এআইকেএসসিসি (অখিল ভারত কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি) গত ২৯ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লী থেকে এক প্রেস বিবৃতি দিয়েছে। ঐ প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বর দেশের কৃষক, কৃষি মজুর এবং সাধারণ মানুষ যে ঐতিহাসিক ভারত বনধ্ ও প্রতিরোধ কর্মসূচী পালন করেছে, তার জন্য এআইকেএসসিসি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষকবিরোধী, জনবিরোধী আইন ও নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ কর্মসূচী সমন্বয় সাধনের জন্য সকল সংগঠনকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো কেন্দ্রীয় আইন পাশ হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই দেশজুড়ে কৃষকরা প্রতিবাদ করল। এই তীব্র প্রতিবাদ, যা কৃষকদের জীবন ও জীবিকার উপর হামলার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, ২০টি রাজ্য জুড়ে দেখা গিয়েছে। দশ হাজারেরও বেশি জায়গায় প্রায় দেড় কোটি কৃষক ‘চাক্কা জ্যাম’, ‘ধর্না’ বা বিল পোড়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার মিথ্যা প্রচার করছে যে কৃষক বিক্ষোভ শুধুমাত্র উত্তর ভারতে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এই বনধ্ এবং বিক্ষোভের সর্বভারতীয় চরিত্রটা পরিস্কারভাবে বোঝা গেছে যখন দেশের দক্ষিণতম রাজ্য তামিলনাড়ুতে ৩০০-রও বেশি জায়গায় প্রতিবাদ হয়েছে, ৩৫,০০০ এরও বেশি কৃষক রাস্তায় নেমেছে এবং ১১,০০০ এর বেশি কৃষককে রাজ্যের বিজেপি’র বন্ধু সরকার গ্রেপ্তার করেছে!! এমনকি অন্যান্য সংগঠন এবং কোনও সংগঠনের সাথে জড়িত না থাকা কৃষকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বনধ্ পালন করেছে। এই বনধ্ দেখিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের এই তিনটি কালা আইনকে দেশের কৃষকরা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এটি মনে রাখতে হবে যে এআইকেএসসিসি ৯ আগস্টের আগে থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেছিল এবং তিনটি আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা করেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার যেহেতু কৃষকবিরোধী এই আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এমএসপি/ফসল কেনা সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে, এআইকেএসসিসি কৃষকদের এই লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং এই আইনগুলিকে কার্যকর করতে দেবে না।
এআইকেএসসিসি কৃষকদের দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে এবং এই আইনগুলো কার্যকর করা থেকে বিরত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর যে রাজ্য সরকারগুলো রয়েছে, যারা কৃষকদের এই অবস্থানের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে, তাদের রাজ্যে এই আইনগুলো যাতে কার্যকর না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আইনি উপায় বার করার জন্য এআইকেএসসিসি আহ্বান জানাচ্ছে। অধিকন্তু, এআইকেএসসিসি এই রাজ্যগুলোর বিধানসভায় আইনগুলো কার্যকর না করার জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে কারণ এই আইনগুলো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষুন্নকারী এবং কৃষকের অধিকারের উপর মারাত্মক আক্রমণকারী।
এআইকেএসসিসি কৃষক বিরোধী এই কালা আইনগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবে এবং ক্রমশ তা জোরালো করবে। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক কৃষকদের এভাবে প্রতারণাকে উন্মোচিত করার জন্য এআইকেএসসিসি-র বেশ কয়েকটি রাজ্য ইউনিট ইতিমধ্যে গ্রামাঞ্চলে এবং ব্লক স্তরে বা ম্যান্ডি স্তরে সভা, সেমিনার, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, রিলে অনশন, অনশন ইত্যাদির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এআইকেএসসিসি পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ এবং কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও তেলঙ্গানার আন্দোলনসহ সমস্ত সংস্থা এবং তার নিজস্ব রাজ্য ইউনিটগুলির সাথে নিবিড়ভাবে সমন্বয় রাখছে এবং এদের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও কর্মসূচী ঘোষণা করতে চলেছে এবং এরই মধ্যে এআইকেএসসিসি-র জাতীয় কার্যনির্বাহী সমিতি সমস্ত রাজ্য পর্যায়ের কর্মসূচীকে সমর্থন দিয়েছে, যথা –
• পাঞ্জাব কৃষক সংস্থার ডাকা রেল রোকো।
• হরিয়ানার উপ-মুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌতলার পদত্যাগের দাবীতে তার বাড়ির বাইরে ৬ অক্টোবর বিক্ষোভের ডাক।
• কর্ণাটক কৃষক সংগঠনগুলোর আহ্বানে কৃষক বিরোধী কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য আইন প্রয়োগ করার বিরুদ্ধে বনধ্, প্রতিরোধ সভা ইত্যাদি।
এই স্থানীয় বিক্ষোভের সাথে জাতীয় স্তরের কর্মসূচি যুক্ত হবে, যার কয়েকটি নিম্নরূপ :
২ অক্টোবর, ভারতের কৃষকরা সেই রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিনিধিদের ‘সামাজিক বয়কট’ করার প্রতিশ্রুতি নেবে, যাদের দলগুলো এই কৃষক বিরোধী আইনগুলোর বিরোধিতা করেনি। এছাড়া, কেন্দ্রীয় কৃষক বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণের জন্য গ্রামে গ্রামে সভা করবে।
১৪ অক্টোবর ভারতের কৃষকরা ‘এমএসপি অধিকার দিবস’ হিসাবে পালন করবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মিথ্যা প্রচার “যে কৃষকরা স্বামীনাথন কমিশন প্রস্তাবিত এমএসপি পাচ্ছে”, তার পর্দা ফাঁস করবে।
সমস্ত প্রতিবাদ কর্মসূচী শেষ হবে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দিল্লিতে এক জাতীয় প্রতিবাদের মাধ্যমে। এআইকেএসসিসি দেশের সমস্ত কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ আহ্বান জানাচ্ছে যাতে এই কৃষকবিরোধী কেন্দ্রীয় সরকার, কৃষকদের ভবিষ্যত এবং জীবিকার উপর তার অমানবিক আক্রমণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ভারতের কৃষকরা বিজয় না পাওয়া পর্যন্ত এআইকেএসসিসি বিশ্রাম নেবে না – আমরা লড়ব, আমরা জিতব!!