সিপিআই(এমএল) লিবারেশান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষে সম্পাদক পার্থ ঘোষ ৭ সেপ্টেম্বর এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর গোটা দেশ যখন যথোচিত মর্যাদায় শিক্ষক দিবস উদযাপন করছে, সেই দিনই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা হানা দিল এরাজ্যের কল্যাণীতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর)-এ। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সমস্ত সুরক্ষা বিধি ভেঙে ঐ আধিকারিকরা সরাসরি ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মলিকুলার বায়োলজির খ্যাতনামা তরুণ বিজ্ঞানী অধ্যাপক পার্থসারথি রায়কে সমন ধরাতে হাজির হয়ে যায়। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ভীমা কোঁরেগাও-এলগার পরিষদ মামলায় সাক্ষ্যপ্রদানের জন্য অধ্যাপক পার্থসারথিকে এনআইএ-র মুম্বাই অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিআরপিসি-র ১৬০নং ধারা বলে এই আদেশনামা জারি করা হয়েছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইনস্টিটিউটে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ অনুযায়ী বাইরের মানুষের হাত থেকে ঐ সমন গ্রহণ করেননি অধ্যাপক পার্থসারথি।
পরাধীন ভারতে, ব্রিটিশ শাসকরা শ্রমিক ও শ্রমজীবী জনগণের অধিকার, বিশেষত পূর্ণ স্বরাজের অধিকারকে দমন করতে একের পর এক তথাকথিত ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করেছিল। কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা, বিশেষ করে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা এর অন্যতম। মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯-৩৩)-য় তৎকালীন ভারতের সামনের সারির শ্রমিক আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সমস্ত নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে বিচারের নাটক ও প্রহসন চালিয়েছিল।
স্বাধীন ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের উত্তরসুরী ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকার ভীমা কোরেগাঁও-এলগার পরিষদ মামলাকে ঐ লক্ষ্যেই নিয়ে যেতে চাইছে। গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করে দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সহ সমাজের নিপীড়িত জনগণের বেঁচে থাকার, কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। প্রতিবাদ করলেই রাষ্ট্রদ্রোহী, দেশবিরোধী। অধ্যাপক পার্থসারথি যেহেতু ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক প্রতিবাদে বিশ্বাসী একজন সচেতন নাগরিক, তাই তাঁকে ভয় দেখাতে ঐ সমন। শুধু অধ্যাপক পার্থসারথিই নয়, একই সময়ে হায়দ্রাবাদের ইএফএল বিশ্ববিদ্যালয়ে দলিত অধ্যাপক সত্যনারায়ণের কোয়ার্টারেও হানা দেয় এনআইএ-র আধিকারিকরা। হাতে তাদের সমন। ৯ সেপ্টেম্বর এনআইএ-র মুম্বাই অফিসে হাজির হতে হবে। অধ্যাপক সত্যনারায়ণ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় জেলবন্দী কবি ভারাভারা রাওয়ের জামাতা, এটাই তাঁর অপরাধ!
এনআরসি, এনপিআর, সিএএ বিরোধী শাহিনবাগ আন্দোলনকে আটকাতে যারা দিল্লিতে দাঙ্গা করল, তারা সুপ্রিম কোর্টের নাকের ডগায় অবাধে ঘুরে বেড়ায়, মবলিঞ্চিং-এর খলনায়করা এনআইএ-র সদর দপ্তরের আশেপাশেই থাকে, প্রতিনিয়ত ঘৃণার রাজনীতি ছড়ায়। আর যারাই এর প্রতিবাদে সোচ্চার তাদেরই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চক্রান্ত চলছে। বিচিত্র গণতন্ত্র !
মীরাট ষড়যন্ত্র মামলার নয়া সংস্করণ ভীমা কোঁরেগাও-এলগার পরিষদ মামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করার ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ১০ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ কর্মসূচী সংগঠিত করুন।