নয়া দিল্লি, ১৩ সেপ্টেম্বর
উত্তর-পূর্ব দিল্লির ফেব্রুয়ারী মাসের হিংস্রতার যে “তদন্ত” দিল্লি পুলিশ চালাচ্ছে তা দিন-কে-দিন আরও প্রতিহিংসাপরায়ণ ও প্রহসনে পর্যবসিত হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত তাদের সমস্ত চার্জশিটে দিল্লি পুলিশ কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর ও অন্যান্য বিজেপি নেতারা যে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকারী ও মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসা অভিযানে উস্কানি দিয়েছিল সে সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কোনোরকম পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছে।
বিগত কয়েকমাসে দিল্লি পুলিশ জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও জেএনইউ-এর ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তনীদের অনেককেই গ্রেপ্তার করেছে। চার্জশিটে পুলিশ চলচ্চিত্রকার রাহুল রায়, প্রফেসর অপূর্বানন্দ, উমর খলিদের মতো ছাত্রআন্দোলনকর্মী বা আইসা নেতা কাওয়ালপ্রীত কউর সহ আইসা, জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি, পিঞ্জড়া তোড় ইত্যাদি মঞ্চ/সংগঠনগুলিকে বারংবার ষড়যন্ত্রকারী ও হিংসার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা তাদের তথাকথিত “ডিসক্লোজার” বিবৃতিতে আরও অনেকের পাশাপাশি নাকি সিপিআই(এমএল) পলিটব্যুরো সদস্য কবিতা কৃষ্ণান, সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই নেতা আন্নি রাজা ও স্বরাজ অভিযানের নেতা যোগেন্দ্র যাদবের নাম বলেছে।
গতকাল খবরে প্রকাশ, দিল্লি পুলিশের পেশ করা সংযোজিত চার্জশিটটি নাকি মূলত ‘পিঞ্জড়া তোড়’-এর নারীবাদী ছাত্রীকর্মী নাতাশা নারওয়াল ও দেবাঙ্গনা কলিতার এরকম “ডিসক্লোজার” বিবৃতির ভিত্তিতেই তৈরি। এই তথাকথিত “"ডিসক্লোজার"” বিবৃতিগুলি তো আদতে হেফাজতে আদায় করা স্বীকারোক্তি যা আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হয় না। তদুপরি, নাতাশা ও দেবাঙ্গনা উভয়েই উক্ত বিবৃতিতে সই করতে অস্বীকার করার কথা সুস্পষ্টভাবে নথীভুক্ত করেছেন। এই “বিবৃতিগুলি”-কে (যেগুলির ভাসাভাসা ধোঁয়াটে শব্দগুলি দেখলে অনুমান করা কঠিন হয় না যে সেগুলি পুলিসেরই তৈরি করা স্ক্রিপ্ট) ভর করে সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হল।
দিল্লি পুলিশের “দাঙ্গা তদন্ত”-কে মোদি সরকার ব্যবহার করেছে সরকার-বিরোধী কণ্ঠস্বরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে। ওরা বামগণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভয় দেখিয়ে স্তব্ধ করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে: কিন্তু ওদের কার্যকলাপ উল্টো ফল দেবে। একজনের প্রতি আঘাত, সকলের প্রতি আঘাত : সিএএ-বিরোধী প্রতিটি কণ্ঠ, যাকে পুলিশ শাস্তি দিতে চায়, তার পাশে আমরা দৃঢ়তার সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াব। আমরা, এবং ভারতের জনতা, দিল্লি পুলিশের কার্যকলাপকে স্পষ্টতই গণতন্ত্র ও শান্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ উইচ হান্ট হিসেবেই দেখছি। সরকার কাঠগড়ায় : ভারতকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কোভিড আক্রান্ত দেশ বানিয়ে ফেলার দায়ে, অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকা ধ্বংস করার দায়ে, শ্রমিক ও কৃষকের অধিকারগুলির ওপর আক্রমণ চালানোর দায়ে এবং দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্র ধ্বংস করার দায়ে সরকারকে অভিযুক্ত করছে ভারতের জনগণ। এই একই সরকার তার নিজের সংঘটিত অপরাধগুলি থেকে জনতার মনযোগ ঘুরিয়ে দিতে চাইছে তার সমালোচকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উদ্ভাবন করে এবং নিপীড়নমূলক আইনের আওতায় পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থাগুলি দ্বারা নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ করে।
গণতন্ত্রের জন্য এবং সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ ও বানোয়াট মামলার বিরুদ্ধে লড়ে প্রত্যেক সহযোদ্ধার পাশে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়াচ্ছে সিপিআই(এমএল)।
আমরা লড়ব, আমরা জিতব।
-- দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন