পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘দলিত সাহিত্য আকাদেমি’ গঠন করেছে। এবং তা নিয়ে বাংলার সাহিত্য জগতে শুরু হয়েছে নয়া তর্ক-বিতর্ক। একদল, যাঁরা ‘দলিত সাহিত্য আকাদেমি’র বিরুদ্ধে, তাঁরা মতো দিয়েছেন সাহিত্যে বর্ণবিভাগ নেই, সুতরাং, ‘দলিত সাহিত্য আকাদেমি’ গঠনেরও কোনো প্রয়োজন নেই। তাঁরা এটিও বলছেন, এই ধরনের ‘ভাগ’ সাহিত্যের ক্ষতি করবে কেননা পরবর্তীতে ব্রাক্ষ্মণ, কায়স্থ কিংবা মুসলমান সাহিত্য আকাদেমি গঠনেরও দাবি উঠতে পারে! এছাড়া আর একটি চিন্তা উঠে এসেছে – বাংলা সাহিত্যে দলিতদের নিয়ে তো কম আখ্যান রচিত হয়নি, এবং যেহেতু বেশিরভাগ আখ্যানকার এক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের, তবে কি আলাদা করে ‘দলিত সাহিত্য আকাদেমি’ গঠনের আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল? অর্থাৎ, দলিতদের জীবনসংগ্রাম ‘সাধারণ’ সাহিত্যের মধ্যেই লিপিবদ্ধ হতে পারে। কিংবা, ইতিমধ্যে, তা হয়েছেও!
এইসব তর্ক-বিতর্ক দেখে, খানিক নিজেকে জড়িয়ে ফেলে, আমার মনে হয়েছে, ‘দলিত সাহিত্য’ কী তা নিয়ে আমাদের মধ্যে বেশ ধোঁয়াশা রেয়েছে।
‘দলিত’ পরিচিতিকে কেন্দ্রে রেখে যে সাহিত্য নির্মিত তাকে কি আমরা দলিত সাহিত্য বলতে পারি? এই প্রশ্নটি যতটা সহজ, তার উত্তরটি পাওয়া ততটা সহজ নয়।
আমরা যদি ধরে নিই, ‘দলিত’ পরিচয়কে কেন্দ্রে রেখে নির্মিত সাহিত্য মাত্রই দলিত সাহিত্য, তাহলে আর একধাপ এগিয়ে বলা যেতে পারে – দলিত বা অদলিত, যে-কারো সাহিত্যই ‘দলিত সাহিত্য’র অন্তর্ভুক্ত হতে পারে যদি তিনি তাঁর সাহিত্যের নির্মাণে ‘দলিত’ পরিচয়টাকে কেন্দ্রে রাখতে পারেন।
এখানেই উঠে আসে ‘দলিত সাহিত্যে’ এস্থেটিক্সের প্রশ্নটি।
আসুন, আমরা পুনরায় একলব্যের গল্পটিকে স্মরণ করি। একলব্য জন্মসূত্রে ক্ষত্রিয় ছিল না। সে ছিল শূদ্র বংশীয় রাজপুত্র। নিম্নবর্ণ হওয়ার অজুহাতে ব্রাক্ষ্মণ গুরু দ্রোণাচার্য তাকে শিক্ষাদানে বিরত থাকেন। তখন একলব্য বালকমাত্র, এই ঘটনায় নিশ্চিত অপমানিত ও দুঃখিত হয়েছিল; তা সত্বেহ, সে দ্রোণাচার্যকেই গুরুরূপে গ্রহণ করে কারো সাহায্য ছাড়াই অস্ত্রশিক্ষার কঠোর প্রশিক্ষণে আত্মনিয়োগ করে। সে জঙ্গলে চলে যায়। গুরু দ্রোণাচার্যের মাটির মূর্তি গড়ে। তারপর মূর্তিটিকেই গুরুরূপে পুজো করে শিক্ষালাভ শুরু করে। পরবর্তীকালে, দ্রোনাচার্য তাঁর শ্রেষ্ঠ ছাত্র অর্জুনসহ বাকিদের নিয়ে সেই জঙ্গলেই হরিণ শিকার করতে আসেন। কিন্তু তাঁর পোষা কুকুরটি একটি হরিণকে ধাওয়া করতে গিয়ে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কুকুরটির সন্ধান পাওয়া যায় না। শেষে কুকুরটির কান্না শুনে তিনি ছাত্রসহ জঙ্গলের মধ্যে একটি কুটীরের সামনে উপস্থিত হন। এবং বিস্ময়ে দেখেন, সাতটি তিরের মাধ্যমে কুকুরটিকে একটি অশ্বত্থ গাছের সঙ্গে এমনভাবে গেঁথে ফেলা হয়েছে যে কুকুরটির গায়ে এতটুকু আঁচড় লাগেনি। অথচ কুকুরটি আর কোনোভাবেই নড়াচড়া করতে পারছে না।
এই ঘটনা দেখে অভিজ্ঞ দ্রোণাচার্য বুঝতে পারেন তিরন্দাজির এমন অভ্রান্ত প্রয়োগ তাঁর প্রিয় শিষ্য অর্জুনেরও অধরা। কিন্তু কে এই তিরন্দাজ? একলব্যকে অবহেলাবশত তিনি তখন ভুলে গিয়েছিলেন।
একলব্য কুটীর থেকে বেরিয়ে এসে গুরুর কাছে নিজের পরিচয় দেয়। একজন শূদ্রবংশীয় রাজপুত্রের এমন মেধা দেখে দ্রোণাচার্য চমকিত হয়ে ওঠেন!কিন্তু তিনি কোনো শূদ্রকেই বীরশ্রেষ্ঠরূপে মেনে নিতে পারেন না।
দ্রোণাচার্য একলব্যের কাছে গুরুদক্ষিণা দাবি করলেন।
একলব্য আর একমুহুর্ত দেরি না করে ডান হাতের বুড়ো আঙুল কেটে গুরুকে দান করলেন!
এই গল্পটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী শিক্ষা ব্যবস্থায় এই গল্পটিকে আমরা পড়েছি গুরুর প্রতি শিষ্যের অতুলনীয় সম্মান প্রদর্শনের গল্প হিসাবে। কিন্তু কখনই একলব্যের ভাষ্য জানবার প্রয়োজন বোধ করিনি। দলিত সাহিত্যিক শিখামণি তাঁর ‘Steel Nibs are Sprouting’ কবিতায় ঠিক এই কাজটিই করলেন। তিনি প্রচলিত বয়ানটিকে পাল্টে দিলেন। গুরুদক্ষিণাকে দেখলেন উচ্চবর্ণের দ্বারা তৈরি আইন হিসাবে। যে আইনের মাধ্যমে কোনো শূদ্রকে শিক্ষা থেকে, সংস্কৃতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। যে আইনের মাধ্যমে একজন শূদ্রের ভূমির অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। তাকে মৃত পশুর মাংস খেতে বাধ্য করা হয়। ভারতের প্রায় এক চতুর্থাংশ জনবসতিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামের প্রান্তসীমায়। কারণ তারা নিম্নবর্ণ। তারা শূদ্র-অতিশূদ্র। গ্রামের কেন্দ্রে তাদের জমির অধিকার তো দূরে থাক, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রবেশও নিষেধ।
‘দলিত সাহিত্য’ তাই শুধুমাত্র ‘দলিত’ পরিচয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি। গড়ে উঠেছে ‘দলিত’ অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে। একজন উচ্চবর্ণের লেখক দলিতের প্রতি সহমর্মী হতে পারেন, তাঁর লেখার মাধ্যমে সমবেদনা জানাতে পারেন কিন্তু ‘দলিত’ অভিজ্ঞতা ব্যাতীত তাঁর সাহিত্য ‘দলিত সাহিত্যে’র অন্তর্ভূক্ত হতে পারে না। তা বলে উচ্চবর্ণের দ্বারা নির্মিত সাহিত্যমাত্রই তা যে দলিত বিরোধী সাহিত্য তা কিন্তু নয়। একথা কোথাও কখনো উচ্চারিত হয়নি। উচ্চবর্ণের লেখকদের লেখায় ‘দলিত’ এসেছে তাঁর রচনার আকর হিসাবে (এটি অবশ্যই ধ্বনাত্মক গুণ। এবং একজন সাহিত্যিকের পূর্ণ অধিকার আছে তিনি তাঁর রচনায় কী কী আকর হিসাবে গ্রহণ করবেন), অভিজ্ঞতা হিসাবে নয়।
এটাই দলিত সাহিত্যের এস্থেটিক্স। এখানে মগজের স্মৃতির থেকে চামড়ার স্মৃতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই সাহিত্য সরাসরি শ্রমের সঙ্গে যুক্ত। ভুখা পেটের সঙ্গে যুক্ত। দলিত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। এই সাহিত্যে চিৎকার উঠে আসবে তা-ই তো স্বাভাবিক। চিৎকার এখানে অলংকার নয়। এই চিৎকারটিই রচনাশৈলী!
আমরা নিশ্চয় করমছেদু গণহত্যার কথা ভুলিনি। বস্তুত ১৯৮০র দিকে অন্ধ্রে বেশ কয়েকটি দলিত গণহত্যার ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে করমছেদু গণহত্যা বিশেষভাবে চর্চিত।
স্বাধীনতার পর ভারতের গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতিতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছিল। সরকারের বিভিন্ন পলিসিতে লাভবান হচ্ছিল নীচুতলার মানুষেরাও। ফলত দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বর্ণপ্রথার অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে এসে পড়ে। The Andhra Pradesh Land Reforms(Ceiling on Agriculture Holdings) Act পাস হল ১৯৭৩ সালে। এই Act-র ফলে কৃষিব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত নিম্নবর্ণের মানুষেরা সরাসরি লাভবান হল। তাছাড়া বংশানুক্রমে চলে আসা পেশাগুলি লোপ পাচ্ছিল। তারা গ্রামের বাইরে গিয়ে পছন্দমতো জীবিকা নির্বাচনের সুযোগ সামান্য হলেও পেল।
১৯৭০-৮০ ছিল সারা ভারত জুড়ে দলিত জাগরণের দশক। দলিতরা এইসময় নিজেদের পরিচিতি সম্পর্কে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠেছিল। তাঁরা মারাঠি, তামিল, তেলুগুসহ বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যে তুমুল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিল। ‘দলিত সাহিত্য সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল বিভিন্ন রাজ্যে।
কিন্তু এইসবের মাঝখানে অন্ধ্রের রাজনীতিতে শুরু হয়েছিল নতুন ছক। ১৯৮২তে তৈরি হল তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। এই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এন টি রামারাও, যিনি একজন বিখ্যাত ফিল্ম অভিনেতা ও কাম্মা সম্প্রদায়ের মানুষ। এই কাম্মা সম্প্রদায় হল উচ্চবর্ণের জমিদারশ্রেণী। ভোটের সময় দেখা গেল সিপিআই ও সিপিআই(এম), যাদের সমর্থকদের একটা বড় অংশ নিম্নবর্ণের মানুষ, জোট বাঁধল টিডিপির সঙ্গে। অপরদিকে কংগ্রেসের সমর্থকরা ছিল মূলত ভূস্বামী – কাম্মা, রেড্ডি ও কাপু সম্প্রদায়ের মানুষ। ফলে রাজনীতিতে নিম্নবর্ণকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এমন কোনো দল আর থাকল না।
রাজনীতির এই চেনা ছকটিকেই ব্যবহার করল উচ্চবর্ণের মানুষেরা। এই ছকটি ব্যবহার করে তারা পুরানায় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে এল।
করমছেদু্র ঘটনাটা এই রকম : দু-জন কাম্মা সম্প্রদায়ের ছেলে তাদের গরুকে চান করাতে গিয়েছিল গ্রামের পুকুরে। এই পুকুর থেকেই দলিতরা পানীয় জল সংগ্রহ করে। ফলে স্বাভাবিক কারণেই একজন নিম্নবর্ণের মহিলা প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদে কান দেওয়া তো দূরের কথা ছেলে দুটো মহিলাটিকেই বেধড়ক পেটাতে শুরু করে দেয়। সেইসময় ঘটনাটা এখানেই থেমে গিয়েছিল। এমনকি এটা নিয়ে কোনো পক্ষই পুলিসে রিপোর্ট লেখাতে যায়নি।
কিন্তু কাম্মা সম্প্রদায় এই ঘটনাটিকে মোটেই কোনো ছোটো ঘটনা হিসাবে নেয়নি। মহিলাটির প্রতিবাদ তাদের কাছে ছিল অপমান। কেননা মহিলাটি তাদের জাতের আধিপত্যকে প্রশ্ন করেছিল।
ফলে প্রায় ৩০০০ জন কাম্মা সম্প্রদায়ের লোক একত্রিত হয়ে হামলা চালাল নিম্নবর্ণের গ্রামটিতে। ছয় জন নিম্নবর্ণের মানুষকে তারা হত্যা করল। তিনজন মহিলাকে ধর্ষণ করল। প্রায় ৩০০টি পরিবার সেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হল।
করমছেদু গণহত্যা অন্ধ্রে দলিত জাগরণে ইন্ধন জুগিয়েছিল। প্রথাগত বামপন্থীদের দৃষ্টিকোণে এই ঘটনাটি ছিল ভূমিহীনদের উপর ভূস্বামীদের অত্যাচার। কিন্তু শোষিত, অত্যাচারিত দলিতরা এই ঘটনাকে দেখেছিল বর্ণবাদের প্রকাশরূপে। এই ঘটনাটা, তাদের চোখে ছিল, উচ্চবর্ণের দ্বারা সংঘটিত অত্যাচার যা যুগ যুগ ধরে ঘটে আসছে।
করমছেদুর ঘটনার প্রভাব শুধু সমাজ-রাজনীতিতে লক্ষ করা যায়নি। এই ঘটনার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। গল্প, উপন্যাস, গান ও কবিতায় এই ঘটনার উল্লেখ ফিরে ফিরে আসে।
দলিত কবি কালেকাপুরি প্রসাদ প্রগ্রেসিভ সাহিত্যকে, এমনকি, ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী সাহিত্য হিসাবে কটাক্ষ করেছেন। কারণ এই ঘটনার জন্য তাঁরা মূলত শ্রেণী বৈষম্যকেই দায়ী করেছেন। যদিও দলিত সাহিত্যিক ও এক্টিভিস্টরা মনে করেন এই ঘটনার অত্যাচারের মাত্রা এটাই প্রমাণ করে যে নিম্নবর্ণের উপর হওয়া এই অত্যাচারের কেন্দ্রে রয়েছে বর্ণবাদ। সুতরাং, বর্ণবাদকে খতম করতে না পারলে এই অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
দলিত কবি কালেকাপুরি প্রসাদের একটি কবিতার খানিক অংশ –
আমি জানি না আমি কখন জন্মেছি,
কিন্তু জানি কয়েক হাজার বছর আগে আমাকে এখানেই হত্যা করা হয়েছিল
এই হল জন্ম-মৃত্যুর সেই না-শেষ হওয়া বৃত্ত
আমি কর্মফল সম্পর্কে কিছুই জানি নাকিন্তু আমি জন্মাতেই থাকি,
জন্মাতেই থাকি আর বারবার একই জায়গায় মারা যাই…
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে – সমস্ত দলিত সাহিত্যিকের লেখাকেই কি আমরা ‘দলিত সাহিত্য’ হিসাবে গণ্য করতে পারি?
উত্তরটি সহজ – না, একজন দলিতের লেখা মাত্রই তা ‘দলিত সাহিত্য’ হিসাবে বিবেচিত হবে না। লেখাটিকে লিখতে হবে অবশ্যই দলিতের দৃষ্টিকোণ থেকে। ভারতীয় জনসমাজে দলিতের দুরবস্থার কারণ হিসেবে বর্ণবাদ প্রথাকেই চিহ্নিত করতে হবে। দলিত সাহিত্যে সূচীমুখ তীক্ষ্ণ। এখানে প্রধান শত্রু বর্ণবাদ/মনুবাদ। বর্ণপ্রথার বিনাশ তখনই সম্ভব যখন বর্ণপ্রথার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিয়ে আন্দোলন সংঘটিত করা যাবে। ‘দলিত সাহিত্য’ দলিত আন্দোলন নিরপেক্ষ হতে পারে না। যদিও কোনো কোনো দলিত সাহিত্যিকের লেখায় বর্ণবাদ ও শ্রেনিবৈষম্য – দুটোই সমান গুরুত্ব পেয়েছে। এখানে আমরা আফ্রিকান লিটারেচারকে স্মরণ করতে পারি। কামারা লাই – একজন বিখ্যাত আফ্রিকান কবি। তাঁর Dark Child এবং Dream of Africa পৃথিবীর যেকোনো দেশের কবিতা পাঠকের কাছেই পরিচিত। Dark Child কবিতায় তিনি আফ্রিকার কালো-মানুষদের আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলি থেকেও সরে আসতে বলেছিলেন। আফ্রিকান হওয়া সত্বেহ তাই আফ্রিকান জাতীয়তাবাদীরা তাঁকে উপনিবেশবাদে দুষ্ট হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এবং তাঁর সাহিত্যকে, যতই তা শিল্পগুনে সমৃদ্ধ হোক, আফ্রিকান/ব্লাক লিটারেচারের অন্তর্ভূক্ত করেননি। অন্যদিকে আমোস তুতুওলা কখনই একটিমাত্র পরিচয়ে পরিচিত হতে রাজি নন। বস্তুত তিনি কোনো একটি বর্গে নিজেকে আঁটকে রাখার বিরুদ্ধে। ব্লাক লিটারেচারের দাবিগুলির প্রতি তিনি সম্মান জানিয়েও দূরত্ব বজায় রেখেছেন।
‘দলিত সাহিত্যে’র একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে আত্মজীবনী। এখানে মারাঠি ভাষায় রচিত দলিত সাহিত্যিক দয়া পাওয়ারের ‘বলুত’ বইটির উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ‘বলুত’ পাঠক মহলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। মহার জনগোষ্ঠীর মানুষদের জীবনসংগ্রামের কাহিনি রয়েছে এই বইটিতে। আমরা দেখি একটি পশুর মৃতদেহ। আকাশে উড়ছে শকুন। আর শকুনের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে একজন মহার বালক। মৃত পশুর মাংস সে কিছুতেই হাতছাড়া হতে দেবে না।
‘দলিত’ শুধু একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠী নয়। দলিত একটি সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক পরিচিতি।
পশ্চিমবঙ্গে ‘দলিত সাহিত্য’ বহুদিন ধরেই লেখা হচ্ছে। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে বইগুলো সহজলভ্য নয়। মারাঠি, কন্নড়, মালায়ালাম, তামিল ভাষায় যেভাবে এই সাহিত্যকে পড়া হচ্ছে সেই সুযোগ আমাদের ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘দলিত সাহিত্য আকাদেমি’ গঠন একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। আশাকরছি, এই আকাদেমির মাধ্যমে ‘দলিত সাহিত্য’ চর্চার পথ সুগম হবে। দলিত আন্দোলন আরও সংঘটিত হবে। এবং অবশ্যই বর্ণবাদ প্রথার বিলুপ্তি ঘটবে।
-- সাদিক হোসেন
মাগুরা মোল্লাপাড়া, মহেশতলা, দঃ ২৪ পরগণা