সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির দেশব্যাপী একমাস ধরে গ্রামে গ্রামে চলো, ঘরে ঘরে চলো প্রচার অভিযানের শেষ দিন ১৫ সেপ্টেম্বর সারা দেশের সাথে সাথেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ডেপুটেশনের কর্মসূচী সংগঠিত হয়। এই রাজ্যে সারা ভারত কৃষক মহাসভা, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ, সারাভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি ও আয়ারলার অন্তর্ভুক্ত ঋণ মুক্তি কমিটি মিলিতভাবেই এই কর্মসূচী পালনে উদ্যোগ গ্রহণ করেন ।প্রচারের মধ্যে দিয়েই গ্রামীণ মেহনতিদের যে দাবিগুলো জীবন্ত সমস্যা হিসেবে উঠে আসে। ঋণ মুক্তির প্রশ্ন বিশেষ করে মাইক্রোফিনান্স সংস্থা গুলোর ঋণ আদায়ের জন্য গ্রামীণ গরিব মেহনতিদের পরিবারের মহিলাদের উপর চরম জুলুম চালানোর বিরুদ্ধে মহিলাদের ক্ষোভ। আদিবাসীদের জমির অধিকারের প্রশ্ন। লকডাউন এ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এর প্রশ্ন। পরিযায়ী শ্রমিকদের ও গ্রামীণ গরিবদের ১০০ দিনের কাজের দাবি। তাই এই দিনের বিক্ষোভ ডেপুটেশনে অন্যান্য দাবির সাথে এই দাবিসমুহ বেশি সামনে আসে। বিভিন্ন জেলার জমায়েতে গ্রামীণ মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। শাসক দল তৃণমূল ও বিজেপি বিভিন্নভাবেই জমায়েতে অংশগ্রহণ আটকানোর চেষ্টা করেছে। প্রশাসন ও এই কর্মসূচীকে বিভিন্ন অজুহাতে সীমিত করার চেষ্টা করেছে। মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার প্রশাসন এই কর্মসূচীর কোনো রকম অনুমতি দেয়নি। এমন কী নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শমন জারি করেছেন। এই সব মোকাবিলা করার মধ্য দিয়েই হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করেই বৃষ্টির মধ্যেই কর্মসূচী সফল করেছেন।
পুর্ব বর্ধমান জেলার ১১টা ব্লক থেকে ৩০০০-এর বেশি মানুষ বেলা ১১টা ৩০ মিনিট এর মধ্যেই বর্ধমান শহরের উৎসব ময়দানে যানবাহনের প্রতিকুলতার মোকাবিলা করেই জমায়েত হন। এর মধ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর, মাইক্রোফিনান্স-এর ঋণগ্রস্ত আদিবাসী, সংখ্যালঘু মহিলা সহ বেশিরভাগই মহিলাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য।উৎসব ময়দান থেকে মিছিল বের হবার পর ২ কিলোমিটার রাস্তা পরিক্রমণ করে জেলাশাসক অফিস অভিমুখে ঢোকার আগেই পুলিশ মিছিল আটকায়। সেখানেই অবস্থান বিক্ষোভ চলতে থাকে। তার পর তিন জন প্রতিনিধি ডেপুটেশন জমা দেন এবং সমস্ত এলাকার গণ স্বাক্ষর সহ মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধান মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকপত্র জমা দেওয়া হল।
হুগলি জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে আগত ২০০০-এর বেশি মানুষ চুচুড়া স্টেশন থেকে বৃষ্টির মধ্যেই মিছিল করে শহরের মধ্যে দিয়ে জেলাশাসক অফিসের দিকে যেতে থাকলে ঘড়ির মোড়ে পুলিশ আটকায়। সেখানেই অবস্থান বিক্ষোভ চলতে থাকল। তারপর প্রতিনিধিরা দপ্তরে ডেপুটেশন জমা দেন এবং মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে গণ স্মারকপত্র জমা দেন। জমায়েতে আদিবাসী মহিলাদের অংশগ্রহণ সহ বেশিরভাগই মহিলাদের উপস্থিতিছিল।
বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে আসা ৫০০ মতো মানুষের মিছিল মাচানতলা থেকে শুরু করে জেলা শাসকের দপ্তরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। মিছিলে সাফাই কর্মীদের ইউনিয়ন, আদিবাসী ও তপশীল জাতির লোকদের উপস্থিতি বেশি ছিল। মহিলাদের উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্য। জেলা শাসকের অফিসের সামনের রাস্তায় অবস্থান বিক্ষোভ চলাকালীন প্রতিনিধিদের ডেপুটেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। গণস্বাক্ষর সহ মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধান মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা হয়।
নদীয়া জেলার জেলাশাসক অফিসের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান সংগঠিত করাহল। জেলার বিভিন্ন ব্লকের ২০০ শতাধিক মানুষ জমায়েত হন। দীর্ঘ সময় অবস্থান বিক্ষোভের পর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ডেপুটেশন গ্রহণ করার ব্যবস্থা করেন ।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমা শাসকের অফিসে সহস্রাধিক মানুষের দীর্ঘ মিছিল পরিক্রমা করে উপস্থিত হন। সেখানে বিক্ষোভ অবস্থান সংগঠিত করার পর প্রতিনিধিরা ডেপুটেশন জমা দেন। উপস্থিত মানুষের বেশিরভাগই মেহনতিদের পরিবারের মহিলা ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে গণস্বাক্ষর সহ স্মারকপত্র জমা দেওয়াহল। হাবড়া ২নং ব্লক অফিসে শতাধিক মানুষ মূলত মহিলাদের মিছিল করে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। এই মিছিলে মিড ডে মিল ইউনিয়ন ও যুক্ত ছিলেন। শিবদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে শতাধিক মানুষ মিছিল করে গিয়ে ডেপুটেশন জমা দেন।
হাওড়া জেলার বাগনান ১নং ব্লকের অফিসে ২০০ শতাধিক মানুষ জমায়েত হয়ে মিছিল করে ডেপুটেশন জমা দেন। বেশিরভাগই গরিব মেহনতিদের পরিবারের মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল। বিডিও মারফত মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে গণস্বাক্ষর সহ স্মারকপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আমতা ১নং ব্লকের শতাধিক মানুষ মিছিল করে বিডিও অফিসে ডেপুটেশন দেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে গণস্বাক্ষর সহ স্মারকপত্র বিডিও মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমা শাসক অফিসে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও মিছিল করে যাওয়ার পর মিছিল পুলিশ আটকায়। অবস্থান বিক্ষোভ করে বক্তব্য রাখার পর ডেপুটেশন জমা দেওয়াহল।
জলপাইগুড়ি জেলার প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেই জেলাশাসক-এর কাছে ডেপুটেশন ও গণস্বাক্ষর সহ স্মারকপত্র মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
মালদহ জেলার কালিয়াচক ১নং ব্লকের বিডিও অফিসে ৫০ জনের মিছিল সংগঠিত করে ডেপুটেশন সংগঠিত হয়। এখানে বিডিও সাহেবের সাথে প্রতিনিধিদের সাথে বিভিন্ন প্রশ্নে বচসা হয়।
সমস্ত জেলাতেই আয়ারলা এআইকেএম আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ ঋণ মুক্তি কমিটির নেতৃত্ব ও বিভিন্ন স্তরের সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও এআইসিসিটিইউ-র নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত ছিলেন। এই কর্মসূচী গরিব জনগনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং উৎসাহ জাগিয়েছে। আগামী দিনে এই আন্দোলন পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যেত হবে।