেয়নি। পরে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে ডায়েরি নিয়েছে। তাও ‘ইভ টিজিং’ বলে চালানোর চেষ্টা করেছে। উচ্চ বর্ণের অপরাধীরা এই ভাবেই জঘন্য অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে বা লঘুদণ্ড পাচ্ছে। প্রশাসনের হাত তাদের মাথায় আছে। আর অন্যদিকে দলিত নিম্নবর্গের হওয়ায় নির্যাতিতারা উপযুক্ত বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশে লাগাতার এই নির্যাতন ঘটে চলেছে। গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় লখিমপুর খেরীতে ১৩ বছরের এক বালিকাকে শুধু ধর্ষণ নয়, চোখ উপড়ে, জিভ কেটে, শ্বাসরোধ করে খুন করে দুষ্কৃতীরা আখ খেতে ফেলে রেখে গিয়েছিল। গোরক্ষপুরে ১৭ বছরের এক কিশোরীকে ঘর থেকে মাত্র কয়েক পা দূরে, রাস্তা থেকে অপহরণ করে এক মন্দিরে রাতভর গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। তার সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ইভ টিজিং-এ অপমানিতা এক মেধাবী ছাত্রী আত্মঘাতী হয়।
সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপি একাধিকবার ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। বিজেপির নেতামন্ত্রীরা ধর্ষকের পক্ষে বয়ান দিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে সবর্ণ হিন্দুরা নিজেদের জাতের নামে সংগঠন বানিয়ে সরাসরি ধর্ষকের পক্ষে জমায়েত করছে, ধর্ণা দিচ্ছে। বিজেপির রামরাজ্য বাস্তবে ধর্ষকের স্বর্গরাজ্যে ও ব্রাহ্মণ্যবাদী নৃশংসতার রক্ষাকবচ।
সারা পৃথিবী জুড়ে নারীর প্রতি হিংসা বেড়েই চলেছে। প্রতিবাদে নারীরাও পথে নামছেন। উত্তাল হয়ে উঠছে রাজপথ স্বায়ত্ততা।