প্রতিবেদন
মোদী নিদ্রা গিয়েছেন, মৃত্যু দেখতে পান না
de

গোটা দুনিয়া দেখলো লকডাউনের পর ভারত জুড়ে ঘনিয়ে ওঠা অভূতপূর্ব মানবিক সংকট – লাখে লাখে কাজ হারা, বিপন্ন পরিযায়ী শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরার মর্মান্তিক দৃশ্য, দেশ ভাগের পরও যা দেখা যায়নি। শুধু, মোদী সরকারের গোচরে এসব এলো না কিছুই। ১১ লক্ষ পাতার চার্জশিট তৈরি করতে না-ঘটা হাজার হাজার “অপরাধ” যে সরকারের নজরে এলো, বুদ্ধ পূর্ণিমার রাতে চলন্ত ট্রেনে কাটা ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের ছিন্ন ভিন্ন লাশ, চতুর্দিকে ছড়ানো ছিটানো পোড়া রুটির গা হিম করা সেই দৃশ্য মোদীর চোখে ধরা পড়লো না। ভারতীয় সংসদ আর কত মিথ্যাভাষণের সাক্ষী থাকবে কে জানে!!

পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে এই পর্বে যারা নানাবিধ অনুসন্ধান ও কাজ করেছে, সেই “স্ট্রান্ডেড ওয়ার্কারস্ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক” (এসডব্লিউএএন) জানালো, ৪ জুলাই পর্যন্ত তাদের রিপোর্টে ধরা পড়েছে ৯৭২ জন পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা। তারা তালিকা প্রকাশ করে ছুঁড়ে দিয়েছে চ্যালেঞ্জ – সরকারের দায়িত্ব এর সত্যতা যাচাই করে অবিলম্বে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ১৬ মে’র একটা ট্যুইট তারা উল্লেখ করেছেন, যাতে মোদী জানিয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের ঔরাইয়ার কাছে দুর্ঘটনায় নিহত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারকে মাথা পিছু দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর রিলিফ তহবিল থেকে! তারা দেখিয়েছেন, ২১৬ মারা গেছেন অনাহার ও আর্থিক অনটনের জন্য, ২০৯ জন রাস্তায় ও ট্রেন দুর্ঘটনায়, ১৩৩ জন আত্মহত্যা করেছেন চরমতম হতাশায়, ৯৬ জন শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে ঘরে ফেরার পথে, ৭৭ জন চিকিৎসার অভাবে, ৪৮ জন দীর্ঘ পথ হেঁটে অবসন্ন পরিশ্রান্ত হয়ে, পুলিশি অত্যাচারের মুখে ৩০ জন – এরকম আরো নানা কারণে পথ চলার মাঝেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয় ১২টি রাজ্যের পাঁচ হাজার শ্রমিকের মধ্যে সমীক্ষা চালায়। এদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই কাজ হারিয়েছে। শহুরে শ্রমজীবীদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা গেছে স্বনিযুক্ত পেশার মধ্যে ৯০ শতাংশের কাজ খোয়া গেছে। এটাও উঠে এসেছে, ৯১ শতাংশ বিপিএল পরিবারের প্রধান রোজগেরে যিনি ছিলেন, তার হাতে এখন কোনো কাজ নেই। তিন মাস পর্যন্ত জন-ধন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তদের প্রতিশ্রুত ৫০০ টাকা পাননি এমন পরিবার হলো ৬৭ শতাংশ।

কৃষকদের মধ্যেও সমীক্ষা করে দেখা গেছে বেশির ভাগ চাষি তাদের উৎপন্ন ফসল হয় বিক্রি করতে পারেননি, অথবা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু সরকার জানিয়েছে, এ সম্পর্কে কোনো তথ্যই তাদের কাছে নেই।

স্বাধীন ভারত কি আজ পর্যন্ত দেখেছে এমন নির্দয় ঔদাসীন্য, অপরাধসম নির্লিপ্ততা, জাহান্নামের আগুনে বসে রাষ্ট্র নায়কের চরম উপেক্ষার হাসি?

- অতনু চক্রবর্তী  

খণ্ড-27
সংখ্যা-34